1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপ ফুটবল ও জার্মান জাতির ক্ষতি

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শুরুতেই সেইসব পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, যাঁরা ফুটবল নিয়ে একটি জমজমাট লেখা পড়ার আশায় লিংকে ক্লিক করেছেন৷ কিন্তু কঠিন এক বিষয়ে আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এছাড়া আর উপায় ছিল না৷

Fußball WM 2014 Deutschland Frankreich Viertelfinale
ছবি: Reuters

বিষয়টি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ৷ এই লেখায় জাতীয়তাবাদের ভালোমন্দ নিয়ে কিছু কথা বলবো৷ কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো৷ সেগুলো পড়ে হয়ত আপনার মনে হতে পারে, কেন আমি নেতিবাচক শিরোনাম দিলাম৷ মনে হতে পারে, শিরোনামটি ইতিবাচক হওয়া উচিত ছিল৷

যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ঢুকে পড়ি৷ শিরোনামে বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা বলছিলাম৷ সেই বিশ্বকাপটি হয়েছিল ২০০৬ সালে, জার্মানিতে৷ তার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জার্মানদের পতাকা নিয়ে মাতামাতি করতে দেখা যেত না৷ ইহুদিদের বিরুদ্ধে হিটলারের নৃশংসতার কারণে জার্মানরা জার্মান পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন কিংবা দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখানো উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না তাঁরা৷ তাই খেলাকে ঘিরে বাড়ির ছাদ কিংবা জানালা থেকে দেশের পতাকা ওড়ানো, মাথায় পতাকার রংয়ের টুপি পরা, গাড়িতে পতাকা ঝোলানো – এ সব করতেন না জার্মানরা৷

কিন্তু জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ সেই ধারা বদলে দেয়৷ বিশ্বকাপের কারণে সারা বিশ্ব থেকে আসা সমর্থকদের নিজ নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখে জার্মানরাও তা শুরু করে দেন৷ তাঁরাও পতাকা ওড়ানো থেকে শুরু করে জাতীয় দলের জার্সি পরে হৈচৈ করে বড় স্ক্রিনে খেলা দেখা শুরু করেন৷

হঠাৎ করে জার্মানদের এমন আচরণ বিশ্ববাসীর কাছে এতটাই অস্বাভাবিক ঠেকেছিল যে নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ানের মতো পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷

জার্মানির পত্রপত্রিকায়ও বিষয়টি উঠে এসেছিল৷ রেডিওতে টেলিফোন করে অনেক জার্মানকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, অবশেষে তাঁরা নাকি নিজেদের জার্মান হিসেবে ভাবতে গর্ব বোধ করছেন৷

সেই থেকে শুরু৷ এখন অন্য জাতির মতোই জার্মানরা নিজ দেশ নিয়ে গর্বিত৷

আপাতদৃষ্টিতে জার্মানদের এই জাতীয়তাবাদী আচরণ নিয়ে বিশ্ববাসীর চিন্তিত হওয়ার কিছু ছিল না৷ কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে এই আচরণের নেতিবাতক প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ যেমন ইউরোজোনের বিরোধিতা করে ২০১৩ সালে এএফডি (জার্মানির জন্য বিকল্প) নামক একটি দলের জন্ম হয়৷ সেই সময় সংকটে থাকা গ্রিসকে সহায়তা করতে কোটি কোটি টাকা দেয়া হচ্ছিল৷ এর মধ্যে জার্মানদের করের টাকাও ছিল৷ অন্য দেশকে কেন নিজেদের টাকা দিতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছিল এএফডি৷

২০১৩ সালের জার্মান নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা দলটি ঐ নির্বাচনে পাঁচ শতাংশের কম ভোট পাওয়ায় সংসদে যেতে পারেনি৷ তবে চার বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে তারা৷ ১২.৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পায় এএফডি৷ এই চার বছরে ইউরোজোনের বিরোধিতা করার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে জার্মানিতে আশ্রয় দেয়ার সমালোচনাও করে তারা৷

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

এএফডির ভোট বাড়ার কারণে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল ও তাঁর জোটসঙ্গী দলের ভোট কমে যায়৷ ব্যক্তি হিসেবে ম্যার্কেলের সমর্থনও কমতে থাকে৷ এক পর্যায়ে পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে, ম্যার্কেলকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তির ঘোষণা দিতে হয়েছে৷  

জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও রাজ্য নির্বাচনগুলোতে প্রধান দুই দলকে চিন্তায় ফেলে দেয়ার মতো ফল করেছে এএফডি৷

এর মানে হচ্ছে, অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত এএফডির প্রতি ভোটারদের আগ্রহ বাড়ছে৷ এই অবস্থায় অনেক জার্মানের আলোচনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি উঠে আসছে৷ সেই সময় হিটলারের প্রতি জার্মানদের অন্ধ সমর্থনের পরিণতি কী হয়েছিল, তা নিয়ে কথা হচ্ছে৷

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পড়ে কি আপনার মনে হচ্ছে, কেন যে ব্লগটা পড়তে গেলাম? এসব কথাবার্তাতো নিউজেই পড়ি৷ ব্লগে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা না থাকলে সেটা আবার ব্লগ কীসের?

তাহলে শুনুন, আমার জার্মানিতে আসা প্রায় দশ বছর হয়ে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ এএফডির জন্মের আগে জার্মানিতে এসেছি৷ তখন বিদেশি হিসেবে সাধারণ জার্মানদের কাছ থেকে যেমন আচরণ পেয়েছি, এখন তার অভাব অনুভব করছি৷ আগে সকালবেলায় অপরিচিত জার্মানরাও হাসিমুখে ‘গ্যুটেন মর্গেন' বা শুভ সকাল বলতেন৷ এখন তেমনটা হয় না বললেই চলে৷ সুপারমার্কেটে গেলে অনেক ক্যাশিয়ারের আচরণেও অবাক হই৷ জার্মান কারও সঙ্গে কথা বলার পর যখন তাঁরা বিদেশি বা বাদামি রংয়ের কারও চেহারা দেখতে পান, সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মুখের অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন চলে আসে৷

এছাড়া প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়া ছেলের অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু জানতে পারছি৷ যেমন তার ক্লাসের এক জার্মান সহপাঠী নাকি একবার বাদামি কারও পাশে সে বসবে না, বলে মন্তব্য করেছিল৷

আরেকবার বাইরে থেকে নতুন আসা এক শিক্ষার্থী ঠিকমতো জার্মান বলতে না পারায় তারই একদল জার্মান সহপাঠী তাকে বলেছিল, ‘‘এই ছেলে, তুমি জার্মানিতে আছ, তোমাকে জার্মান বলতে হবে৷''

অনেক পাঠক হয়ত এই কথায় ঐ জার্মান ছেলেগুলোর কোনো দোষ দেখবেন না৷ কিন্তু যখন জানবেন, ঐ কথা বলার সময় তাদের কণ্ঠে শ্লেষের ছোঁয়া ছিল, তখন জানবেন, বিষয়টি চিন্তার৷ কারণ অল্পবয়সি এই শিশুদেরতো এখনই এভাবে ভাবার কথা নয়৷ নিশ্চয় তাদের পরিবারে বিষয়গুলো এভাবেই আলোচিত হয়ে থাকে, তাই তারাও এভাবে বেড়ে উঠছে৷

আর এএফডির জনপ্রিয়তা থেকে বোঝা যায়, এমন পরিবারের সংখ্যা কম নয়৷ এভাবে বর্তমান প্রজন্মের আচরণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও ঢুকে পড়ছে৷ সে কারণেই বিষয়টি চিন্তার হয়ে উঠছে৷

জার্মান সরকার এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে৷ প্রেসিডেন্ট, চ্যান্সেলরসহ অন্য রাজনীতিবিদরা জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ দেখা যাক, কী হয়৷

প্রিয় পাঠক, এবার লেখার শিরোনামে ফিরে যান৷ বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় জার্মান জাতির মনে জাতীয়তাবাদ জেগে ওঠায় কি ভালো হয়েছে, নাকি তাদের আগের মানসিক অবস্থাটাই ভালো ছিল, তা এবার নিজেই ভেবে দেখুন৷

জাহিদুল হকের  ব্লগ-পোস্টটি কেমন লাগলো জানান বন্ধুরা, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ