এ এমন এক দেশ, যারা ২০০৮ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন, ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১২-য় আবার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন৷ কিন্তু পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জেতা? একমাত্র ব্রাজিল যা পেরেছে, ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে৷
বিজ্ঞাপন
স্পেন যে গ্রুপে পড়েছে, সেই গ্রুপ ‘বি'-কে ঠিক গ্রুপ অফ ডেথ বলা চলে না: খেলতে হবে নেদারল্যান্ডস, চিলি ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে৷ অপরদিকে একদল প্লেয়ার কতদিন ধরে ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে৷ নয়ত গত বছরের কনফেডারেশনস কাপ ফাইনালে ব্রাজিলের একটি তরুণ, টগবগে দল স্পেনকে ৩-০ গোলে পর্যুদস্ত করতে পারতো না৷
অবশ্য এর আগের চারটি কনফেডারেশনস কাপে যে দলই জিতেছে, তারা পরের বিশ্বকাপ খেতাবটি জয় করতে পারেনি, কিন্তু ও ধরনের কাকতালীয় কুসংস্কারের উপর নির্ভর করে আধুনিক ফুটবল দুনিয়া চলে না৷ বরং স্পেন যে তার অভিজ্ঞ অভিযাত্রীদের মধ্যে কিছু কিছু নতুন মুখ ঢোকাতে শুরু করেছে, সেটাই আশার লক্ষণ বলা যেতে পারে৷ নতুন খেলোয়াড়দের সাধারণত ঠিক সেই বস্তুটি থাকে, যা ছাড়া ফুটবলে জেতা সম্ভব নয়: সেটি হলো জেতার খিদে৷
আন্তর্জাতিক ফুটবলে কিছুটা ভুজুংভাজুং থেকে থাকে৷ তাই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের স্ট্রাইকার দিয়েগো কস্তা মাত্র এক বছরের মধ্যেই ব্রাজিলের আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় থেকে স্পেনের জাতীয় দলের সেন্টার ফরোয়ার্ডে পরিণত হয়েছেন৷ এবং সেটা সম্ভব হয়েছে, কেননা কস্তা দেখাতে পেরেছেন যে, তিনি ব্রাজিলের হয়ে শুধু ফ্রেন্ডলি ছাড়া আর কোনো ম্যাচে খেলেননি৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
কস্তা আসার ফলে স্পেনের কোচ দেল বস্কের একটি মাথাব্যথা কমেছে: কেননা সেন্টার ফরোয়ার্ড হলো এমন একটি পজিশন, যেখানে স্পেনের কিছুটা দুর্বলতা ছিল৷ ঠিক সেভাবেই, চেলসির সেজার আজপিলিচুয়েতা উঠে আসার ফলে দেল বস্কেকে রাইট-ব্যাকের পজিশনটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না৷ অপরদিকে মিডফিল্ড এবং ডিফেন্সে তিনি বায়ার্ন মিউনিখের থিয়াগো আলকান্তারা এবং হাভি মার্তিনেজকে পাচ্ছেন – অন্তত উচ্চমানের বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে৷
যা ব্রাজিলে স্পেনের আসল বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা হলো ক্লান্তি, কেননা স্পেনীয় দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় বিগত কয়েক বছর ধরে শুধু জাতীয় নয়, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলির চূড়ান্ত পর্যায়ে খেলে আসছে: যেমন এ বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনা, রেয়াল মাদ্রিদ এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ৷ জাতীয় ও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলি ধরলে স্পেনের জাতীয় দলের অধিকাংশ প্লেয়ার ‘‘প্রতি তিন দিনে একটি করে ম্যাচ খেলছে৷ সব ক'টি খেলাই কঠিন এবং আমাদের ইনজুরির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে,'' বলেছেন দেল বস্কে৷
স্পেনের আরেকটি বড় সম্পদ হলেন নিঃসন্দেহে দেল বস্কে স্বয়ং, যিনি শুধু বিশ্বের সফলতম কোচদের মধ্যেই পড়েন না, যার ম্যান-ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে স্পেনের গোলরক্ষক ইকার কাসিয়াস বলেছেন: ‘‘উনি আমাকে শিখিয়েছেন, কি করে জয়ী হিসেবে বেঁচে থাকতে হয়৷ সংকটের মুহূর্তে কিংবা ট্রফি হাতে করে বিজয় মিছিলে, উনি সর্বত্র ঠিক একই রকম নিশ্চিন্ত, নিরুত্তাপ৷... শ্রদ্ধা ও স্বাভাবিকতা হলো ওনার সংজ্ঞা৷''
আর বার্সেলোনার সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ট্রফি জয়ী খেলোয়াড় সাভি হের্নান্দেজ দেল বস্কে সম্পর্কে বলেছেন: ‘‘আমি যাঁদের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে ছিলাম, এমন মানুষদের মধ্যে ভিসেন্তে হলেন সবচেয়ে মানবিক ব্যক্তিত্ব৷''