ইসলাম ধর্মকে হাতিয়ার করে গোটা বিশ্বের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ বিভিন্ন সূত্র থেকে এমনই একটা চিত্র উঠে আসছে৷ বিষয়টি নিয়ে তাই চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতেও৷
বিজ্ঞাপন
কোনো রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সংগঠন বা বহুজাতিক কোম্পানি যেভাবে কাঙ্খিত সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে, সেভাবে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-ও ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ একদিকে তাদের নিয়ন্ত্রিত ‘খিলাফত'-এর সীমা বাড়িয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা কব্জা করার লক্ষ্য যেমন স্থির করা হয়েছে, অন্যদিকে আদর্শগত শত্রু হিসেবে পশ্চিমা সভ্যতার বিনাশের নীতিও প্রতিফলিত হচ্ছে সেই কর্মসূচির মধ্যে৷ বলা বাহুল্য, যে সব ‘গোপন' নথিপত্র থেকে এই সব চাঞ্চল্যকর পরিকল্পনা পাওয়া যাচ্ছে, তার সত্যতা যাচাই করা সহজ নয়৷ অন্যদিকে এমন ভয়াবহ সম্ভাবনা উপেক্ষা করাও সম্ভব নয়৷
নাদিম নুসরত আইএস-এর এই ‘ষড়যন্ত্র' তুলে ধরেছেন এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে৷
সামগ্রিক পরিকল্পনার আওতায় আইএস ভারতও দখল করতে চায়, এমন আশঙ্কার কথা পড়ে আদিত্য জাখর মনে করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে শত্রুতার বদলে এই বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷
আইএস-এর সব রণকৌশলই দীর্ঘমেয়াদি নয় – এমনটা ভাবারও কারণ রয়েছে৷ যেমন তুরস্কের এর্দোয়ান প্রশাসন বহুকাল ধরে আইএস-এর সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলার পর সম্প্রতি তাদের উপর হামলা চালিয়ে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে৷ হুসাম আইলুশ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আইএস তুরস্কের মানুষের উদ্দেশ্যে তুরস্ক দখলের আহ্বান জানিয়েছে এবং এর্দোয়ান-কে ‘শয়তান' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷
আইএস ও মুসলিম জগতের শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অনেক মিল আছে বলে মনে করেন সাকলেন ইমাম৷ এ প্রসঙ্গে এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন তিনি৷ ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভাবাদর্শ কীভাবে পরবর্তীকালে বিকৃত করা হয়েছে, তার অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে৷
আইএস-এর বর্তমান তৎপরতার মধ্যেও নৃশংসতার শেষ নেই৷ প্রাচীন পালমিরা শহরে সভ্যতার নিদর্শনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতেন ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ পণ্ডিত৷ আইএস তাঁকে শিরশ্ছেদ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে মৃতদেহটি একটি থামে ঝুলিয়ে রেখেছে৷ এই খবরটি অনেকে শেয়ার করেছেন৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷