1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড: মাত্র দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ আগস্ট ২০১৭

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে আটজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ছ’জনেরই দণ্ড কমিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ এদের মধ্যে দু'জনকে খালাসও দেয়া হয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে মাত্র দু'জনের৷

বিশ্বজিৎ দাসকে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়
বিশ্বজিৎ দাসকে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়ছবি: bdnews24.com

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা করেন৷ রায়ে দু'জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ১৫ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং চার জনকে খালাস দেয়া হয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদার৷ এছাড়া খালাসপ্রাপ্ত চার জন হলেন- সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু, এ এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা৷

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়াদের মধ্যে দুইজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আটজনের মধ্যে দুইজনের ফাঁসি বহাল, দুইজন খালাস ও চারজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷ আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ১৫ জনের মধ্যে ১১ জনই পলাতক৷ এর আগে বিচারিক আদালত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল এই মামলায় আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন বা আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল৷

আদালত তার রায়ে বলেছেন, ‘‘এই মামলায় হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ এবং ফটোগ্রাফের সঙ্গে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টের মিল নেই৷ আদালত তদন্ত কর্মকর্তা ও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন৷''

রায়ে প্রতিক্রিয়া:

হাইকোর্টের রায়ের পর অন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্বজিতের বড় ভাই উত্তম দাস৷ রায়ে হতাশ হয়েছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘বিচার কি খেলা? এটা কেমন রায় হলো! এই বিচার আমরা কেউই চাইনি৷''  তিনি বলেন, ‘‘আগে আটজনের ফাঁসি দিলেন আদালত এখন মাত্র দু'জনেরটা বহাল রাখা হয়েছে৷ তাহলে আগের বিচারক কী দেখে রায় দিয়েছিলেন?''

উত্তম বলেন, ‘‘হত্যাকাণ্ডের সময়ের ছবি আছে, ভিডিও আছে৷ সবাই দেখেছে৷ ৭-৮জনকে প্রকাশ্যেই দেখা যায়৷ আর পেছনে আরো অনেকে ছিল৷ পেছনে বা ছবির বাইরে যারা ছিল তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম৷ যারা চিহ্নিত তারা কীভাবে রেহাই পায়?''

ন্যায় বিচার এবং এমন রায়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এরকম রায় কেন হল কিছু বুঝি না৷ এটা কি ন্যায় বিচার? ন্যায় বিচার কোথায় পেলাম?''

আপিল করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন আপিলের ক্ষমতা তাদের নেই৷ সরকারের হাতে বাকিটা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি৷ 

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে আসার পর আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো৷'' তবে যথারীতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খালাস পাওয়া আসামিদের আইনজীবী মো, জহিরুল ইসলাম সবুজ৷

‘এটা কি ন্যায় বিচার? ন্যায় বিচার কোথায় পেলাম?'

This browser does not support the audio element.

বিশ্বজিৎ দাসকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল:

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি প্রতিরোধে ওইদিন সকাল থেকেই পুরনো ঢাকায় সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা৷ ওই এলাকায় পুলিশ এবং সাংবাদিকরাও ছিলেন৷ ফটোসাংবাদিক নাসিরুল ইসলামও ছিলেন সেখানে৷ সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনার কিছুক্ষন আগেই বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ছাত্রলীগ অবরোধবিরোধী মিছিল করে, সেখান থেকে কয়েকটি ককটেলও ছোড়া হয়৷ লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছিল৷ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০ টার দিকে বিশ্বজিৎ ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ তখন কেউ একজন তাকে লক্ষ্য করে শিবির বলে ডাক দেয়৷ এরপরই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধারালো অস্ত্র এবং রড দিয়ে তার উপর হামলা শুরু করে৷ সে দৌড়ে পাশের একটি ভবনে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি৷ সেখানে গিয়েও তাকে ঘেরাও করে হামলা চালায়৷ ওই সময় ফটো সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তাদেরও হুমকি দেয়া হয়৷ একটি বাংলা দৈনিকের একজন ফটো সাংবাদিক এরমধ্যেই ছবি তুলে ফেলেনে৷ তিনি যখন ছবি তোলেন তখন তার গলায়ও চাপাতি ধরে ছিল হামলাকারীরা৷ তবে ক্যামেরা তার বুকের কাছে থাকায় সে এই পরিস্থিতিতেও ছবি তুলতে সক্ষম হন৷ যে ছবিগুলো পরে প্রকাশ হলে ভাইরাল হয়ে যায় এবং সারাদেশের মানুষ এই নৃশংসতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়৷'' তিনি আরো জানান পুরো সময় সেখানে পুলিশ ছিল৷ হামলার সময় ২০ গজের মধ্যেই পুলিশ অবস্থান করছিল৷ কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পুলিশ এগিয়ে যায়নি৷ বিশ্বজিৎতে হাসপাতালেও পাঠায়নি পুলিশ৷ একজন রিকশা চালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা:

ঘটনার রাতে সূত্রাপুর থানায় মামলা হয় কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে পরদিন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন৷ পুলিশ ছবি ও ভিডিও দেখে সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে৷ পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়৷

’যে সাংবাদিক ছবিগুলো তুলেছিলেন নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁর নাম বলতে চাই না’

This browser does not support the audio element.

তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে৷ তদন্ত শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি৷ আসামিদের মধ্যে আটজন রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, কাইয়ুম মিয়া, এস এম কিবরিয়া, এমদাদুল হক, সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা কারাগারে আটক আছেন৷ বাকিরাপলাতক৷

হত্যাকাণ্ডের তিন মাসের মধ্যে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম৷ এর পর মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইবুন্যালে পাঠানো হয় বিচারের জন্য৷ ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক আট জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হল, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, এমদাদুল হক, কাইয়ুম মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও নূরে আলম৷ এদের মধ্যে রাজন তালুকদার ও নূরে আলম পলাতক৷

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন, এইচ এম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, মনিরুল হক, তারিক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম (২), কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন৷ এদের মধ্যে কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা ছাড়া বাকিরা পলাতক৷ এই মামলায় পুলিশের তদন্ত চলতে থাকার মধ্যেই গণমাধ্যমে যাদের নাম ও ছবি এসেছিল, তাদের একে একে বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি৷ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপল শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত হয়৷ ১৬মে মাসে শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৭ জুলাই৷ ৬ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য ছিল৷

বিশ্বজিতের পরিবার কি সুবিচার পেল? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ