বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটিতে বসছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর৷ এই বিশ্বকাপ নিয়ে যেমন আগ্রহ রয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে, তেমনি রয়েছে ফুটবল ভক্তদের৷ দর্শকদের বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে এই তথ্যগুলি জেনে রাখা ভালো৷
বিজ্ঞাপন
এক দেশ, দুই মহাদেশ
দেশ একটি হলেও এই প্রথম দুই মহাদেশে একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ- ইউরোপ ও এশিয়ায়৷ আসলে রাশিয়া দেশটিই আছে দুই মহাদেশ জুড়ে৷ এখানে সময়অঞ্চল বা টাইমজোন আছে ১১টি! তবে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে চারটি টাইমজোনে৷ বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অর্থাৎ কালিনিনগ্রাদ ও সবচেয়ে পশ্চিমে ইয়েকাত্যারিমবুর্কের দূরত্ব, আর মস্কো থেকে লন্ডনের দূরত্ব সমান, প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার!
বিতর্কিত আয়োজক
রাশিয়ায় বিশ্বকাপ হবে তা নির্ধারিত হয়েছে বহু আগেই৷ কিন্তু গেলো এক বছর ধরে সেখানে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে নানা বিতর্ক চরমে পৌঁছেছিল৷ বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ এমন চরমে পৌঁছে যে, ব্রিটিশ কোনো কোনো রাজনীতিক তো দাবিই জানিয়ে ফেলেছিলেন যে, তাদের দলকে যেন রাশিয়ায় না পাঠানো হোক৷ তবে সব ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ‘নির্বিঘ্নেই' অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়৷ কিন্তু কোনো ইংলিশ রেফারি থাকছেন না এবারের বিশ্বকাপে৷
কুকুর মারা
বিশ্বকাপ: শিল্পীর তুলিতে ইতিহাস
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-র চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, চূড়ান্ত দলে নেই লেরয় জানে৷ তবে বিশ্বকাপে এটাই প্রথম বিস্ময় নয়৷ কার্টুনিস্ট জার্মান আচ্যেল ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন আরো কিছু বিস্ময়ের কথা৷
ছবি: Aczel / Edel Books
১৯৩০: কোনো এক সময়...
প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে, উরুগুয়েতে৷ সেসময় মূলত উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার দলগুলো বিশ্বকাপে অংশ নেয়৷ ইউরোপ থেকে স্টিমশিপে চেপে সেই বিশ্বকাপে অংশ নিতে যায় চারটি দল৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে স্বাগতিক উরুগুয়ে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৫৪: বার্ন-এ চমক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডে৷ সেবার প্রস্তুতি পর্বে হাঙ্গেরির কাছে ৮-৩ গোলে হারে জার্মানি৷ কিন্তু ফাইনালে ইতিহাস রচনা করে জার্মানরা৷ হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে দেশটি৷ কার্টুনে জার্মান দলের ফ্রিৎস ভাল্টার (বামে) এবং প্রশিক্ষক সেপ হ্যার্বারগারকে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের কাঁধের উপর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৬৬: প্রথম এবং একমাত্র
যদিও ফুটবলের জন্মস্থান মনে করা হয় ইংল্যান্ডকে, তা সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বকাপ জিতেছে মাত্র একবার - ১৯৬৬ সালে৷ সেবার নিজেদের মাটিতে জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারায় ইংলিশরা৷ খেলার ১০১ মিনিটে, অর্থাৎ অতিরিক্ত সময়ে করা এক গোল, যেটি ‘ওয়েম্বলি গোল’ হিসেবে পরিচিত, নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে৷ কার্টুনে ববি মুরকে বিশ্বকাপ হাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৭০: পেলের জন্য ‘থ্রি চিয়ার্স’
সেবছর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল৷ বিংশ শতাব্দির অন্যতম ফুটবল তারকা পেলের নেতৃত্বে ফাইনালে ৪-১ গোলে ইটালিকে হারায় ব্রাজিল৷ রঙিন টিভিতে প্রচার হওয়া প্রথম বিশ্বকাপ সেটি৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৭৪: বেকেনবাওয়ার বনাম ক্রুইফ
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপে বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল৷ জার্মানির তখনকার সেরা খেলোয়াড় ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ারের সঙ্গে তাঁর মতোই জনপ্রিয় নেদারল্যান্ডসের ইয়োহান ক্রুইফের লড়াই দেখতে উন্মুখ ছিলেন অনেকে৷ সেবার পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে খেলেছিল পূর্ব জার্মানি৷ ফাইনালে ২-১ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারায় জার্মানি৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৮৬: ঈশ্বরের হাত
সেবার ফুটবল তারকা দিয়েগো মারাদোনার দিকে নজর ছিল সবার৷ তাঁর কল্যাণে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছে বটে, কিন্তু তাঁর করা একটি গোল নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে৷ ‘ঈশ্বরের হাত’ খ্যাত সেই গোলটি মারাদোনা হাত দিয়ে করেছিলেন বলেই দাবি অনেকের৷ তবে সেবার পাঁচ ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে মারাদোনার করা আরেক গোল ‘শতাব্দির সেরা গোল’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
১৯৯০: থুথু হামলা
ইটালিতে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে জার্মানি৷ সেবার এক ম্যাচে জার্মানির রুডি ভ্যলারের গায়ে থুথু দিয়েছিলেন ডাচ খেলোয়াড় ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড৷ সেই ঘটনার পর দুই খেলোয়াড় ধস্তাধস্তি শুরু করলে দু’জনকেই মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০০৬: ক্ষিপ্ত জিদান
সেবারের বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো আলোচনা হয় জিনেদিন জিদানের এক আচরণের কারণে৷ জার্মানিতে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ফ্রান্সকে হারায় ইটালি৷ তবে ফাইনালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল যখন ইটালির মার্কো মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে ঢুস দিয়ে ফেলে দেন জিদান৷ সেই ঘটনায় জিদানের উজ্জ্বল ফুটবল কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘটে৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০১০: টিকি-টাকার জয়
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিপক্ষকে কাবু করতে টিকি-টাকা স্টাইল ব্যবহার করে স্পেন৷ এই স্টাইলের মাধ্যমে নিজের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পাস দিয়ে প্রতিপক্ষকে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত করেছে স্প্যানিশরা৷ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে তারা৷
ছবি: Aczel/Edel Books
২০১৪: ড্রিবলিংয়ের রাজা
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপের তারকা ছিলেন লিওনেল মেসি৷ তাঁর কল্যাণে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিল বটে, তবে ফাইনালে হেরেছে জার্মানির কাছে৷
ছবি: Aczel / Edel Books
২০১৪: চার-তারকা দল
রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে হাজির ছিল ৭৫,০০০ দর্শক৷ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে হারায় জার্মানি৷ সেটা ছিল দক্ষিণ অ্যামেরিকার মাটিতে ইউরোপের কোনো দলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়৷
ছবি: Aczel / Edel Books
২০১৮: বিতর্কিত কাপ
চলতি বছর বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ রাশিয়া৷ দেশটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন দুর্নীতিতে জর্জরিত ফিফা’র এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত৷ ইতোমধ্যে ফ্যান-আইডির মাধ্যমে অগুনতি ফুটবল সমর্থকের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷ এমনকি জার্মানির সরকারি কর্মকর্তাদের যারা খেলা দেখতে যাচ্ছেন, তাঁদের স্মার্টফোন থেকে যাতে রাশিয়া তথ্য চুরি করতে না পারে, সেজন্য সেসব ফোন দেশে রেখে যেতে বলেছে জার্মানি৷
ছবি: Aczel / Edel Books
ফুটবল ইতিহাস নিয়ে কমিক
বিশ্বকাপ ১৯৩০-২০১৮ শীর্ষক কমিক বইতে বিশ্বকাপের বিভিন্ন স্মরণীয় ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ কমিক বইটির প্রচ্ছদে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, মানুয়েল নয়্যার, লিওনেল মেসি এবং নেইমারসহ কয়েকজন তারকাকে শিল্পীর তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Aczel / Edel Books
যার হাতে তুলি
কমিক বইটির জন্য কার্টুন এঁকেছেন আর্জেন্টিনার শিল্পী জার্মান আচ্যেল৷ তিনি কেরিয়ার শুরু হয়েছিল বুয়েনেস আইরেসে৷ সেখানে এল গ্রাফিকো স্পোর্টস ম্যাগাজিনে কাজ করতেন৷ পরবর্তীতে ২৬ বছর বয়সি এই কার্টুনিস্ট জার্মানিতে চলে আসেন এবং বর্তমানে মিউনিখে বসবাস করছেন ও ব্রিটিশ সকার ম্যাগাজিন ফোরফোরটু’তে কাজ করছেন৷
ছবি: Aczel/Edel Books
14 ছবি1 | 14
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অংশ হিসেবে কোটি কোটি ডলার খরচ করে এগারটি আয়োজক শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মনিবহীন কুকুরদের মেরে ফেলেছে রাশিয়া৷ রেডিও ফ্রি ইউরোপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিটি কুকুরের মৃতদেহের জন্য প্রায় দশ থেকে বারো হাজার টাকা খরচ করেছে তারা৷ এখন অন্য কোনো শহরের কুকুর এসব শহরে না ঢুকে পড়লেই হয়!
কত টাকা খরচ হবে?
এবারের বিশ্বকাপ আয়োজনে রাশিয়ার খরচ হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা৷ তবে গেলোবার ব্রাজিল এর চেয়েও বেশি খরচ করেছিল৷ কিন্তু বিশ্বকাপের খরচ প্রায়ই বাজেট অতিক্রম করে৷ তাই দেখা যাক, রাশিয়া তাদের হিসেবের মধ্যে খরচ রাখতে পারে কিনা৷ এদিকে, স্পন্সরদের কাছ থেকে ও স্বত্ত্ব বিক্রি করে খুব ব্যবসা হবে বলে মনে করছে না পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো৷
স্বেচ্ছাসেবী
এবারের বিশ্বকাপে প্রায় ১৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন৷ ব্রাজিলে ছিল ১৫ হাজার৷ প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার আবেদন থেকে এদের বাছাই করা হয়েছে, যার মধ্যে আবার ৬৪ ভাগ নারী৷ স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে তেলের ট্যাঙ্কারের ক্যাপ্টেন যেমন আছেন, তেমনি আছেন ড্রাগন বোট রেসের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন৷ এমনকি একজন নিউজিল্যান্ড থেকে ১৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিতে আসছেন৷
কত মানুষ আসবেন রাশিয়ায়?
ধারণা করা হচ্ছে, খেলা দেখতেই আসবেন প্রায় দশ লাখ ফুটবল ফ্যান৷ রাশিয়া এসব ভক্তদের জন্য ভিসা হিসেবে বিশেষ আইডি ইস্যু করেছে৷ এছাড়া, গত বিশ্বকাপ টিভিতে, অনলাইনে বা মাঠে দেখেছেন সারাবিশ্বের প্রায় ৩.২ বিলিয়ন মানুষ৷ অর্থাৎ এই গ্রহের প্রায় অর্ধেক মানুষ৷ এবারো তেমনটিই আশা করা হচ্ছে৷
রাশিয়ায় রাশিয়ার বিশ্বকাপ
বিশ্ব .ব্যাংকিংয়ে রাশিয়ার অবস্থান এখন ৬৬৷ এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন৷ ইউএসএসআর থেকে রাশিয়া হবার পর এ পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপেই তারা গ্রুপ পর্ব উৎরাতে পারেনি৷ এবার স্বাগতিকের সুযোগ নিয়ে যদি কিছুটা এগোতে পারে৷ এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে নিম্ন .ব্যাংকিংয়ের ম্যাচ৷ রাশিয়া খেলবে সৌদি আরবের (.ব্যাংকিং ৬৩) বিপক্ষে৷
প্রথম বিশ্বকাপ ও ইটালি
আইসল্যান্ড ও পানামার জন্য এটি প্রথম বিশ্বকাপ৷ এছাড়া পেরু ফিরছে ১৯৮২ সালের পর৷ এবারের দলগুলোর মধ্যে এতটা ব্যবধানে আর কেউ ফেরেনি৷ এদিকে, ইটালি ১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম খেলছে না বিশ্বকাপ৷ আগের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে তারাই একমাত্র বাদ পড়েছে৷ আইসল্যান্ড নিয়ে আরেকটি মজার তথ্য হলো, তারাই জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ, যারা বিশ্বকাপ খেলছে৷ জনসংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৩৪ হাজার৷
ব্রাজিল ও জার্মানির সম্ভাবনা
ব্রাজিলই একমাত্র দল যে সবগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে৷ আর সর্বোচ্চ ৫টি শিরোপা জিতেছে৷ জার্মানির শিরোপা ৪টি৷ তাদের সামনে পরপর দু'বার বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ডের হাতছানি৷ এর আগে ইটালি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ এবং ব্রাজিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে এই কীর্তি গড়েছিল৷ জার্মানি গত তিন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা দল (২০১৪ সালে ১৮টি, ২০১০ সালে ১৬টি ও ২০০৬ সালে ১৪টি)৷ তবে শেষ দুই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল৷ তাই ‘সতর্ক হও জার্মানি'৷
গোল গোল গোল!
উত্তেজনার সেই মুহূর্তগুলো
মনে আছে রবার্তো বাজ্জোর সেই ফ্রি-কিকের কথা? মনে পড়ে, ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই কালজয়ী ফাইনাল? এমন টানটান উত্তেজনা ইতিহাসে বিরল৷ চলুন ঘুরে আসি ১৯৩০ থেকে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের মাঠ থেকে৷
ছবি: imago sportfotodienst
১৯৩০
প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল৷ উরুগুয়ের মন্টিভিডিওতে স্বাগতিকরা মুখোমুখি আর্জেন্টিনার৷ ছবিটি আর্জেন্টাইনদের জালে উরুগুয়ের প্রথম বল ফেলার মুহূর্তের৷ আর্জেন্টিনাকে সেবার ২-৪ ব্যবধানে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামায় ১৯৪২ ও ১৯৪৬ এর বিশ্বকাপ দু’টি অনুষ্ঠিত হয়নি৷ এই আসর বসেছিল ব্রাজিলে৷ একমাত্র এই বিশ্বকাপেই কোনো ফাইনাল হয়নি৷ ১৩টি দলের অংশগ্রহণ থেকে শেষে শীর্ষস্থান নির্ধারণী ম্যাচে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে উরুগুয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ASSOCIATED PRESS
১৯৫৪
হেলমুট রানের পশ্চিম জার্মানিকে উল্লাসই মানায়৷ জমজমাট এক ফাইনালে ৩-২ গোলে তারা হাঙ্গেরিকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা ঘরে তোলে৷ সুইজারল্যান্ডের বার্নে হয়েছিল এই ফাইনাল ম্যাচটি৷
ছবি: AP
১৯৫৮
এই বিশ্বকাপে সারাবিশ্ব এক সদ্য কৈশোর পেরুনো তরুণকে দেখেছিল৷ নাম তার পেলে৷ ছবিটি স্বাগতিক সুইডেনকে ফাইনালে ৫-২ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের প্রথম শিরোপা জেতার মুহূর্তে তোলা৷ পেলে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে গোলরক্ষক গিলমার দস সান্তোসের কাঁধে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
১৯৬২
পেলে অধ্যায় শুরু হয়েছে আগের বিশ্বকাপের আগেই৷ এ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচেই চেকদের বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন পেলে৷ কিন্তু গারিঞ্চাসহ দলের অন্য সদস্যরা দলকে টেনে নিয়ে যান ফাইনালে৷ সেখানে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জেতে তারা৷
ছবি: AP
১৯৬৬
ইংল্যান্ড একবারই বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছে৷ সেটিও ১৯৬৬ সালে৷ ছবিতে তৎকালীন অধিনায়ক ববি মুরকে জুলে রিমে ট্রফিতে চুমু খেতে দেখা যাচ্ছে৷ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানিকে হারায় ইংলিশরা৷
ছবি: Getty Images
১৯৭০
আবারো ব্রাজিল৷ আবারো জুলে রিমে ট্রফি৷ ইটালিকে ফাইনালে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেন পেলে, কার্লোস আলবার্তোরা৷ তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে ট্রফিকে চিরদিনের জন্য নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/G. Foggia
১৯৭৪
ফাইনালে হল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় পশ্চিম জার্মানি৷ ছবিতে বেকেনবাওয়ারকে দেখা যাচ্ছে ট্রফি হাতে৷
এই বিশ্বকাপেই তরুণ মারাদোনা পা রাখেন বিশ্বকাপে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ড পার হতে পারেনি তাঁর দল৷ পশ্চিম জার্মানিকে ফাইনালে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেবার শিরোপা জেতে ইটালিয়ানরা৷
ছবি: dapd
১৯৮৬
এই বিশ্বকাপেই জাদু দেখিয়েছেন ফুটবলের জাদুকর মারাদোনা৷ নিজে গোল করেছেন৷ গোল করিয়েছেনও৷ ইতিহাসের সেরা দু’টি গোল, একটি ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে গোল ও আরেকটি মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের বেশ ক’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, করেছেন এই বিশ্বকাপে৷ ফাইনালে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয়৷
ছবি: imago sportfotodienst
১৯৯০
এই বিশ্বকাপের ফাইনালেও আর্জেন্টিনা মুখোমুখি পশ্চিম জার্মানির৷ মারাদোনার দল ১-০ গোলে হেরে যায় লোথার ম্যাথিউস-ক্লিন্সমানদের জার্মানির কাছে৷ তবে রেফারিং, ফাউল ও খেলোয়াড়দের অসহিষ্ণুতার কারণে এটি সবচেয়ে কুৎসিত বিশ্বকাপ ফাইনালের তকমা পেয়েছে৷
ছবি: STAFF/AFP/Getty Images
১৯৯৪
এই বিশ্বকাপের ফাইনালটিই বোধ হয় এ যাবৎ সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল৷ নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পর ব্রাজিল ও ইটালির ম্যাচটি গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে৷ সেখানে প্রথম চারটির তিনটিই প্রতিপক্ষের জালে ফেলে ব্রাজিল৷ আর ইটালি দু’টি৷ পঞ্চম কিকটি ছিল ইটালিয়ান তারকা বাজ্জোর৷ কিন্তু তিনি উত্তেজনাতেই কি না গোলবারের ওপর দিয়ে বল মারেন৷ ফলে চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে ব্রাজিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৯৮
স্বাগতিক ফ্রান্স ও জিনেদিন জিদানের বিশ্বকাপ এটি৷ জিদানের জাদুতে বিশ্বকাপ জেতে ফ্রেঞ্চরা৷ ফাইনালে রোনাল্ডো, রিভাল্ডো, কার্লোস, ডুঙ্গাদের মতো তারকা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারায় জিদানের ফ্রান্স৷ জিদান নিজেই করেন দুই গোল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Euler
২০০২
কোরিয়া ও জাপানে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপের ফাইনালে রোনাল্ডোর জোড়া গোলে পঞ্চম শিরোপা জিতে ব্রাজিল৷ ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/ASA
২০০৬
এই বিশ্বকাপেও জিদানের ফ্রান্স ফাইনাল খেলে৷ কিন্তু এই ফাইনালটিও কুৎসিত হয় জিদানেরই কারণে৷ প্রতিপক্ষ ইটালির ডিফেন্ডার মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে লালকার্ড দেখেন তিনি৷ তার আগেই এই দু’জনই নিজ নিজ দলের পক্ষে একটি করে গোল করেন৷ পরে খেলা অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায়৷ সেখানে ৫-৩ গোলে হারে ফ্রান্স৷
ছবি: John MacDougall/AFP/Getty Images
২০১০
দক্ষিণ আফ্রিকায় শাকিরার তুমুল জনপ্রিয় ‘ওয়াকা ওয়াকা’ থিম সংয়ের এই বিশ্বকাপে টিকি টাকা ফুটবল খেলে পুরো আসর মাতিয়েছে স্পেন৷ জোহানেসবার্গের ফাইনালে ডাচদের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময় শেষের চার মিনিট আগে গোল করে স্পেনের শিরোপা নিশ্চিত করেন তারকা মিডফিল্ডার ইনিয়েস্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪
গত বিশ্বকাপে মেসির দিকেই চোখ ছিল সবার৷ কিন্তু মেসি আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দিতে পারেননি৷ সেই দুঃখে তো দেশের পক্ষে খেলাই ছেড়ে দেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি৷ সে যাই হোক, পরে ফিরে এসেছেন৷ জার্মানি তাদের চতুর্থ শিরোপাটি ঘরে তোলে এ বছর৷ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গ্যোৎসের করা গোলে জয় নিশ্চিত করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
20 ছবি1 | 20
রাশিয়ার ওলেগ সালেঙ্কো ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১৯৯৪ সালে ৫ গোল করে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেছিলেন৷ সে রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেননি৷ এদিকে, জার্মানির টোমাস ম্যুলার এখনকার খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ তাঁর গোল সংখ্যা ১০টি৷ অগ্রজ মিরোস্লাভ ক্লোসের ১৬ গোলের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ এবার তাঁর সামনে৷
উদীয়মান এশিয়া
দক্ষিণ কোরিয়া এবার খেলবে তাদের দশম বিশ্বকাপ৷ আর কোনো এশিয়ান দল এতবার বিশ্বকাপ খেলেনি৷ ইরান এই প্রথম পরপর দু'বার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে৷
ইটস টাইম ফর আফ্রিকা
২০১৮ সালে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেবে নাইজেরিয়া৷ সুপার ঈগলরা ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর পর মহাদেশটি থেকে তাদের মতো এতটা নিয়মিত আর কেউ হতে পারেনি৷
বিশ্বকাপের নতুন নিয়ম
ম্যাচে কোনো জাতিগত বৈষম্যমূলক আচরণ দেখলে তা বাতিল বা বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে রেফারিকে৷ এই প্রথম ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিজ বা ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে৷ বিতর্ক এড়াতে এই ব্যবস্থা৷ তবে বিতর্ক না থাকলে বিশ্বকাপ জমে? এছাড়া, চতুর্থ বদলি খেলোয়াড় নামতে পারবেন অতিরিক্ত সময়ে৷
প্রাইজমানি
বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ৩.৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ ফাইনালে হেরে গেলেও মন খারাপ করার কিছু নেই৷ তারা পাবে ২.৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারলেই মিলবে ৮০ লাখ মার্কিন ডলার৷ সবমিলিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রাইজমানি বাড়ছে ১২ ভাগ৷
ওদের শেষ বিশ্বকাপ
৩০ বছর বয়সি লিওনেল মেসি ও ৩৩ বছর বয়সি ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর এটি সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ৷ এছাড়া সুয়ারেজ (৩১), ইনিয়েস্তা (৩৩), থিয়াগো সিলভা (৩৩), দানি আলভেস (৩৪)-সহ বেশ ক'জন নামি ফুটবলারেরও সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ৷ তাই যতটা সম্ভব উপভোগ করে নিন৷
কোচ সমাচার
উরুগুয়ের হেড কোচ অস্কার তাবারেজ এ নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপে দলের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, যা অংশ নেয়া যে কোনো দলের কোচের মধ্যে সর্বোচ্চ৷ আরেকটি খবর হলো, দেশি কোচের অধীনেই এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে দলগুলো৷ তাই ‘ভরসা রাখুন দেশিদের ওপর'৷
কিম কার্দাশিয়ান বনাম বিশ্বকাপ
২০০৪ সাল থেকে গুগল ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যত মানুষের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ ঠিক তত মানুষের আগ্রহ কিম কার্দাশিয়ান সম্পর্কে! তার মানে কিম কার্দাশিয়ান কোনোভাবেই বিশ্বকাপের চেয়ে কম নন৷ অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, যারা বিশ্বকাপ দেখেন, তারা অত টুইট করার সময় পান না৷ তাই এমনটি মনে হচ্ছে৷
বিশ্বকাপ জনসংখ্যা বাড়ায়!
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নয় মাস পর সেখানকার জন্মহার বেড়ে গিয়েছিল৷ তেমনি ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপের পরও দেশটির কোথাও কোথাও ৩০ ভাগ পর্যন্ত শিশু জন্মের হার বেড়ে যায়৷ তাই যেই জিতুক, ২০১৯ সালের এপ্রিল নাগাদ অনেক নতুন শিশুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকুন৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’
ছবি: Noman Mohammad
20 ছবি1 | 20
পাঠক, বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার আশা আকাঙ্খার কথা লিখুন নীচের ঘরে৷