আধুনিক যুগে স্মার্টফোন ছাড়া জীবনযাত্রা ভাবাই যায় না৷ কিন্তু সারাদিন কত ঘণ্টা ছোট পর্দায় আপনার দৃষ্টি আটকে থাকে, সেটা কি জানা আছে? মোবাইল হাতছাড়া হলেই কি মনে আতঙ্ক জাগে?
নো-মোবাইল-ফোন-ফোবিয়া হলো উদ্বেগের নতুন এক ব্যাধিছবি: Antonio Guillen Fernández/PantherMedia/IMAGO
বিজ্ঞাপন
সে সব দিন কী সুখেরই না ছিল! শুরুর দিকে মোবাইল ফোনের বেঢপ আকার ছিল স্বাভাবিক৷ তারপর সেটগুলি চিকন হতে লাগলো৷ আজ ছোট সবজান্তা এই বস্তুটি ছাড়া আমরা যেন অন্ধ৷
নোমোফোবিয়া, অর্থাৎ ৷ অর্থাৎ হাতের কাছে স্মার্টফোন না থাকার ভয়৷ এই উদ্বেগ যে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, ইভন গ্যোরলিশ তা ভালোভাবেই জানেন৷ মনোবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি অপেক্ষাকৃত নতুন এই প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতে ভুলে গেলে বা ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গেলে নার্ভাসনেস, যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়, এমনকি আতঙ্কও এর লক্ষণ৷ অথবা ন্যাভিগেশন অ্যাপের নাগাল না পেয়ে ভুল পথে চলে যাবার আশঙ্কা জাগে৷ এই সব ভয় কোনো এক সময়ে শরীরের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে৷''
৪০ বছরে মোবাইল ফোন
১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম মোবাইল ফোন ছাড়া হয়েছিল৷ গত ৪০ বছরের ইতিহাসে মোবাইল ফোন আকারে বড় থেকে ছোট হয়ে আবার বড় হয়েছে৷
ছবি: Messe Berlin
প্রথম ফোন
১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন কোম্পানি মটোরোলা বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে ছাড়ার অনুমোদন পায়৷ ফোনটির নাম ছিল ‘ডায়নাট্যাক ৮০০০এক্স’৷ ছবিতে মটোরোলার সাবেক প্রধান ডিজাইনার রুডি ক্রলোপের ডান হাতে মোবাইলটি দেখা যাচ্ছে৷ ৮০০ গ্রাম ওজনের ফোনটি ১৩ ইঞ্চি লম্বা ছিল৷ দাম ছিল প্রায় চার হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা৷
ছবি: hristof Stache/AP Photo/picture alliance
প্রথম স্মার্টফোন
১৯৯৬ সালে ‘নোকিয়া কমিউনিকেটর ৯০০০’ বাজারে এসেছিল৷ এটিই ছিল প্রথম ফোন যেখানে কম্পিউটারের সব কাজ করা যেত৷ কারণ কীবোর্ড ছিল, ছিল ভালো মানের স্ক্রিন৷ ইমেল করা, ওয়েবসাইট দেখা, লেখা, স্প্রেডশিট ব্যবহার সব করা যেত৷
ছবি: Nokia/dpa/picture alliance
এসএমএস
এখন আমরা মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করি৷ কিন্তু একসময় শর্ট মেসেজিং সার্ভিস বা এসএমএস পাঠানো হত৷ একেকটি এসএমএস পাঠাতে টাকা দিতে হত৷ ১৬০ বর্ণের বেশি লেখা যেত না৷
ছবি: Jens Schierenbeck/dpa/picture alliance
আকার ছোট
এই শতাব্দীর শুরুতে ছোট আকারের মোবাইল ফোন তৈরির দিকে নজর দিয়েছিল নির্মাতারা৷ মটোরোলা কোম্পানি এমন ফোন বের করেছিল, যা ব্যবহারের আগে ও পরে ‘ফ্লিপ’ করা যেত৷ ঐ সময় ডিসপ্লের আকার বড় করার চেষ্টাও দেখা গেছে৷
ছবি: Mark Lennihan/AP/picture alliance
টাচস্ক্রিন
২০০৭ সালে অ্যাপল প্রথম আইফোন বাজারে নিয়ে আসে৷ এতে কীবোর্ডের জায়গায় টাচস্ক্রিন এসেছিল, যা ছিল প্রথম ঘটনা৷ এছাড়া ফোনে একটি মিউজিক লাইব্রেরি ছিল৷ ফলে এমপিথ্রি প্লেয়ারের আর প্রয়োজন ছিল না৷
ছবি: IMAGO
ব্ল্যাকবেরির পতন
একসময় ব্যবসায়ীদের পছন্দের ফোন ছিল ব্ল্যাকবেরি৷ বলা যায়, এটিই ছিল প্রথম স্মার্টফোন, যা বহুল ব্যবহৃত হয়েছে৷ কিন্তু টাচস্ক্রিনের যুগ শুরু হওয়ার পর ক্যানাডার ব্ল্যাকবেরি কোম্পানি সেই ট্রেন্ড ধরতে অনেক দেরি করে ফেলে৷ ফলে আর টিকতে পারেনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
সবার কাছে ফোন
জার্মানির স্ট্যাটিস্টা সংস্থার হিসেবে, বিশ্বে অন্তত একটি মোবাইল ফোন থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬০ কোটি৷ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে৷ মোবাইলের কারণে ল্যান্ডলাইন যোগাযোগ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে৷ এখন পথ চেনা, ছবি তোলা, তথ্য ও বিনোদনের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Dycj/HPIC/dpa/picture alliance
বড় আকার
মানুষ এখন মোবাইলে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে৷ তাই বড় ডিসপ্লের মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়েছে৷ ফলে স্মার্টফোনের আকার আবার বড় হচ্ছে৷
ছবি: Jonathan Raa/NurPhoto/picture alliance
আবার ‘ফ্লিপ’ ফোন
স্যামসাং ও মটোরোলা আবার ফ্লিপ ফোন নিয়ে এসেছে৷ ফোন ফ্লিপ করে খোলার পর দুই অর্ধের টাচস্ক্রিনের মধ্যে কোনো প্রান্ত বা ‘জয়েন্ট’ দেখা যায় না৷ অর্থাৎ অতীতের মতো বড় আকারের ফোন ও ফ্লিপ করা যায় এমন ফোন আবার ফিরে আসছে৷
ছবি: Ahn Young-joon/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
তিনি এক গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, আটশোরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নোমোফোবিয়াতে কমবেশি ভুগছেন৷ প্রায় চার শতাংশ গুরুতরভাবে আক্রান্ত৷ আশঙ্কার কথা হলো, এই সমস্যা থেকে সাধারণ উদ্বেগের ব্যাধি, এমনকি ডিপ্রেশনও হতে পারে৷ প্রো. গ্যোরলিশ বলেন, ‘‘বর্তমানে আসলে কেউই নোমোফোবিয়া হলে ডাক্তার, সাইকোথেরাপিস্ট বা মনোবিজ্ঞানীর কাছে যায় না৷ ডিপ্রেশন বা উদ্বেগের ব্যাধিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ অথচ এ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া অর্থবহ হতে পারে৷ প্রশ্ন করা যেতে পারে, আপনি কত ঘনঘন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন? সেটি ভুলে গেলে দুশ্চিন্তা হয় কি? এমন সব প্রশ্ন করা যায়৷ হয়তো এটাই একটা উৎস৷''
অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশিরভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা না হলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় জাগে, যার থেকে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না৷ নোমোফোবিয়ার ক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়ায় কিছু ‘মিস' করার ভয়ও কাজ করে৷ বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে মোবাইল হাতছাড়া হবার আতঙ্ক বিশেষভাবে দেখা যায়৷
ইভন গ্যোরলিশ দ্বিতীয় একটি গবেষণার চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ আপাতত সেই গবেষণা থেকে জানা গেছে, যে মোবাইলের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নোমোফোবিয়া অনেকটা কমিয়ে দেয়৷ অর্থাৎ দিনে দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করা চলবে না৷ তারপর সাদা-কালো মোড চালু করতে হবে৷ কখনো মোবাইল ছাড়াই বেরিয়ে পড়তে হবে৷ প্রো. গ্যোরলিশ বলেন, ‘‘আমি বাসায় মোবাইল রাখি৷ প্রথমদিকে আমি সত্যি কাঁপতে থাকি, ভয়ের অনুভূতি হয়৷ মনে হয় কিনা ঘটতে পারে! কিন্তু বার বার স্মার্টফোন দূরে রাখলে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে৷ দেখা যায়, বস্তুটি সঙ্গে না থাকলেও জগতটা চালু থাকে৷''
মোটকথা একটু অভ্যাসের প্রয়োজন৷ মান্ধাতার আমলের মডেলে ফিরে যাবার কোনো দরকার নেই৷
মারি-টেরেসা লাসেরে/এসবি
৪০ বছরে মোবাইল ফোন
১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম মোবাইল ফোন ছাড়া হয়েছিল৷ গত ৪০ বছরের ইতিহাসে মোবাইল ফোন আকারে বড় থেকে ছোট হয়ে আবার বড় হয়েছে৷
ছবি: Messe Berlin
প্রথম ফোন
১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন কোম্পানি মটোরোলা বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে ছাড়ার অনুমোদন পায়৷ ফোনটির নাম ছিল ‘ডায়নাট্যাক ৮০০০এক্স’৷ ছবিতে মটোরোলার সাবেক প্রধান ডিজাইনার রুডি ক্রলোপের ডান হাতে মোবাইলটি দেখা যাচ্ছে৷ ৮০০ গ্রাম ওজনের ফোনটি ১৩ ইঞ্চি লম্বা ছিল৷ দাম ছিল প্রায় চার হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা৷
ছবি: hristof Stache/AP Photo/picture alliance
প্রথম স্মার্টফোন
১৯৯৬ সালে ‘নোকিয়া কমিউনিকেটর ৯০০০’ বাজারে এসেছিল৷ এটিই ছিল প্রথম ফোন যেখানে কম্পিউটারের সব কাজ করা যেত৷ কারণ কীবোর্ড ছিল, ছিল ভালো মানের স্ক্রিন৷ ইমেল করা, ওয়েবসাইট দেখা, লেখা, স্প্রেডশিট ব্যবহার সব করা যেত৷
ছবি: Nokia/dpa/picture alliance
এসএমএস
এখন আমরা মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করি৷ কিন্তু একসময় শর্ট মেসেজিং সার্ভিস বা এসএমএস পাঠানো হত৷ একেকটি এসএমএস পাঠাতে টাকা দিতে হত৷ ১৬০ বর্ণের বেশি লেখা যেত না৷
ছবি: Jens Schierenbeck/dpa/picture alliance
আকার ছোট
এই শতাব্দীর শুরুতে ছোট আকারের মোবাইল ফোন তৈরির দিকে নজর দিয়েছিল নির্মাতারা৷ মটোরোলা কোম্পানি এমন ফোন বের করেছিল, যা ব্যবহারের আগে ও পরে ‘ফ্লিপ’ করা যেত৷ ঐ সময় ডিসপ্লের আকার বড় করার চেষ্টাও দেখা গেছে৷
ছবি: Mark Lennihan/AP/picture alliance
টাচস্ক্রিন
২০০৭ সালে অ্যাপল প্রথম আইফোন বাজারে নিয়ে আসে৷ এতে কীবোর্ডের জায়গায় টাচস্ক্রিন এসেছিল, যা ছিল প্রথম ঘটনা৷ এছাড়া ফোনে একটি মিউজিক লাইব্রেরি ছিল৷ ফলে এমপিথ্রি প্লেয়ারের আর প্রয়োজন ছিল না৷
ছবি: IMAGO
ব্ল্যাকবেরির পতন
একসময় ব্যবসায়ীদের পছন্দের ফোন ছিল ব্ল্যাকবেরি৷ বলা যায়, এটিই ছিল প্রথম স্মার্টফোন, যা বহুল ব্যবহৃত হয়েছে৷ কিন্তু টাচস্ক্রিনের যুগ শুরু হওয়ার পর ক্যানাডার ব্ল্যাকবেরি কোম্পানি সেই ট্রেন্ড ধরতে অনেক দেরি করে ফেলে৷ ফলে আর টিকতে পারেনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
সবার কাছে ফোন
জার্মানির স্ট্যাটিস্টা সংস্থার হিসেবে, বিশ্বে অন্তত একটি মোবাইল ফোন থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬০ কোটি৷ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে৷ মোবাইলের কারণে ল্যান্ডলাইন যোগাযোগ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে৷ এখন পথ চেনা, ছবি তোলা, তথ্য ও বিনোদনের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Dycj/HPIC/dpa/picture alliance
বড় আকার
মানুষ এখন মোবাইলে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে৷ তাই বড় ডিসপ্লের মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়েছে৷ ফলে স্মার্টফোনের আকার আবার বড় হচ্ছে৷
ছবি: Jonathan Raa/NurPhoto/picture alliance
আবার ‘ফ্লিপ’ ফোন
স্যামসাং ও মটোরোলা আবার ফ্লিপ ফোন নিয়ে এসেছে৷ ফোন ফ্লিপ করে খোলার পর দুই অর্ধের টাচস্ক্রিনের মধ্যে কোনো প্রান্ত বা ‘জয়েন্ট’ দেখা যায় না৷ অর্থাৎ অতীতের মতো বড় আকারের ফোন ও ফ্লিপ করা যায় এমন ফোন আবার ফিরে আসছে৷