কোনটার উপর নির্ভর করবে জয়-পরাজয়? কোথায় চলেছে বিশ্ব ফুটবল? ১২ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ অবধি খেলাগুলো দেখলে অন্তত এ টুকু বোঝা যায় যে, পুরনো কায়দায় ফুটবল খেলে ফুটবলের নতুন দুনিয়ায় সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়৷
বিজ্ঞাপন
কথায় বলে, নবীনে-প্রবীণে৷ এই বিশ্বকাপে যত কোচের বয়স ষাট, এমনকি পঁয়ষট্টির ঊর্ধ্বে, এর আগের কোনো বিশ্বকাপে তা ছিল না৷ অথচ প্লেয়াররা যেন ক্রমেই আরো তরুণ হচ্ছে: যেমন ধরা যাক ইংল্যান্ডের ভবিষ্যতের দুই আশা ড্যানিয়েল স্টারিজ এবং রহিম স্টার্লিং৷ অপরদিকে স্পেন বলে যে স্পেন, তারাও নেদারল্যান্ডসের কাছে গো-হারা হারল সাবি-ইনিয়েস্তার মতো মহান, কিন্তু রণক্লান্ত মহারথীদের নামিয়ে: অনেকের নাকি রাজা খুয়ান কার্লোসের সাম্প্রতিক সিংহাসন ত্যাগের কথা মনে পড়ে গেছে! স্পেনের নৃপতিও বলেছিলেন, তিনি নতুন প্রজন্মের হাতে রাজদণ্ড তুলে দিতে চান৷ ফুটবলের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু করলেই বোধহয় স্পেনের মঙ্গল হতো৷
মাঠ কাঁপানো সুন্দরেরা
বিশ্ব কাঁপছে বিশ্বকাপের জ্বরে৷ আর ব্রাজিল বিশ্বকাপের মাঠ যাঁরা কাঁপাবেন, তাঁদের মধ্যে ‘সবচেয়ে সুদর্শন’ হিসাবে সাতজনকে বেছে নিয়েছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধুরা৷
ছবি: Sascha Schuermann/AFP/Getty Images
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো
এ যুগের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় পর্তুগাল দলের অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নাম তো থাকবেই! রেয়াল মাদ্রিদের এই ‘স্ট্রাইকার’ মাঠে নামেন ৭ নম্বর জার্সি গায়ে৷ ১১ বছরের ক্যারিয়ারে জাতীয় দলের হয়ে গোল করেছেন ৪৯টি৷ ব্রাজিলে তিনি নামছেন নিজের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্যার্খিও রামোস
স্প্যানিশ দলের ‘সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার’ স্যার্খিও রামোসের জন্যও এটি তৃতীয় বিশ্বকাপ৷ ক্লাব ফুটবলে খেলেন রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে, তাঁর জার্সি নম্বর ৪৷ গত বছর সবচেয়ে কম বয়সি খেলোয়াড় হিসাবে নিজের শততম গোপলটি উদযাপন করেছেন তিনি৷
ছবি: imago
ইকার কাসিয়াস
তিনি স্পেন দলের গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক, ব্রাজিলে যাচ্ছেন নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে৷ ইকার কাসিয়াসের নেতৃত্বেই ২-১০ সালে বিশ্বকাপ জয় করে স্পেন৷ ১ নম্বর জার্সি গায়ে তিনি ক্লাবে খেলেন রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে৷
ছবি: imago
লিওনেল মেসি
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ‘স্ট্রাইকার’-এর কাঁধেই ভর করে আছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন৷ লিওনেল মেসির জন্য এটি হবে তৃতীয় বিশ্বকাপ৷ দেশের হয়ে ৮৬টি ম্যাচে মাঠে নেমে মেসি গোল করেছেন ৩৮টি৷ আর ১০ নম্বর জার্সি গায়ে তিনি ক্লাবে খেলেন বার্সেলোনার হয়ে৷
ছবি: imago
মারিও গ্যোটৎসে
ব্রাজিলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন জার্মানির এই ‘মিডফিল্ডার’৷ ১৯ নম্বর জার্সিধারী মারিও গ্যোটৎসে ক্লাব পর্যায়ে খেলেন বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
দিদিয়ে দ্রগবা
আইভরি কোস্টের এই ‘স্ট্রাইকার’-এর বয়স এখন ৩৬৷ খুব সম্ভবত ব্রাজিল বিশ্বকাপই হবে দিদিয়ে দ্রগবার তৃতীয় এবং শেষ বিশ্বকাপ৷ তুরস্কের দল গালাতাসারাই ইস্তানবুলের এই খেলোয়ার মাঠে নামেন ১১ নম্বর জার্সি গায়ে৷
ছবি: Stan Honda/AFP/Getty Images
ইয়োহান কাবাই
ফ্রান্স দলের এই মিডফিল্ডার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এবারই প্রথম৷ ইয়োহান ক্যাবাই (বাঁয়ে) ক্লাবে খেলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের হয়ে৷ তার জার্সি নম্বর ৬৷
ছবি: Sascha Schuermann/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ে শুধু শনি-রবিবারেই সাত-সাতটা খেলা ছিল৷ স্পেন বনাম নেদারল্যান্ডসের খেলা ছিল শুক্রবার, সোমবারের মধ্যেই যা অতীত স্মৃতি হয়ে গিয়েছে৷ তবে সে খেলা একটি শিক্ষা রেখে গেছে: হাল-আমলের ফুটবলে যার গতি নাই, তার গতি নাই; তার গতি স্পেনের যে গতি, সেই গতি, অর্থাৎ চরম হার৷ স্পেনের রথী-মহারথীরা সাধারণত যা করে থাকেন, ম্যাচেও ঠিক তাই করেছেন অথবা করার চেষ্টা করেছেন – কিন্তু নেদারল্যান্ডসের গতির তুলনায় যেন একটু দেরিতে, যেন এক্সটেন্ডেড প্লে-র ৪৫ আরপিএম-এর সঙ্গে লং প্লে-র ৩৩ আরপিএম পাল্লা রাখার চেষ্টা করছে৷ তাতেই নেমন্তন্নো বাড়িতে ডাকাত পড়ার মতো স্পেনের সাজানো বাগান এলোমেলো হয়ে যায়৷
বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ব্রাজিলের খেলা দিয়ে৷ ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নেইমার অ্যান্ড কোম্পানির ঠিক সেই অভিজ্ঞতাই হয়েছে, বলকান দেশগুলোর সাথে খেলতে গিয়ে বাকি বিশ্বের সাধারণত যা হয়ে থাকে: বলকানের প্লেয়াররা ইউরোপের অন্যান্য লিগে খেলে থাকে; তারা অসম্ভব লড়াকু এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ৷ ব্রাজিলের পরে আর্জেন্টিনারও ঠিক সেই অভিজ্ঞতা হল রবিবার: জনতা ‘মেসি ম্যাজিক' দেখে মুগ্ধ, ফুটবলের মহাকাব্যে যেমনটা হওয়া প্রয়োজন৷ অন্যদিকে এও প্রমাণ হলো যে, এ বিশ্বকাপে সকলকেই নিজের খেলা খেলতে হবে, কেতাবি স্ট্র্যাটেজি কিংবা অতিমাত্রায় সাবধানতা দেখিয়ে কোনো লাভ নেই৷
বাঙালির বিশ্বকাপ উন্মাদনা
ফিফার সর্বশেষ ব়্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নীচে৷ তবে খেলার মান নিয়ে করা এই তালিকার পাশাপাশি যদি খেলা সমর্থন নিয়ে একটি তালিকা করা যেত, তাহলে বোধ হয় বাংলাদেশের নাম ওপরের দিকেই থাকতো৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রিয় দল বলে কথা!
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর বাকি আরও কিছুদিন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফুটবল ভক্ত মাথায় চুল কেটে ব্রাজিলের পতাকা একেঁছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
শোভাযাত্রা
ফুটবল বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি শোভাযাত্রা বের করেন ফুটবল প্রেমীরা৷ আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের দীর্ঘ পতাকা নিয়ে এ শোভাযাত্রায় কিশোর এবং তরুণদেরই অংশগ্রহণ ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
আয় বাড়িয়েছে বিশ্বকাপ
ঢাকার বকশীবাজারে সড়কের পাশে কাপড়ে ব্রাজিলের পতাকায় আঁকছেন শিল্পী মনির৷ এমনিতে ঢাকায় ডিজিটাল ব্যানারের প্রচলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ কমে গিয়েছিল এই শিল্পীর৷ তবে বিশ্বকাপের আমেজ শুরু হবার পর থেকে তাঁর আয় বেড়েছে৷ সকাল-সন্ধ্যা এখন তিনি পতাকা আঁকায় ব্যস্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
আয়ের হিসাব
ঢাকার বকশীবাজারে বিশাল আকৃতির আর্জেন্টিনার পতাকায় আঁকছেন শিল্পীরা৷ প্রায় ১০০ ফুট আকারের একটি পতাকায় কাজ করে এঁরা পান ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমর্থকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা
পুরনো ঢাকার আগাসাদেক সড়কের উপরে পাশাপাশি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা টাঙিয়েছেন সমর্থকরা৷ বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এই দুই দেশের সমর্থকদের মাঝে প্রতিযোগিতা বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
এত বড় পতাকা!
পুরনো ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন সড়কের উপরে প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা ঝুলিয়েছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রিয় দলের পতাকা কেনা
গুলিস্তানের ফুটপাথে জার্মানি ও ব্রাজিলের পতাকা কিনছেন দুই বন্ধু ইশতিয়াক ও শিশির৷ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজি পড়ুয়া ইশতিয়াকের প্রিয় দল জার্মানি আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শিশিরের প্রিয় ব্রাজিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
পতাকা বিক্রি
ঢাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দেশের পতাকা বিক্রি করেন ফরহাদ হোসেন৷ তাঁর কাছে বিশ্বকাপে অংশ নেয়া সব দেশের পতাকা থাকলেও বেশি বিক্রি হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা৷ সারাদিন ঘুরে এতে তাঁর আয় হয় ৮০০-১০০০ টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জমজমাট ফুটপাথ
গুলিস্তানের ফুটপাথের দোকানগুলোতে প্রতিটি জার্সি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৪০০ টাকায়৷ এবারের বিশ্বকাপের জার্সি তৈরির দেশগেুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ মান যাচাইয়ে বাদ পড়া এ সব জার্সি মেলে ফুটপাথের দোকানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পতাকা নামিয়ে ফেলার নির্দেশ
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে দেশের সব জায়গাতেই প্রিয় দেশের পতাকা উড়িয়েছেন ফুটবল প্রেমীরা৷ তবে সম্প্রতি যশোরসহ কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসক ভিনদেশি পতাকা নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলে ক্ষোভ জন্মায় ভক্তদের মাঝে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ির ছাদে রংয়ের বাহার
ঢাকার আমিনবাজার যেন এক ভিন্ন সাজে সেজেছে বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে৷ এখানকার প্রতিটি বাড়ির ছাদে শোভা পাচ্ছে নানান দেশের পতাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে দেশের পতাকাও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের শিক্ষার্থীরা আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার মাঝে নিজ দেশের লাল সবুজের পতাকাটি উড়াতে ভুলেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
তরুণদের মধ্যেই বেশি উন্মাদনা
বিশ্বকাপ নিয়ে সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস তরুণদের মাঝেই৷ বিভিন্ন দেশের জার্সি পরা কয়েকজন তরুণকে দেখা গেল রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
বলতে কি, বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা যে প্রথমার্ধে আদৌ আর্জেন্টিনার চেয়ে খারাপ খেলেছে, এমন নয়৷ কিন্তু বসনিয়ার আক্রমণ কীরকম যেন বিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়া অবধি ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে তার পর থিতিয়ে গেছে, এলোমেলো হয়ে গেছে৷ কেননা তাদের কাঁকড়ার খোলস ছাড়িয়ে, নারকেলের খোল ভেঙে ভেতরের শাঁসটা খাওয়ার পন্থা জানা নেই: অর্থাৎ গোল করার পন্থা জানা নেই৷ অথবা জানা থাকলেও, একটা লিওনেল মেসি নেই৷ পর্যান্তরে ওলন্দাজদের মতো একটা ফান প্যার্সি বা আরিয়েন রবেন থাকলেও কাজ চলে যায়৷ কিন্তু মেসি থাকলে প্রথমার্ধের অতি সাবধানী ৫-৩-২ লাইন-আপ-কে দ্বিতীয়ার্ধে ৪-৩-৩-এ ফিরিয়ে আনলেই চলে; মেসির সহযোগী হিসেবে গনজালো ইগুয়াইনকে দিলে তো আরো ভালো৷ বাকিটা মেসি ম্যাজিকের অপেক্ষা – যা ফুটবলের বিধাতা সব খেলোয়াড় বা সব দলকে দেন না৷ তাই সুযোগ পেলেই নিন্দুকে মেসির সমালোচনা করে৷ আবার মেসি গোল করলে সমালোচকদের এক মিনিটের নীরবতা৷
হন্ডুরাসের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের খেলায় প্রথমবার ‘গোলকন্ট্রোল'-এর জার্মান প্রযুক্তির ব্যবহার; ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের খেলায় সুইসদের লাস্ট মিনিট গোল, এ সবই নিষ্প্রভ হয়ে গেছে আলবিসেলেস্তে-র দশ নম্বর জার্সিধারী ছোটখাটো মানুষটি হঠাৎ ঝলসে ওঠায়: কেননা মেসির গোলটিতে ক্ষিপ্রতা, নিপুণতা ও চাতুর্যের যে ত্র্যহস্পর্শ ঘটেছে, তার আরেক নাম হলো ‘জিনিয়াস’৷
বিশ্বাস না হয়, নেইমার কিংবা রোনাল্ডোকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন৷ আর কেউ না জানুক, তাঁরা তো জানবে৷