বিশ্বজিৎ হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামি শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার
১৫ জুলাই ২০২২
চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ দাশ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিন গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ ঈদের ছুটিতে বগুড়ার শিবগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মোকামতলা বন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
৩২ বছরের আলাউদ্দিন পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলার ছোটধাপের বাসিন্দা৷ বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় চার নম্বর আসামি তিনি৷
শিবগঞ্জ থানার ওসি দীপক কুমার দাস বিডিনিউজকে জানান, যাবজ্জীবন সাজার আসামি আলাউদ্দিন রায় ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে ছিলেন৷
তিনি বলেন, "ছাত্রাবস্থায় আলাউদ্দিনের সঙ্গে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেয়ের সম্পর্ক ছিল৷ পলাতক অবস্থায় গোপনে বিয়ে করে চট্টগ্রামে বসবাস করছিলেন তারা৷ সেখানে তারা চাকরিও করতেন৷''
ওসি আরো জানান, ঈদের ছুটিতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দীপক কুমার বলেন, "আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যেহেতু পঞ্চগড়ের অটোয়ারী থানায় ওয়ারেন্ট ছিল, তাই ওই থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে৷ আজই তাকে হস্তান্তর করা হবে৷’’
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার সুত্রাপুরের বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে বিশ্বজিৎ দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এই হত্যা মামলার রায় দেয়৷ ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷
পরে মামলাটি হাইকোর্টে গেলে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট আটজনের মধ্যে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত৷ বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়৷ দুজনকে খালাস করে দেয় আদালত৷
এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে দুজন খালাস পান৷ অপর ১১ জনের যাবজ্জীবন বহাল থাকে বলে জানান ওসি৷
এফএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
বিচারকদের আলোচিত পর্যবেক্ষণ, রায়
বাংলাদেশ ও ভারতে বিচারকদের দেয়া পর্যবেক্ষণ ও রায় কখনও কখনও আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ এ বছরই ধর্ষণ মামলার শুনানির সময় ভারতের প্রধান বিচারপতির করা দুটি মন্তব্যের কারণে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল৷
ছবি: bombayhighcourt.nic.in
বুকে হাত দেয়ার বিচার সম্ভব নয়!
গত জানুয়ারিতে ভারতের বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পুষ্প গনেড়িওয়ালার দুটি পর্যবেক্ষণ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল৷ তিনি বলেছিলেন, যৌন অপরাধের হাত থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখার ‘পকসো’ আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী পাঁচ বছরের মেয়ে শিশুর হাত ধরা ও ট্রাউজারের চেন খোলা যৌন হেনস্থা নয়৷ এর কয়েকদিন আগে দেয়া আরেক পর্যবেক্ষণে তিনি বলেছিলেন, ১২ বছরের মেয়ের বুকে হাত দেয়ার ঘটনায় ত্বকে-ত্বকে স্পর্শ না হওয়ায় পকসো আইনে বিচার সম্ভব নয়৷
ছবি: bombayhighcourt.nic.in
স্থায়ী নিয়োগ হলো না
গনেড়িওয়ালার প্রথম পর্যবেক্ষণে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ গনেড়িওয়ালা এমন সময় ঐ পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন যখন বিচারপতি হিসেবে তার নিয়োগ স্থায়ী করতে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম সুপারিশ করেছিল৷ দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের পর সেই সুপারিশ বাতিল করে তাকে দুই বছরের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করা হয়৷ তবে সরকার সেটিও কমিয়ে তাকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয়৷
ছবি: Anil Dave/Dinodia Photo/imago images
রেইনট্রি হোটেলকাণ্ড
রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষে বৃহস্পতিবার সব আসামির খালাসের রায় দেন ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার৷ রায়ের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, রায় ঘোষণার সময় তিনি ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন৷ এরপর সমালোচনা হলে রোববার তার বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়৷
ছবি: MAHMUD ZAMAN OVI/bdnews24.com
তবে লিখিত রায়ে যা আছে
মঙ্গলবার রাতে মামলার লিখিত রায় প্রকাশিত হয়৷ রায়ে বিচারক লিখেছেন, অনেক দিন পর মামলা হলে যৌন সহিংসতার প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ মামলা করার সময় যদি বিষয়টি দেখা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে ধর্ষণ মামলায় তা গুরুত্বপূর্ণ নথি বলে গণ্য হয়৷ তখন ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার নিশ্চিত করা যায় এবং ন্যায়বিচার সর্বোত্তমভাবে করা সম্ভব হয়৷
ছবি: bdnews24.com
ধর্ষককে ধর্ষিতাকে বিয়ের প্রস্তাব
গত মার্চে ভারতের প্রধান বিচারপতি শারদ বোবদে এক মামলার শুনানির সময় ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা এক সরকারি কর্মচারীকে ধর্ষিতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনি যদি তাকে বিয়ে করেন তাহলে আমরা সহায়তা করতে পারি৷ তা না হলে আপনি চাকরি হারাবেন, জেলে যাবেন৷’’ ঐ ব্যক্তি ১৬ বছর বয়সি ঐ মেয়েকে বেঁধে রেখে, মুখে কাপড় গুঁজে বারবার ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ এছাড়া হত্যারও হুমকি দিয়েছিল৷
ছবি: IANS
পদত্যাগ চেয়ে চিঠি
বোবদের (বামে) পদত্যাগের দাবি জানিয়ে লেখা এক চিঠিতে বলা হয়, ‘‘ধর্ষককে ধর্ষিতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে আপনি, ভারতের প্রধান বিচারপতি, মেয়েটিকে এমন একজন নির্যাতনকারীর হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন যে তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছিল৷ তার হাতে আপনি মেয়েটিকে সারাজীবন ধর্ষণের জন্য তুলে দিতে চেয়েছেন৷’’ নারী অধিকার কর্মী ও বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিসহ পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ ঐ চিঠিতে সই করেছিলেন৷
ছবি: IANS
দম্পতির মধ্যে যৌন মিলন কি ধর্ষণ?
প্রায় একই সময়ে আরেক মামলার শুনানিতে করা বোবদের (ডানে) আরেক বক্তব্যও আলোচনার জন্ম দেয়৷ বিবাহিত দম্পতির মধ্যে যৌন মিলন কখনও ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি৷ ‘‘স্বামী হয়ত বর্বর হতে পারেন৷ কিন্তু আপনি কি একজন বৈধভাবে বিবাহিত পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলতে পারেন?’’ বোবদে পদত্যাগ করেননি৷ পরের মাসে স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন৷
ছবি: IANS
‘ময়ূর ব্রহ্মচারী পাখি, সেক্স করে না’
২০১৭ সালে ভারতের রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা তার শেষ কর্মদিবসে দেয়া নির্দেশনায় গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা ও গো-হত্যায় দোষী সাব্যস্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সুপারিশ করেছিলেন৷ পরদিন তার বিদায়ী সংবর্ধনা আনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘অনেকেই জানেন না, সারাজীবন ব্রহ্মচারী থাকে ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর৷ তার চোখের জলের মাধ্যমেই সন্তানের জন্ম দেয় ময়ূরী৷ ভগবান শ্রীকৃষ্ণও ময়ূরের পালক মাথায় ধারণ করেছিলেন৷’’
ছবি: Reuters/T. Melville
বিচারক বদলাতে সরকারের প্রস্তাব
২০১৭ সালের স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে দুই শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার তৎকালীন ইউএনও তারিক সালমন৷ এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপানোর’ অভিযোগে মামলা হলে সালমনকে কারাগারে পাঠান বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আলী হোসাইন৷ অবশ্য দুই ঘণ্টা পর তিনিই তার জামিন মঞ্জুর করেন৷ এই ঘটনায় আলী হোসাইনকে বদলির জন্য সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
হাস্যকর রায়?
২০১৭ সালে খুলনায় এক অনুষ্ঠানে ছাগল বিতরণ করেন প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ৷ পরে ফেসবুকে স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মোড়ল লেখেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর সকালে বিতরণ করা ছাগলের রাতে মৃত্যু’৷ পোস্টে প্রতিমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করায় তার মানহানি হয়েছে এই অভিযোগে মামলা হলে লতিফকে কারাগারে পাঠান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ‘খ’ অঞ্চলের বিচারক নুসরাত জাবিন৷ একদিন পর তিনি তাকে জামিন দেন৷
ছবি: picture alliance/AP/The Flint Journal,Jake May