1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বজুড়ে হামের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ কী?

১২ মে ২০২৫

বিশ্বজুড়ে হাম-এর প্রকোপ বৃদ্ধি বিশেষজ্ঞদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিকা কর্মসূচির কারণে প্রায় নির্মূল হতে বসেছিল হাম৷ কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে হাম।

বেনিতো জুয়ারেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একজন যাত্রী হামের টিকা গ্রহণ করছে
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে হামের প্রাদুর্ভাব সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর বেশিছবি: Alfredo Estrella/AFP

ইয়েমেনে ২০২৫ সালের এপ্রিলে ১০ হাজারের বেশি এবং ভারতে সাত হাজারের বেশি হামে আক্রান্ত রোগী নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ দেশটিতে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হাম। হাম নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন।

আবার কেনো হামের সংক্রমণ বাড়ছে পড়ছে?

ইউরোপেও হাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হামে আক্রান্ত ৮৭% রোগীই টিকা গ্রহণ করেননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর ইউরোপের পরিচালক হান্স ক্লুগে একে একটি 'ওয়েকআপ কল' বা ‘সতর্কতা সংকেত' হিসেবে অভিহিত করেছেন। টিকার বিষয়ে ভুল তথ্য এবং অসচেতনতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক বায়ুবাহিত রোগ, যা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শরীরে লালচে দানা এবং তীব্র জ্বর।  শিশুদের জন্য এই রোগ বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে

তবে আশার কথা হলো, হাম একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং এর কার্যকর প্রতিষেধক রয়েছে। এমএমআর (হাম, মাম্পস ও রুবেলা) টিকার দুটি ডোজ হামের সংক্রমণ এবং এর বিস্তার থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি সুরক্ষা দিতে পারে।

হার্ড ইমিউনিটি কী?

সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিশেষজ্ঞ মাইকেল হেড বলেন, কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একে 'হার্ড ইমিউনিটি' বলা হয়।

হার্ড ইমিউনিটি তখনই কাজ করবে যখন একটি গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষকে প্রতিষেধক দেয়া থাকবে। যেমন- হামের ক্ষেত্রে প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকেই যদি প্রতিষেধক দেয়া যায় তাহলে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে।

হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলে সমাজের যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে, ফলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। এর ফলে যারা টিকা নিতে অক্ষম, তারাও সুরক্ষিত থাকে।

টিকাদান কর্মসূচীর বাস্তবায়ন কম

ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ইসিডিসি)-র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইউরোপের অনেক দেশেই হাম নির্মূলের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি, এখনো সুপারিশকৃত স্তরের নিচে রয়েছে।

২০২৪ সালে, মাত্র চারটি ইউরোপীয় দেশ হামের টিকার দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। এই তথ্য হামের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় ইউরোপের সামগ্রিক দুর্বল চিত্র তুলে ধরে।

ইসিডিসি সতর্ক করে জানিয়েছে, হাম সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে এবং যেসব কমিউনিটিতে মানুষ টিকা নেয়নি বা আংশিক টিকা নিয়েছে, সেখানে বড় আকারে প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।

টিকাবিরোধী প্রচারণা

তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের শিশুস্বাস্থ্য ও টিকাদান বিশেষজ্ঞ হেলেন বেডফোর্ড জানান, ‘‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা দেখেছি যে বিশ্বব্যাপী এই লক্ষ্য অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কারণে টিকাদান কর্মসূচিতে বাধা আসে, যার ফলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।''

টিকাদানের হার কমে যাওয়ার পেছনে কেবল অ্যান্টি-ভ্যাকসিন প্রচারণা একা দায়ী নয়। সম্প্রতি ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে হামের প্রাদুর্ভাব সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর বেশি।গবেষণাটিতে উঠে এসেছে, এসব গোষ্ঠীর মধ্যে টিকার গ্রহণ মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

গবেষণাটিতে স্পষ্ট যে, টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য শুধুমাত্র টিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার মোকাবেলা করার উপরই নির্ভরশীল নয়, বরং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাবের মতো বিষয়গুলোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  যেমনটি কোভিড-১৯ চলাকালীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপর চাপ এবং টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের অসুবিধা হয়তো অনেক গোষ্ঠীর মধ্যে টিকাদান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।

হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা সহজেই এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে টিকাকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর উন্নতির ওপর জোর দেওয়া এখন অপরিহার্য।

ফ্রেড স্কোলার/এএনএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ