বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ‘দ্য বিটলস’-এর প্রতিষ্ঠাতা জন লেননের যাঁরা ভক্ত, তাঁদের নিশ্চয় ‘গড’ গানটার কথা মনে আছে৷ প্রায় ৪০ বছর আগের সেই গানের কথাগুলোই এখন নিশ্চয় কানে বাজছে স্পেনের কোচ ও খেলোয়াড়দের৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সংগীত ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেই ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার পর লেনন গেয়েছিলেন তাঁর অমর সেই গান – গড৷ গানের একটা কথা ছিল এরকম – ‘‘দ্য ড্রিম ইজ ওভার, হোয়াট আই ক্যান সে? দ্য ড্রিম ইজ ওভার, ইয়েসটারডে৷''
২০১০ সালের বিশ্বকাপ আর ২০০৮ এবং ২০১২ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে স্পেনের যে ফুটবলাররা তাঁরা এবার প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়৷ সুতরাং বিটলস ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সংগীতপ্রেমীদের স্বপ্ন ভাঙার যে সম্পর্ক, তার সঙ্গে, স্পেনের বিদায় ও ফুটবলপ্রেমীদের স্বপ্ন ভাঙাকে তো এক করাই যায়৷ তাই না?
বিদায় স্পেন
চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল স্পেন৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেয়েছে নেদারল্যান্ডস এবং ক্রোয়েশিয়া দারুণ খেলা উপহার দিয়েছে ক্যামেরুনের বিপক্ষে৷ বিশ্বকাপের সপ্তম দিনের কিছু হাইলাইট...৷
ছবি: Emmanuel Dunand/AFP/Getty Images
চ্যাম্পিয়নদের বিদায়
নেদারল্যান্ডসের কাছে ৫-১ গোলে হেরে দুঃস্বপ্নের পথে হাঁটা শুরু করেছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা৷ কিন্তু চিলির কাছে হারটা সেই দুঃস্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিল৷ চিলির কাছে ২-০ গোলে হেরে স্পেনকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে৷ প্রথম ম্যাচে হারের পরই অবশ্য রব উঠেছিল ‘টিকি-টাকার’ দিন শেষ!’
ছবি: Getty Images
বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট
সাবি আলন্সো, জেরার্ড পিকে-কে বসিয়ে রেখে খুব একটা কাজ হয়নি স্পেনের৷ ভিনসেন্তে দেল বস্কের নিস্ফল আক্রমণ, দুর্বল রক্ষণভাগ, লক্ষ্যহীন পাস – চিলির কাছে নাস্তানাবুদ না হয়ে উপায় কী! ৪৩ মিনিটে আলেক্সিস সানচেসের ফ্রি-কিক কাসিয়াস ‘ফিস্ট’ করে ফেরালেও তা এসে ঠেকে চার্লস আরানগিস পায়ে এবং গোল৷
ছবি: Reuters
কাসিয়াসের জন্য দুর্বিষহ একদিন
মারাকানা স্টেডিয়ামে স্পেনের সমর্থকরা স্প্যানিশ গোলরক্ষক ইকার কাসিয়াসকে তুলোধুনা করছিলেন৷ ২০ মিনিটে চার্লস আরানগিসের পাসে কাসিয়াসকে হতবুদ্ধি করে দারুণ এক গোলে চিলিকে এগিয়ে দেন এদুয়ার্দো ভার্গাস৷
ছবি: Reuters
আকাশে উড়ছে চিলি
স্পেনের প্রতিরক্ষাভাগ আসলেই দুর্বল ছিল – এটা মেনে নিতেই হবে, কিন্তু চিলির আক্রমণের কথা না বললেই নয়৷ দুর্দান্ত আক্রমণের কারণেই এই জয় তাদের৷ স্পেন লক্ষ্যে শট নিয়েছে নয়টি৷ তবে সেগুলো চিলিয়ান গোলরক্ষককে খুব একটা বিব্রত করতে পারেনি৷ অথচ চিলির চারটি শটের দুটিই জড়িয়েছে জালে৷
ছবি: Reuters
এখন কী হবে?
স্পেনের এই তারকা দলের ভবিষ্যত কী? ২০০৬ সালের অক্টোবরের পর আজ পর্যন্ত টানা দুই ম্যাচে কখনোই হারেনি স্পেন৷ এই আট বছর তাদের জয় করা হয়ে গেছে সম্ভব-অসম্ভব সবকিছুই৷ এবারের বিশ্বকাপের হট ‘ফেবারিট’ হিসেবে কখনোই তাদের নাম বাদ দেওয়া যায়নি৷ অথচ, তারাই নাকাল হলো আসল লড়াইয়ে এসে!
ছবি: Reuters
রাজকীয় দর্শক
স্পেন-চিলি ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডস খেলেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে৷ আর সেই খেলা দেখতে উপস্থিত ছিলেন খোদ রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার এবং রানী মাক্সিমা৷ এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলেছিল স্পেন এবং সেই ম্যাচ তারা হেরেছিল ৫-১ গোলে৷
ছবি: Reuters
ডাচরা যে কারণে এগিয়ে
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ২০ মিনিটেই নেদারল্যান্ডস ‘লিড’ নিয়ে নেয়৷ দলকে এগিয়ে দেয় আরিয়েন রবেন৷ ৩-২ গোলের জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল গতবারের রানার্সআপদের৷ এবারের বিশ্বকাপে আরিয়েন রবেন এবং রবিন ফান প্যার্সি উভয়ের ঝুলিতে তিনটি করে গোল৷
ছবি: Getty Images
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
একটির পর অন্য একটি গোল করা যেন তাঁদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ নেদারল্যান্ডসের ক্যাপ্টেন রবিন ফান প্যার্সি এর আগে এমনটাই দেখিয়েছিলেন স্পেনের বিপক্ষে৷ তাঁর সতীর্থ আরিয়েন রবেনও এই ম্যাচে জোড়া গোল করলেন৷
ছবি: Reuters
ক্যামেরনকে ক্রোয়েশিয়ার অঙ্গুলি প্রদর্শন
নিষিদ্ধ থাকার কারণে ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামতে পারেননি তিনি৷ তাই বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার মারিও মানসুকিচ ক্যামেরুনের বিপক্ষে নেমেই ঝাপিয়ে পড়েছিলেন ক্ষুধার্ত বাঘের মতো! ক্যামেরুনের আলগা রক্ষণভাগের সুযোগে করলেন জোড়া গোল! দল জিতল ৪-০ ব্যবধানে৷
ছবি: Getty Images
মেক্সিকোর মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া
এই জয়ে ক্রোয়েশিয়া গ্রুপ এ-তে তিনটি পয়েন্ট পেয়েছে৷ অর্থাৎ ব্রাজিলের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম৷ এর ফলে তারা মুখোমুখি হবে মেক্সিকোর, যারা এরই মধ্যে পেয়ে গেছে চার পয়েন্ট৷ এর আগে মেক্সিকো হারিয়েছিল ক্যামেরুনকে৷
ছবি: Emmanuel Dunand/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
তবে ফুটবল ভক্তরা বোধ হয় একটু আশান্বিত হতে পারেন এটা জেনে যে, স্পেনে বেড়ে উঠছে একদল তরুণ ফুটবলার যাঁরা আবারও স্পেনকে হয়ত অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবেন৷ যেমন গোলরক্ষক হিসাবে ইকার কাসিয়াসের স্থান নিতে তৈরি ডাভিড ডে খেয়া৷ এছাড়া সাবির মতো খেলা সামর্থ্য আছে কোকে কিংবা টিয়াগো আলকানতারার৷
এদিকে, স্ট্রাইকার হিসেবে ২৫ বছর বয়সি দিয়েগো কস্তা বিশ্বকাপে কিছু করে দেখাতে না পারলেও ভবিষ্যতে যে তাঁর জ্বলে ওঠার সামর্থ্য আছে সেটা মনে করছেন অনেকেই৷ এছাড়া কস্তার মতো মানেরই আরও দু'জন হলেন ফার্নান্ডো লোরেন্তো এবং আলভারো নেগ্রেডো৷ রয়েছেন আলভারো মোরাতা ও খেসের মতো ফুটবলারও৷ মিডফিল্ডে প্রয়োজনে ফুঁসে ওঠার ক্ষমতা রাখেন সার্জিও বুস্কেটস, আর ফরোয়ার্ডে হুয়ান মাতা ও পেদ্রো৷
এতসব তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কে থাকবেন কিনা, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়৷ বস্কে নিজেও এখনো সেটা ভেবে দেখেননি৷ তবে স্পেনের শীর্ষ ক্রীড়া দৈনিক ‘মার্কা' মনে করছে বস্কে হয়ত থেকেই যাবেন৷ সেক্ষেত্রে তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য হবে ২০১৬ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, যার বাছাই পর্ব শুরু হবে সেপ্টেম্বরে৷ সেখানে স্পেনের প্রথম প্রতিপক্ষ মেসিডোনিয়া৷