বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায় থেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে জার্মানি বাদ পড়ে যাওয়ার পর এখনও দলটির ভক্তরা দ্বিধায় সময় পার করছেন৷ বিশ্বকাপ চলাকালীন যাঁরা দলের খেলা দেখবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন, তাঁরা এখন কী করছেন?
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফুটবল ইতিহাসের এক বড় ধাক্কা এবারের বিশ্বকাপ৷ ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম দলটি ছিটকে গেছে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে৷ অথচ গতবারই কাপ জিতে চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নিয়েছিল দলটি৷ এমন একটি দলের এত দ্রুত বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া তাই ফুটবল ভক্তদের কাছে এক বড় বিস্ময়৷
তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারের বেদনা এখন অনেকটাই লাঘব হয়েছে জার্মান ফ্যানদের৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিশ্বকাপের সময় পার করা নিয়ে৷ আজ থেকে শুরু হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল, যেখানে নেই জার্মানি৷ এসব খেলা দেখতে কি বিয়ার হাতে টিভির সামনে বসবেন তাঁরা, নাকি করবেন অন্য কিছু?
জার্মানির কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের উত্থান-পতন
ইওয়াখিম ল্যোভ প্রায় ১২ বছর ধরে জার্মান ফুটবল দলের কোচ৷ ৮০ বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে জার্মানি বিদায় নিলেও কোচ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/A. Hassenstein
সময় ফুরায়নি
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে লজ্জাজনকভাবে জার্মানির বেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন কোচ হিসেবে ইওয়াখিম ল্যোভের সময় হয়ত ফুরিয়ে এসেছে৷ যদিও তাঁর চুক্তির মেয়াদ আছে ২০২২ সাল পর্যন্ত৷ মঙ্গলবার জানা গেছে, তিনি কোচ হিসেবে থেকে যাচ্ছেন৷ জার্মান ফুটবল ফেডারেশন, ডিএফবি তাঁর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/A. Hassenstein
খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড
খুব উল্লেখযোগ্য নয়৷ স্টুটগার্ট, ফ্রাংকফুর্ট ও কার্লসরুয়ের স্ট্রাইকার হয়ে বুন্ডেসলিগায় মাত্র ৫২টি ম্যাচ খেলেছেন৷ গোল করেছেন সাতটি৷ ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তৎকালীন দ্বিতীয় বিভাগের দল ফ্রাইবুর্গের হয়ে খেলেছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
কোচ হিসেবে শুরু
সুইজারল্যান্ডের ক্লাব এফসি ভিন্টারটুর-এর হয়ে খেলার সময় ১৯৯৪ সালে ল্যোভ ঐ ক্লাবের যুব দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব নেন৷ পরের বছর বুন্ডেসলিগা ক্লাব স্টুটগার্টের সহকারী কোচ হন তিনি৷ পরের বছরই হেড কোচের দায়িত্ব পান ল্যোভ৷ ছবিতে তাঁকে টোমাস শ্নাইডারের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, যিনি পরবর্তীতে জার্মান জাতীয় দলে ল্যোভের সহকারী হয়েছেন৷
ছবি: imago sportfotodienst
তুরস্ক যাত্রা
১৯৯৭ সালে স্টুটগার্টের হয়ে জার্মান কাপ জিতলেও পরের বছর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ক্লাব ফ্যানাবাটশেতে চলে যান ল্যোভ৷ তাঁর নেতৃত্বে ক্লাবটি লিগে তৃতীয় হয়েছিল৷ সেখানে তিনি ছিলেন এক বছর৷
ছবি: Imago
বরখাস্ত
ফ্যানাবাটশের পর কার্লসরুয়ে, আডানাস্পোর ও ইন্সব্রুকে কোচ ছিলেন ল্যোভ৷ ২০০৩ সালে অস্ট্রিয়া ভিয়েনা ক্লাবের দায়িত্ব নেন৷ তাঁর অধীনে ক্লাব লিগের প্রথম স্থানে থাকাকালীন ল্যোভকে বরখাস্ত করা হয়৷ পরে তাঁর অনুপস্থিতিতে ভিয়েনা ক্লাব দ্বিতীয় হয়ে লিগ শেষ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্লিন্সমানের সঙ্গী
রুডি ফ্যোলার জার্মানির দায়িত্ব ছাড়ার পর কোচ হয়েছিলেন জার্মানির আরেক সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান৷ সেই সময় ক্লিন্সমান নিজের সহকারী হিসেবে ল্যোভকে বেছে নিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Hannibal
২০০৬ বিশ্বকাপ
নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয় জার্মানি৷ সেমিফাইনালে ইটালির কাছে হেরে যায় তারা৷ পরে ইটালি সেই বিশ্বকাপ জিতেছিল৷ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় সরে দাঁড়ান ক্লিন্সমান৷ সেই সময় হেড কোচের দায়িত্ব পান ল্যোভ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইউরোর ফাইনালে পরাজয়
জার্মানির কোচ হিসেবে ল্যোভের প্রথম বড় টুর্নামেন্ট ছিল ইউরো ২০০৮৷ সেটির ফাইনালে উঠলেও স্পেনের কাছে হেরে যায় জার্মানি৷
ছবি: Sven Simon/picture-alliance
প্রথম বিশ্বকাপ
২০১০ সালের বিশ্বকাপের জন্য তরুণ দল নির্বাচন করেছিলেন ল্যোভ৷ তারাই দ্বিতীয় রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে ৪-১ আর কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনাকে ৪-০ গোলে পরাস্ত করে৷ কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়ে অভিজ্ঞ স্পেনের কাছে হেরে যায়৷
ছবি: Stephane de Sakutin/AFP/Getty Images
ইউরো ২০১২
গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জিতে শুরু করেছিল জার্মানি৷ এরপর কোয়ার্টারে গ্রিসকে ৪-২ গোলে হারায়৷ কিন্তু সেমিফাইনালে ইটালির কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় ল্যোভের দল৷
ছবি: Jens Wolf/dpa/picture-alliance
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
২০১৪ সালে ব্রাজিলে গিয়ে স্বপ্ন পূরণ হয় ইওয়াখিম ল্যোভের৷ তবে পথটা মসৃণ ছিল না৷ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ঘানার সঙ্গে কোনোরকম ড্র করে জার্মানি৷ এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে আলজেরিয়াকে হারাতে অতিরিক্ত সময়ের সহায়তা নিতে হয়৷ কোয়ার্টারে ফ্রান্সকে কোনোমতে ১-০ গোলে হারানোর পর অবশ্য সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলের লজ্জায় ফেলে দেয় ল্যোভ বাহিনী৷ এরপর ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সেরা হয় জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Gebert
ইউরো ২০১৬
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ফ্রান্সে আয়োজিত ইউরোর ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়৷ সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় তারা৷ গোল দুটি করেন গ্রিজমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Weiken
কনফেডারেশনস কাপ
২০১৭ সালে ল্যোভের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো কনফেডারেশনস কাপ জেতে জার্মানি৷ একেবারে তরুণ দল বেছে নিয়েছিলেন তিনি৷ ফাইনালে পূর্ণ শক্তির চিলিকে ১-০ গোলে হারায় জার্মানি৷ সেই সময় জার্মানির ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/M.Meissner
কিন্তু...
তরুণ দল নিয়ে কনফেডারেশনস কাপ জেতায় পূর্ণ শক্তির জার্মানির কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি৷ বিশ্বব্যাপী অনেক ফুটবল বিশ্লেষকও জার্মানিই আবার বিশ্বসেরা হতে যাচ্ছে বলে ধরে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু গ্রুপ পর্বে এক জয় আর দুই পরাজয় নিয়ে একেবারে শেষ স্থান নিয়ে দেশে ফেরে ল্যোভের দল৷
ছবি: picture-alliance/S.Matzke
14 ছবি1 | 14
জার্মানির রাইনিশে পোস্ট পত্রিকা পাঁচ হাজারের বেশি জার্মান ফুটবল ভক্তের কাছে জানতে চেয়েছিল তাদের পরিকল্পনার কথা৷ জরিপে অংশ নেয়াদের ৪২ শতাংশ জানিয়েছেন, জার্মানি বাদ পড়া সত্ত্বেও বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলো দেখবেন তাঁরা৷ বিশ শতাংশের মতো জানিয়েছেন, বাকি খেলাগুলো দেখার তেমন একটা আগ্রহ তাঁদের নেই৷ আর ১২ শতাংশ ফুটবলভক্ত জানিয়েছেন, তাঁরা আর এবারের বিশ্বকাপের কোনো খেলা দেখবেন না৷
প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁরা খেলা দেখবেন মনস্থির করেছেন, তাঁরা কি অন্য কোনো দলের সমর্থক হয়ে উল্লাস করবেন? পত্রিকাটির জরিপে অংশ নেয়াদের ৪১ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা এখন চান যে, ইউরোপের কোনো দল বিশ্বকাপ জয় করুক৷ আর এর অর্থ হচ্ছে, ব্রাজিল, উরুগুয়ে এবং রাশিয়ার পক্ষ নেয়া জার্মান ফুটবল ফ্যান খুব একটা নেই দেশটিতে৷
জার্মানির সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন স্ট্যার্নও একই ধরনের এক জরিপ পরিচালনা করেছে৷ তারা জানতে চেয়েছিল, যেহেতু জার্মানি আর বিশ্বকাপে নেই, তাহলে জার্মান ফুটবল ভক্তরা এখন কোন দলকে সমর্থন করবেন? জরিপে অংশ নেয়াদের ২৫ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তাঁরা এখন বেলজিয়ামের বিজয়রথে শামিল হবেন৷ ১৫ শতাংশের পছন্দ এখন ক্রোয়েশিয়া আর ১০ শতাংশের ইংল্যান্ড৷
এদিকে, কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক লেয়া ব্যোকারের জালানো জরিপে বেরিয়ে এসেছে এক ভিন্ন তথ্য৷ এতে দেখা যাচ্ছে, জার্মানির এই অকাল প্রস্থান নিয়ে অন্যদেশের ফুটবল ভক্তরা তেমন একটা ব্যাথিত নন৷ বরং অনেকেই এতে সন্তুষ্ট হয়েছেন৷ বিশ্বকাপ থেকে জার্মানির বিদায়ের মাত্র দু'দিন পর ১৩১ জন বিদেশির (যাদের অধিকাংশই ব্রিটিশ) কাছে তিনি প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন৷ তাঁদের অধিকাংশই জার্মানির ব্যথায় সমব্যাথী হতে চাননি৷ বরং জানিয়েছেন তাঁদের সন্তুষ্টির কথা৷
তবে, অন্যদের অবস্থান যা-ই হোক, এবারের গ্রীষ্মটা জার্মানদের জন্য খুব একটা আনন্দের হলো না বিশ্বকাপের কারণে৷ জার্মানির বিদায় তাঁদের অনেক পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে৷ কেউ এখন তাঁদের গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনছেন, কেউবা খেলা দেখার জন্য বাছাই করে রাখা সময়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না৷ এখন যদি কোনো ইউরোপীয় দল বিশ্বকাপ জয় করে, তাহলে তাঁদের বেদনা হয়ত কিছুটা কমবে৷
জনাথন হার্ডিং/এআই
নেইমারের অভিনয়, নেইমারের খেলা
যত ম্যাচ গড়াচ্ছে ততই যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা স্ট্রাইকার নেইমার৷ কিন্তু একই সঙ্গে তিনি আলোচনা সমালোচনায় আরো একটা কারণে৷ মাঠে মাঝে মাঝে বিনা কারণে পড়ে যাচ্ছেন৷ এটা কি তাঁর কৌশল?
ছবি: Reuters/D. Martinez
গ্রুপ পর্বে এক গোল
গ্রুপে তিন ম্যাচে এক গোল করেছেন নেইমার৷ একটি অ্যাসিস্ট করেছেন৷ প্রথম ম্যাচে যতটা নিষ্প্রভ মনে হচ্ছিল তাঁকে, পরের ম্যাচগুলোতে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরেছেন৷
ছবি: Reuters/L. Smith
দ্বিতীয় রাউন্ড
দ্বিতীয় রাউন্ডে ছুটে গিয়ে ডান পায়ে স্লাইড করে মেক্সিকোর জালে বল জড়িয়েছেন তিনি৷ মেক্সিকোর বিরুদ্ধে এই গোলেই এগিয়ে যায় ব্রাজিল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
অভিনয় ও সমালোচনা
একইসঙ্গে নেইমার সমালোচিত হন তাঁর বিনা কারণে পড়ে যাবার কিংবা অল্প ছোঁয়াতেই বড় আঘাত পাবার অভিনয় করবার জন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Klamar
একটুকু ছোঁয়া লাগে
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে একটু ছোঁয়াতেই পড়ে যান নেইমার৷ তাঁর এই অভিনয়ের জন্য এই বিশ্বকাপে প্রথম সমালোচিত হন তিনি৷
ছবি: Imago/Bildbyran/P. Arvidson
মেক্সিকো কোচের সমালোচনা
শুধু অন্যান্য দলের সমর্থকরাই নন, মেক্সিকোর ফুটবল কোচ হুয়ান কার্লোস ওসোরিও-ও খুব সমালোচনা করেছেন নেইমারের৷ তিনি বলেন যে, এটা ফুটবলের জন্য ভালো উদাহরণ হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/B. Mendes
নেইমারের জবাব
নেইমারও সমালোচনার জবাব দিয়েছেন৷ ২৬ বছর বয়সি এই স্ট্রাইকারের সরল স্বীকারোক্তি এমন যে, ‘ব্যথা পেলে কী করবো?’ তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা এত সহজ নয়৷ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷’’
ছবি: Reuters/L. Smith
ফ্যানদের প্রতিক্রিয়া
ব্রাজিল ফ্যানদেরই অনেকে বিব্রত নেইমারের এসব আচরণের জন্য৷ কিন্তু তিনি তো পারফর্মও করছেন৷ হতে পারে এটা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এক কৌশল৷