1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আত্মহত্যার পথ দেখাচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল গেম'

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৭ আগস্ট ২০১৭

দ্য ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ: সময়সীমা ৫০ দিন৷ খেলার নির্দেশ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীকে ৫০টি ‘টাস্ক' শেষ করতে হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে আঘাত করাসহ নানারকম ভয়ানক ‘টাস্ক'৷ শেষ টাস্কটি আত্মহত্যা৷ এখনও পর্যন্ত ১৩০ এর শিকার৷

ছবি: picture-alliance/PHOTOPQR/NICE MATIN/MAXPPP

বেশ কয়েক বছর ধরেই রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে অনলাইন গেম, বিশেষত অভিভাবকদের কাছে৷ তবে শুধু অভিভাবকরাই নন, অনলাইন গেমের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আসক্তি চিন্তা বাড়িয়েছে মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীদেরও৷ শিশুদের বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রেও নাকি বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধরনের গেম৷ অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, বাড়ছে দুর্ঘটনাও৷ এর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা৷

২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ঐ মারণ খেলা৷ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু'বছর পরে৷ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে৷ যেন আত্মহত্যার জন্যই৷ সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল' বা নীল তিমি৷

ইদানীং ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একাধিক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ‘ব্লু হোয়েল গেম'-এর৷ হু হু করে বাড়ছে আত্মহননের ঘটনা৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোট ১৬ জন তরুণীর আত্মহত্যার খবর মিলেছে৷ এদের মধ্যে সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) একটি বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম'৷ শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়৷ বরং বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা৷ তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি৷ একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়৷ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে৷ এই খেলায় প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন, এমনটা নয়৷ মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়ছেন অনেকে৷ গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলি৷ এই টাস্কগুলিতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে৷

‘বাবা-মায়েদের তাঁদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দেওয়াই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান’

This browser does not support the audio element.

প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহনন৷ রাশিয়া পুলিশের আশঙ্কা, সাম্প্রতিককালে গোটা বিশ্বে আত্মঘাতী হওয়া অন্তত ১৩০ জনের আত্মহননের পেছনে রয়েছে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম'৷ এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই ডিলিট করা সম্ভব নয়৷ শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে৷

ভূগোলের শিক্ষক মৌসম মজুমদারের কথায়, ‘‘এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে৷ কেন ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে বেশি সময় দিচ্ছে, অনেক অভিভাবকের সেদিকে তাকানোর সময় নেই৷ ফলে বিপদ তাঁদের নজর এড়িয়ে ঘরে ঢুকছে৷ বাবা-মায়েদের তাঁদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দেওয়াই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান৷''

সম্প্রতি মেদিনীপুরের আনন্দপুর এলাকার দশম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কন দের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ৷ স্নানাগারে মুখে প্লাস্টিক জড়িয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চেয়েছিল অঙ্কন৷ শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় তার৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের আরও কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করলে এই গেমের ভয়াবহতার আঁচ পাওয়া যেতে পারে৷ ক'‌দিন আগে মুম্বইয়ের পূর্ব আন্ধেরির শের-এ-পঞ্জাব এলাকার বহুতলের ছ'তলা থেকে এক কিশোরকে ঝাঁপ দিতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ মৃত কিশোরের মোবাইল আর কম্পিউটার ঘেঁটে ব্লু হোয়েলের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ৷ বছর চোদ্দোর ক্লাস নাইনের ওই ছাত্র ছিল মনপ্রীত সিং৷ কেরলের তিরুবনন্তপুরম শহরের পেরুকুলামের বাসিন্দা মনোজ সি মনু ব্লু হোয়েলের খপ্পরে পড়ে আত্মহত্যা করার আগে নিকট আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে লিখেছিল, ‘আমি আত্মহত্যা করলে তোমরা কষ্ট পাবে?'

‘ব্লু হোয়েল'-এর মতো বিপজ্জনক অনলাইন গেমস-এর লিঙ্ক সরানোর নির্দেশ দি‌য়েছে ভারত সরকার৷ গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মাইক্রোসফ্‌ট এবং ইয়াহু থেকে অবিলম্বে এই লিংক সরাতে হবে৷ কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক সূত্রে খবর, অনলাইন গেমসের নেশায় মেতে বিশ্ব জুড়েই একাধিক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে৷ ভারত তার ব্যতিক্রম নয়৷ সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের একাধিক ঘটনার খবর শোনা গিয়েছে৷ তাতে যে ‘ব্লু হোয়েল'-ই জড়িত তেমন অভিযোগও উঠেছে৷ ‌সরকার যে নির্দেশ পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘অবিলম্বে ব্লু হোয়েল বা এ ধরনের বিপজ্জনক গেমসের লিঙ্ক সরিয়ে ফেলতে হবে৷' কেন্দ্রীয় আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নির্দেশের পরই ওই পাঁচ সংস্থাকে ‘ব্লু হোয়েল' সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে৷

‘জলজ্যান্ত মানুষের অবহেলা থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন গেমের দিকে ঝুঁকছে’

This browser does not support the audio element.

‌ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ঋতম গিরি মনে করেন, ‘‘মারণ এই খেলা থেকে তরুণ-‌তরুণীদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হলো বাড়িতে বাবা-‌মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা৷ জলজ্যান্ত মানুষের অবহেলা থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন গেমের দিকে ঝুঁকছে৷''

ফিলিপ বুদেইকিন নামে সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করে৷ বছর একুশের ওই রুশ যুবকের দাবি, যাঁরা মানসিক অবসাদে ভোগেন, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তাঁদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার পথ বাতলাতেই এই গেমের ভাবনা৷ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে৷ পুলিশকে ফিলিপ বলেছে, ‘‘সমাজকে পরিচ্ছন্ন করাই'' নাকি তাঁর উদ্দেশ্য৷

কিশোর-কিশোরীদের এ ধরনের গেম থেকে দূরে রাখতে কী করা উচিত? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ