২০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স৷ তাই আনন্দে দিশেহারা ছিলেন অনেক ফরাসি সমর্থক৷ প্যারিসের শঁজেলিজে-তে বিশ্বকাপ জয় উৎযাপনে হাজির হয়েছিলেন ৯০ হাজার মানুষ৷ কিন্তু কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষের কারণে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা৷
বিজ্ঞাপন
অতি উৎসাহী এবং উচ্ছৃঙ্খল কিছু মানুষ বিভিন্ন ভবনের জানালা ভেঙে ফেলে৷ কিছু দোকানে লুটপাটও চালিয়েছে তারা৷
খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে আইফেল টাওয়ার৷ সেনে ভেসে উঠছিল ১৯৯৮ এবং ২০১৮, যে দুই সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছে৷ বিশ্বকাপ জয়ের উন্মাদনা এত বেশি ছিল যে,অনেকে নগ্ন হয়ে কেবল পতাকা শরীরে জড়িয়ে ছিলেন৷ বিভিন্ন জায়গায় স্মোক বোমা ছোড়া হয়েছিল, যা থেকে ছড়িয়ে পড়ছিল ফ্রান্সের পতাকার তিনটি রঙ৷ গাড়িতে বাজছিল হর্ন আর পতাকা হাতে অনেকেই নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়৷ কেবল প্যারিস নয়, পুরো ফ্রান্স জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছিল উন্মাদনা৷
খেলা দেখার সময় কিশোর ও তরুণদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল শঁজেলিজে৷ ফ্রান্স ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে পরাজিত করার পর সেখানে তরুণদের ভিড় আরো বাড়তে থাকে৷ এক পর্যায়ে প্রায় ৯০ হাজার তরুণ-কিশোর-কিশোরী জড়ো হন সেখানে৷
তাদের মধ্যে একজন ১৯ বছরের গোফ্রি হ্যামশিক বললেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে ফ্রান্স অনেক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেমন সন্ত্রাসী হামলা৷ কিন্তু এই একটা জিনিস আমাদের সবাইকে এক করেছে৷ এই দেশে ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির মানুষ রয়েছে৷ কিন্তু ফুটবলে কোনো ধর্ম নেই, ভেদাভেদ নেই৷ তাই এটা সবার মধ্যে ভালো একটা অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়৷''
সবকিছু ভালোই চলছিল৷ কিন্তু এক পর্যায়ে অতি উৎসাহী কিছু তরুণ বেশ কয়েকটি দোকানের কাঁচ ভাঙা শুরু করে, বিভিন্ন ভবনের দিকে বোতল ছুড়তে থাকে, আশেপাশে থাকা অস্থায়ী বেড়াগুলো ভেঙে ফেলে৷ তাই মধ্যরাতে এলাকাটি হঠাৎ করেই রণক্ষেত্রে রূপ নেয়৷
ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ৪ হাজার পুলিশ৷ জলকামান আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে৷
আগামী কয়েকদিন ধরে ফ্রান্সে এই উন্মাদনা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ভবন এলিজে প্রাসাদে চ্যাম্পিয়ন দলটিকে সংবর্ধনা দেবেন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো৷
তবে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলেও ক্রোয়েশিয়া কিন্তু ফুটবল ভক্তদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়েছে৷
বিশ্বকাপ ফাইনালের যে ছবিগুলো আপনার দেখা উচিত
দুর্দান্ত ফিনিশিং, মুহুর্মুহু আক্রমণ-পালটা আক্রমণ আর বিতর্কিত এক পেনাল্টি৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে আপনি যা যা চান তার প্রায় সবই ঘটেছে মস্কোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে৷ ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার এ ফাইনালের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
দুর্ভাগ্যজনক আত্মঘাতী গোল
মারিও মানসুকিচ (বাম থেকে পঞ্চম) চেয়েছিলেন বলটি বাইরে পাঠাতে৷ কিন্তু, প্রতিপক্ষের গ্রিসমানের ফ্রি কিকটি কিনা তাঁর মাথায় লেগেই ঢুকে গেল নিজের দলের গোল পোস্টে! ফাইনালের শুরুতে ক্রোয়েশিয়া দল বড় ধাক্কা খেয়েছে তাঁর এই আত্মঘাতী গোলে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি ক্রোয়েশিয়া
আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়লেও হতাশা পেয়ে বসেনি এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়াকে৷ বরং ইভান পেরিসিচ চমৎকার এক গোল করে খেলায় সমতা ফেরান৷ আর সেটা ঘটেছে প্রথম গোলের দশ মিনিট পরেই৷
ছবি: Reuters/C. Recine
ভিএআর বিতর্ক
ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি, অর্থাৎ ভিএআর প্রযুক্তির সুবিধা আবার এগিয়ে দেয় ফ্রান্সকে৷ পেরিসিচ নিজ দলের ডি-বক্সের মধ্যে বলে হাত লাগিয়েছিলেন কিনা তা পরীক্ষা করতে ভিএআর-এর সহায়তা নেন আর্জেন্টিনার রেফারি নেস্তঁর পিটানা৷ পিটানা টিভিতে রিপ্লে দেখে ফ্রান্সকে পেনাল্টি দেন৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া
গ্রিসমানের পেনাল্টি শটের গোল ফ্রান্সকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেয়৷ এবারের বিশ্বকাপে রীতিমতো বড় তারকা বনে যাওয়া ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচকে পুরোপুরি বোকা বানান গ্রিসমান৷ এটা ছিল চলতি বিশ্বকাপে তাঁর চতুর্থ গোল৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
পগবাও আবার চেনালেন নিজেকে
ফাইনালে নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল পা দিয়ে গোল করে সমালোচনার জবাব দিলেন পল পগবা৷ ফ্রান্সের বড় কোনো টুর্নামেন্টে এটা তাঁর তৃতীয় গোল এবং ইউরো ২০১৬ কোয়ার্টার ফাইনালের পর প্রথম গোল৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
উচ্ছ্বসিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসে প্রতিপক্ষ দল ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিটারোভিচ এবং আয়োজক দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে খেলা দেখেছেন৷ ফাইনালে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ইতিহাসের অংশ এমবাপ্পে
কিলিয়ান এমবাপ্পে (বামে) ফাইনালে দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করে ক্রোয়েশিয়ার সব সম্ভাবনা কার্যত শেষ করে দেন৷ ১৯ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় হচ্ছেন ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা প্রথম টিনএজার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
ক্রোয়েশিয়াকে উপহার
ফরাসি গোলরক্ষক উগো ল্যরিস (ডানে) ক্রোয়েশিয়াকে একটি গোল বলতে গেলে উপহারই দিয়েছেন৷ সতীর্থ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ব্যাক পাসে বল পেয়েছিলেন তিনি৷ মারিও মানসুকিচ ছুটে এসেছিলেন বল কেড়ে নিতে৷ তাঁকে কাটাতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন ল্যরিস৷বল নাগালে পেয়ে এক টোকাতেই ফরাসি গোলরক্ষককে বোকা বানান মানসুকিচ৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
হাওয়ায় ভাসছেন কোচ
দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের পর কোচ দিদিয়ে দেশঁ-কে এভাবেই শূণ্যে ছুঁড়ে দেন ফরাসি খেলোয়াড়রা৷ দেশঁ ছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের অধিনায়ক৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী তৃতীয় ব্যক্তি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
সবই জিতলো ফ্রান্স!
ফরাসি খেলোয়াড়রা যখন বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরেন, তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো মস্কোর লুঝনিকি মাঠে৷ এবার গোটা আসরে ভালো খেলে বিশ্বকাপ জয় করেছে ফ্রান্স৷ আগামী চারবছরের জন্য তারাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন৷ ২০২২ সালে কাতারে অন্য কেউ কী পারবে ফরাসিদের বিজয় রথ থামাতে?