দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮৷ প্রস্তুতি পর্বের ম্যাচগুলোও প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরকে সামনে রেখে কেমন দল গড়েছে ফেবারিটরা?
বিজ্ঞাপন
ফেবারিটের তালিকায় অনেকেই চলে আসে৷ তবে জনপ্রিয়তা ও পারফরমেন্সের বিচারে পাঁচটি দলের অবস্থা তুলে ধরা হলো৷
জার্মানি
গতবারের চ্যাম্পিয়ন দল জার্মানি৷ আরেকবার বিশ্বসেরার মুকুট পড়লে ব্রাজিলের সমান পাঁচ বার এই শিরোপা জেতার রেকর্ডটি ছুঁয়ে ফেলবে তারা৷ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও মন্দ নয়৷ গত ২৭ মার্চ ব্রাজিলের কাছে না হারলে লম্বা সময় অপরাজিত থাকার আগের রেকর্ডটিই স্পর্শ করে ফেলত তারা৷
বিশ্লেষকদের তালিকায় তারা বিশ্বের এখন এক নম্বর দল এবং ব্রাজিলের সঙ্গে যৌথভাবে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার দৌঁড়ে সবার আগে৷
বাছাই পর্বে ১০ ম্যাচের ১০টিতেই জিতে মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল৷ এছাড়া টানা ২২ ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে, যেখানে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে ড্র করেছে৷ তবে ব্রাজিলের কাছে হেরে গেছে ১-০ গোলে৷
বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা একাদশ
এই একাদশ বাছাই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ কয়েকবছর আগে বিশ্লেষক ও সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত এই একাদশ প্রকাশ করেছিল বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড সকার৷ দেখুন কারা ছিলে ৪-৪-২ ফর্মেশন মাথায় রেখে গড়া সেই দলে৷
ছবি: AP
গোলরক্ষক: লেভ ইয়াসিন
ফুটবলে গোলরক্ষকের নাম নেয়া হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম আসবে না তা হতে পারে না৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক খেলেছেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ৷ ১৯৫৬ সিডনি অলিম্পিকে জিতিয়েছিলেন দেশকে৷ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনি
বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার কে? অবলীলায় এই নামটি চলে আসবে৷ ভোটেও তাই হয়েছে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮-র বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ইটালিয়ান ডিফেন্ডার৷ ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইটালির টাইব্রেকার হার একটুর জন্য তাঁকে শিরোপার নাগাল পেতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP-Photo/B. Luca
রাইট ব্যাক: কাফু
টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি৷ জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ২০০২-এ ব্রাজিল দলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ ভোটে ডিফেন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি ছিল কাফু’র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
ফুটবলের ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় বা অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন৷ এই কিংবদন্তীর নেতৃত্বে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৪ সালে৷ আর কোচ হিসেবে ডয়েচলান্ডকে আবারো শিরোপার স্বাদ দেন ১৯৯০-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুর
ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপটি (১৯৬৬) জয়ে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডার৷ তাঁর পায়ের দক্ষতা আর রক্ষণভাগে দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন সময় উপহার দেয়ার কৌশল তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে একাদশে৷ তবে ভোটের মাঠে এর জন্য তাঁকে ইটালির ফ্র্যাঙ্কো বারেৎসি’র সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
যে চারজন মিডফিল্ডার একাদশে জায়গা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন৷ এই প্রতিভাবান ফুটবলারের বিশেষ দিক হলো তিনি যে কোনো পজিশনে খেলতে পারতেন৷ অসম্ভব স্ট্যামিনার অধিকারী ছিলেন৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনা ও স্পেনের হয়ে খেলেছেন৷ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেললেও মূল পর্বে খেলা হয়নি তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদান
জিদানের পায়ের জাদু’র প্রশংসা করেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া মুশকিল৷ স্কিলের দিক থেকে অনেকেই তাঁকে মারাদোনা আর পেলের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের নায়ক ছিলেন তিনিই৷ এমনকি ২০০৬ বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন৷ তবে সেবার ইটালির মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে অনেক সমালোচনার ভাগীদারও হন৷
ছবি: picture-alliance/DPPI
মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফ
হল্যান্ডের এই কীর্তিমান ফুটবলার যে একাদশে থাকবেন তা জানাই ছিল৷ টোটাল ফুটবলের একরকম জনকই তিনি৷ তাঁর কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষরা যেন দাঁড়াতেই পারতেন না৷ তাঁর নৈপূণ্যে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় হল্যান্ড৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পশ্চিম জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
মিডফিল্ডার: ডিয়েগো মারাদোনা
ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হলো, সর্বকালের সেরা কে? পেলে, না মারাদোনা? এই ফুটবল জাদুকরের জাদু অবশ্য ১৯৮২-তেই দেখেছিল বিশ্ব৷ কিন্তু সেবার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ এরপর প্রায় একক নৈপূণ্যেই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ৷ ১৯৯০ সালেও ফাইনালে খেলেছে তাঁর দল৷ তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গল্প কার না জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: পেলে
সর্বকালের সেরা বিতর্কের আরেক নায়ক পেলে৷ ‘কালোমানিক’ নামেও পরিচিত৷৷ ব্রাজিল ও ফুটবল উভয়কেই মহিমান্বিত করেছেন এই কিংবদন্তী৷ ১৯৬২ বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে আর খেলতে পারেননি৷ তবে সেই বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল অবশ্য আগেই বাদ পড়ে যায়৷ প্রচুর ফাউলের শিকার হন পেলে৷ তবে ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে চরম নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নেন শিরোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি
একাদশে এ সময়ের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন লিওনেল মেসি৷ যদিও এখনো বিশ্বকাপে মেসির জাদুর প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি, তারপরও তাঁর নৈপুণ্য তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পেলে ও মেসির মাঝে ব্যবধান গড়েছে মাত্র ১০টি ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Raggio
11 ছবি1 | 11
জার্মানি দলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, তাদের গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ারকে ঘিরে৷ ইনজুরির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠের বাইরে তিনি৷ আশা করা যাচ্ছে হয়তো আগামী গ্রীষ্মে রাশিয়া যাচ্ছেন তিনি৷ তবে পুরোপুরি এখনো নিশ্চিত নয়৷
দলে নতুন সংযোজন লাইপজিশের ফরোয়ার্ড টিমো ভ্যার্নারের ১২ ম্যাচে ৭ গোল করে একজন যথার্থ স্ট্রাইকারের অভাব পূরণ করেছেন, যে অভাব ২০১৬ ইউরোর লড়াইয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ডয়েচরা৷ তাঁর ওপর বাজি রাখছেন বিশ্লেষকরা৷
ব্রাজিল
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল, যার ঝুলিতে আছে পাঁচ পাঁচটি ট্রফি৷ সম্প্রতি জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চার বছর আগে ঘরের মাঠে ৭-১ গোলে শোচনীয়ভাবে হারের লজ্জা কিছুটা হলেও ঢাকতে পেরেছে তারা৷
ব্রাজিল বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই হারে চিলির কাছে৷ কিন্তু সেই হারই যেন শক্তি হয়ে ধরা দেয় ফুটবলের এই ল্যাটিন পরাশক্তির কাছে৷ বাছাই পর্বের পরের ১৭ ম্যাচে কোনো হার নেই তাদের৷ দ্বিতীয় অবস্থায় থাকা উরুগুয়ের থেকে প্রায় ১০ পয়েন্ট এগিয়ে তারা৷
এরপর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জাপানকে হারায় ও ইংলিশদের সঙ্গে ড্র করে৷ তারপর জার্মানিকে হারাবার আগে এবারের বিশ্বকাপের স্বাগতিক রাশিয়াকে হারায় ৩-০ গোলে৷
ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমারের দলে ফেরা নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে৷ পায়ে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে এই নন্দিত ফরোয়ার্ডের৷ অবশ্য দল তাঁর ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী৷
রাশিয়া বিশ্বকাপে যেসব দেশের না থাকা বিস্ময়ের
এ বছর রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেতে গত ১৮ মাস ধরে সারা বিশ্বজুড়ে বাছাইপর্বের খেলা হয়েছে৷ মোট ৩২টি দল খেলবে বিশ্বকাপে৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress
ইটালি
চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই দেশ রাশিয়ায় খেলতে পারবে না৷ প্লে-অফের দুই পর্বে সুইডেনকে টপকাতে পারেনি অভিজ্ঞ গোলরক্ষক বুফনের দল৷ ফলে ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইটালীয়দের৷ ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ার ঘটনাটি ইটালির ফুটবলে যেমন বড় ঘটনা, এখন থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে না পারার ঘটনাটি সেভাবেই দেখবেন ইটালির সমর্থকরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
নেদারল্যান্ডস
তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে তারা৷ তবে একবারও জেতা হয়নি৷ এবার আর সেই সুযোগই পাচ্ছে না নেদারল্যান্ডস৷ কারণ, বাছাইপর্বে যে গ্রুপে ছিল দলটি সেখানে তারা হয়েছে তৃতীয়৷ আর পয়েন্ট কম থাকায় ইটালির মতো প্লে-অফ খেলারও সুযোগ হয়নি ডাচদের৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
চিলি
আলেক্সিস সাঞ্চেজের দল ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা দুইবার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কোপা অ্যামেরিকার সেরা হয়েছিল৷ তার আগে ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল তারা৷ সবমিলিয়ে দারুণ ফর্মেই ছিল দলটি৷ কিন্তু তারপরও রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়েছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশ৷
ছবি: Reuters/R. Garrido
যুক্তরাষ্ট্র
১৯৯০ সাল থেকে টানা বিশ্বকাপে খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে এবার আর রাশিয়ায় যাওয়া হচ্ছে না৷ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর কাছে হেরে বাদ পড়েছে দেশটি৷ হারের পর ভেঙে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাট বেসলার৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/R. Blackwell
আইভরিকোস্ট
শেষ তিন বিশ্বকাপ খেলেছে দিদিয়ের দ্রগবা আর ইয়াইয়া তোরের দল৷ তবে এখন আর তাঁরা জাতীয় দলে নেই৷ আইভরিকোস্টেরও আর রাশিয়ায় যাওয়া হচ্ছে না৷ শেষ ম্যাচে নিজেদের ঘরে মরক্কোর কাছে হেরে বাদ পড়েছে দেশটি৷ ছবিতে আইভরিকোস্টের ২০১৫ সালের জাতীয় দলকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: I. Sanogo/AFP/Getty Images
ঘানা
আইভরিকোস্টের মতো ঘানাও শেষ তিন বিশ্বকাপ খেলেছে৷ এর মধ্যে ২০১০ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল তারা৷ তবে এবার বাছাই পর্ব পেরোতে ব্যর্থ হয়েছে আফ্রিকার এই দেশটি৷ ছবিতে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ঘানার জাতীয় দলকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: F. Leong/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
ব্রাজিলের দলকে যতটা বলা হয়, তারচেয়েও বেশি ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকেই৷ সেখানে ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডে নেইমার, কোটিনিয়ো, ফিরমিনো, কস্টা, উইলিয়ান ও ফার্নান্ডিনিয়োরা দলকে চমৎকারভাবে গভীরতা এনে দিতে পারে৷
বিশ্বকাপের আগে ক্রোয়েশিযা ও অস্ট্রিযার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে নিজেদের আরো ঝালিয়ে নেয়ারও সুযোগ আছে তাদের৷
আর্জেন্টিনা
দু'বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা গতবারের রানার্সআপ৷ ৩০ বছর বয়সি মেসির এটিই সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ, যেখানে পারফরম্যান্সের শিখরেই থাকবেন তিনি৷ অবশ্য মেসি এই আসরের পরই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার কথাও নাকি ভাবছেন৷ সে যাই হোক মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনা দলের সর্বশেষ খবর হলো, স্পেনের কাছে ৬-১ গোলের লজ্জাজনক পরাজয়৷
বাছাইপর্বেও ধুকেছে আর্জেন্টাইনরা৷ এ পর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসির হ্যাট্রিকের বদৌলতে রাশিয়ার টিকেট পেয়েছে নীল-সাদারা৷ নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচে তারা রাশিয়াকে হারালেও হেরেছে আফ্রিকান পরাশক্তি নাইজেরিয়ার কাছে৷ তবে মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপের টিকেট না পাওয়া ইটালির বিপক্ষে কষ্টের জয় পেয়েছে৷
আর্জেন্টাইন ম্যানেজার সাম্পোলি মেসির ওপর এতটাই নির্ভর করছেন যে, সিরি আ'তে এ মৌসুমে সেরা পাঁচ গোলদাতার দু'জন ডিবালা ও ইকার্ডি-র কাউকেই বিবেচনায় আনছেন না তিনি৷ সাম্পোলি নিজেই দলের দায়িত্ব নিয়েছেন বাছাই পর্বের শেষ চার ম্যাচের আগে৷ তাই তাঁর পদ্ধতির সঙ্গে খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে৷
হিগুয়েইনের ওপর তাঁর আস্থাকে অনেকেই সমালোচনার চোখে দেখেন৷ বিশ্বকাপের আগে আর একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পাবে আর্জেন্টিনা৷
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই উন্মাদনা৷ আর সেই উন্মাদনা ঐ গোলপোস্টকে ঘিরেই৷ তাই যারা গোল করেন তারাই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে যাঁরা প্রতিপক্ষের জালে অন্তত ১০ বার বল জড়িয়েছেন তাঁদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিরোস্লাফ ক্লোজে
ক্লোজে হলেন জার্মানির সৌভাগ্যের প্রতীক৷ যে ম্যাচেই তিনি দেশের হয়ে গোল করেছেন সে ম্যাচেই দল জিতেছে৷ তিনি জার্মানির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ ১৬টি গোল নিয়ে বিশ্বকাপেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি৷ ২০১৪ বিশ্বকাপে ২টি গোল করে তিনি ব্রাজিলের রোনালদোকে টপকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ অংশ নিয়েছেন ২০০২, ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে৷ জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ৷
ছবি: Patrik Stollarz/AFP/Getty Images
রোনালডো
ব্রাজিলের এই কিংবদন্তীকে বলা হয় বিশ্বের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন৷ ‘দি ফেনোমেনোন’খ্যাত এই তারকা তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়, দু’বার ব্যালন ডি’অর ও একবার উয়েফার সেরা ক্লাব ফুটবলার এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জেতেন৷ ব্রাজিলের হয়ে তিনি ৯৮ ম্যাচে ৬২টি গোল করেন, যার ১৫টিই বিশ্বকাপে৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল ও ২০০২ আসরে জেতেন গোল্ডেন বুট৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Ugarte
গ্যার্ড ম্যুলার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলেছেন তিনি৷ প্রতিপক্ষের জালে বল ফেলার দক্ষতার জন্য তাঁকে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে মানা হয়৷ এই জার্মান কিংবদন্তীর ফিনিশিং ছিল অনবদ্য৷ দেশের হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল, যার ১৪টিই এসেছে বিশ্বকাপে তাঁর খেলা ১৩ ম্যাচে৷
ছবি: AP
জিস্ট ফুঁতেন
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটি তাঁর৷ একবারই বিশ্বকাপ খেলেছেন এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড, ১৯৫৮ সালে৷ সে বিশ্বকাপেই ৬ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেলে
‘কালো মানিক’ নাম তাঁর৷ তাঁকে অনেকেই ফুটবলের সর্বকালের সেরা বলেই মানেন৷ ব্রাজিলিয়ান এই মহাতারকার বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে ১২ গোল৷ এই তালিকায় একমাত্র তিনিই তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সান্দোর পিতার কচিশ
হাঙ্গেরির এই দুর্দান্ত ফিনিশার তাঁর সময়ে সেরাদের একজন ছিলেন৷ ১৯৫২ ও ৫৪ সালে তিনি যে কোনো ইউরোপিয়ান লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন৷ দেশের হয়ে ৬৮ ম্যাচে করেছেন ৭৫ গোল৷ ১৯৫৪ বিশ্বকাপে তিনি ১১ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷ একই বিশ্বকাপে দুইবার হ্যাট্রিক করার রেকর্ড তিনিই প্রথম গড়েন৷
ছবি: AP
ক্লিন্সমান
ক্লিন্সমান জার্মানির তারকা ফুটবলার ও কোচ৷ তিনি ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন প্রথম ১৯৯০ সালে৷ এরপর ’৯৪ ও ’৯৮-এ খেলেছেন একীভূত জার্মানির হয়ে৷ বিশ্বকাপে তাঁরও মোট গোলসংখ্যা ১১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
হেলমুট রান
পশ্চিম জার্মানির এই কিংবদন্তীর নাম ছিল ‘দ্য বস’৷ ১৯৫৪-র বিশ্বকাপের ফাইনালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি৷ বিশ্বকাপে তাঁর মোট গোলসংখ্যা ১০৷
১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি৷ এরপর ৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৮০ ম্যাচে গোল করেছেন ৪৮টি৷ ৮৬’র বিশ্বকাপে জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট৷ বিশ্বকাপে তাঁর গোলসংখ্যা ১০টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STAFF
গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
আর্জেন্টাইন এই গোল মায়েস্ত্রোর গোলগুলোকে বলা হতো ‘বাতিগোল’৷ বিশ্বকাপে তাঁরও গোলসংখ্যা ১০টি৷ ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/Allsport/C. Villa
আরো যাঁরা
বিশ্বকাপে দশ গোল করাদের তালিকায় আরো আছেন পেরুর কুবিলাস, জার্মানির টোমাস ম্যুলার ও পোল্যান্ডের লাটো৷ এর মধ্যে টোমাস ম্যুলার এখনো খেলছেন জার্মানির হয়ে৷ তাই তাঁর সামনে আছে গুরুদের টপকে যাবার সুযোগ৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
11 ছবি1 | 11
ফ্রান্স
একবারই বিশ্বকাপ জিতেছে ফ্রান্স, ১৯৯৮ সালে নিজেদের মাটিতে৷ তাদের দলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাঁচ খেলোয়াড়ের তিনজনই রয়েছেন৷
বাছাই পর্বের দশ ম্যাচের সাতটিতে জয় পেয়েছে ফ্রেঞ্চরা৷ প্রীতি ম্যাচে নভেম্বরে তারা ওয়েলসকে হারায়, ড্র করে জার্মানির সঙ্গে৷ কলম্বিয়ার বিপক্ষে একটিতে জয় পায় ও একটিতে পরাজিত হয়৷ আর রাশিয়াকে হারায় ৩-১ গোলে৷
ফুটবল বিশারদরা দিদিয়ে দেশঁ'র কৌশল নিয়ে সন্তুষ্ট নন৷ কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে যখন প্রতিপক্ষ কৌশল পাল্টায় তখনও দেশঁ তাঁর দলের কৌশলে কোনো পরিবর্তন আনেননি৷
সে যাই হোক পল পগবা হয়ত বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটাই দেবেন৷ কিন্তু প্রচুর ভুল করছেন ডিফেন্ডার লে ব্ল্যু, যার মাশুল দিতে হয়েছে ফ্রান্সকে৷ তাঁর সঙ্গে হয়ত রক্ষণভাগ সামলাবেন স্যামুয়েল উমিতিতি, রাফায়েল ভারান ও লরাঁ কাসিয়েনি৷
তবে আক্রমণভাগে অনেকগুলো অপশন আছে দেশঁ'র সামনে৷
সেখান থেকে কারা মূল দলে জায়গা করে নেবেন তা চূড়ান্ত করতে আরো বিশ্বকাপের আগে আরো তিনটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে ফ্রান্সের৷
স্পেন
২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা গত আসরে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয়৷ তবে তাদের এখন বেশ কঠিন দলই মনে হচ্ছে৷ বিশেষ করে আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলেগুড়িয়ে দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন স্প্যানিশরা৷ সে ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইসকো৷
বোল্ট খেললেন মারাদোনার বিপক্ষে
01:05
নতুন ম্যানেজার জুলেন লোপেতেগি-র অধীনে ১৮ ম্যাচের একটিতেও হারেনি তারা৷ প্রত্যেক ম্যাচেই গোলও পেয়েছে টিকিটাকারা৷
বাছাইপর্বে দশ ম্যাচের ন'টিতে জয় ও একটিতে ড্র নিয়ে শীর্ষে থেকেই চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে স্পেন৷ প্রীতি ম্যাচে নভেম্বরে হারিয়েছে কোস্টারিকাকে ও ড্র করেছে রাশিয়ার সঙ্গে৷ এরপর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে ড্র করেছে এবং আর্জেন্টিনাকে এক কথায় উড়িয়েই দিয়েছে৷
স্পেন দলটিকে বেশ গোছানো মনে হচ্ছে এবার৷ চমৎকার ফর্মে আছেন গোলরক্ষক ডাভিড ডে গেয়া৷ এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকাকে অনেকেই এখন পৃথিবীর সেরা গোলরক্ষক মনে করেন৷ সামনে আছে সার্গিও রামোস ও জেরার্ড পিকে-র সেন্ট্রাল ডিফেন্সের দুর্গ৷
ইনিয়েস্তা এখনো মাঝমাঠের কারিগর৷ তাঁর সঙ্গে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইসকো দারুন খেলছেন ইদানীং৷ ভ্যালেন্সিয়া স্ট্রাইকার রডরিগো ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার ডিয়েগো কস্টা যখনই সুযোগ পাচ্ছেন গোল করে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছেন৷
বিশ্বকাপের আগে আরো দু'টি ম্যাচ খেলবে স্পেন৷ তাই লাল নীল দুর্গ যে রাশিয়ায় এবার ব্যাপক তোপ হানবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷
সব মিলিয়ে এক দুর্দান্ত বিশ্বকাপ দেখার অপেক্ষায় ফুটবল প্রেমীরা৷
বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আপনারা কী ধরনের প্রতিবেদন পেতে চান? জানান আমাদের, লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷