এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ১৪৩টি দেশে, মুসলিমেরা ১৪০টি দেশে৷ শুধু স্বৈরতান্ত্রিক দেশ নয়, ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও এমন নিয়ন্ত্রণ বেড়ে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
২০০৭ থেকে ২০১৭, এই ১০ বছরের তথ্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার৷ এক্ষেত্রে আমলে নেয়া হয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন, নীতি এবং কর্মকর্তাদের নানা কার্যক্রম৷
২০১৭ সালের সবশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ৫২টি দেশ ধর্মের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে৷ ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪০৷ এই দেশগুলের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে চীন ও রাশিয়া৷ সবচেয়ে কম নিয়ন্ত্রণের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সাউথ আফ্রিকা, জাপান, ফিলিপিন্স, ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া৷
২০১৭ সালে ৫৬টি দেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে৷ ১০ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৩৯৷
ইউরোপেরঅবস্থা
২০০৭ থেকে ২০১৭, এই ১০ বছরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ইউরোপের রাজনীতিতে৷ মুসলিম নারীদের বোরকা ও অন্যান্য পর্দার মতো ধর্মীয় পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ২০টি দেশে৷ ২০০৭ সালে কেবল ৫টি দেশে ছিল এমন নিষেধাজ্ঞা৷
অস্ট্রিয়ায় জনসম্মুখে পুরো মুখ ঢাকা পোশাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ জার্মানিতে মোটরকার চালক এবং সরকারি চাকরিজীবীদের মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ স্পেনের কিছু পৌরসভা বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ সুইজারল্যান্ডে গণভোটে ভোটাররা নতুন কোনো মিনার তৈরিতে নিষেধাজ্ঞায় সায় দিয়েছেন৷
পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে, জার্মানিতে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের জন্য চাপ দেয়া হয়েছে৷ এমনকি, খ্রিস্টান না হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকিও দেয়া হয়েছে৷
উইগুর ও রোহিঙ্গা নির্যাতন
এশিয়ায় উঠে এসেছে উইগুর ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের কথা৷ চীনে পুনর্শিক্ষা কার্যক্রমের নামে বিভিন্ন কেন্দ্রে হাজার হাজার মুসলিম উইগুরকে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ মিয়ানমারে সামরিক-বেসামরিক শক্তি রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করছে বলে দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে৷
সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে দূর করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণের কথা বলে না৷ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কেউ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তাহলেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সব রকমের রাজনৈতিক উস্কানি বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের পেছনে কখনো না লাগি৷ সবাই সবার ধর্মকে সম্মান করি৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শেখ শাফায়াতুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেখা শাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সবাই যেন সবার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ নিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ এছাড়া সবাই মিলে একটি দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে সাম্প্রদায়িকতাও দেশ থেকে দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
খরাজ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা, পশ্চিমবঙ্গ
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ মেকআপ আর্টিস্টই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ কই, আমাদের তো সমস্যা হয় না! আমরা মন থেকে কোনও বিভেদে বিশ্বাস রাখি না৷ তাই নিজেদের মধ্যেও বিভেদ জন্মায় না৷ মনের অন্ধকার দূর করাটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার৷
সত্যিকারের জ্ঞান মনের সংকীর্ণতা দূর করে৷ তাই শুধু ডিগ্রি দিয়ে লাভ নেই৷ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে৷ সেটাই হবে আদর্শ জ্ঞাননির্ভর সমাজ৷ সেই সমাজ এমন মানুষ তৈরি করবে, যার মধ্যে উগ্রতা থাকবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
পতিতপাবন রায়, পিয়ারলেস, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগতস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সমষ্টিগতস্তরে মানতে হবে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন৷ দেওয়ানি বিধির অধীনে সবাইকে রাখতে হবে৷ রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন দরকার৷ তবেই রাস্তা আটকে নামাজ পড়া বা মণ্ডপ তৈরি নিয়ে দাঙ্গা হবে না বা রক্তও ঝরবে না৷