বিশ্ববিদ্যালয়েও ছেলেমেয়েরা আলাদা ক্লাসরুমে: ঘোষণা তালেবানের
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১
আফগানিস্তানে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন, তবে ছেলেদের সঙ্গে এক কক্ষে বসে নয়, বলেছেন তালেবানের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি৷
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন, তবে ছেলেদের সঙ্গে এক কক্ষে বসে নয়, বলেছেন তালেবানের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি৷ রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, মেয়েদের ড্রেসকোডও মেনে চলতে হবে৷
রোববার সংবাদ সম্মেলনে নারী সদস্যবিহীন তালেবান সরকারের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, ‘‘আমরা ছেলে ও মেয়েদের একসঙ্গে ক্লাস করার অনুমতি দেব না৷ সহশিক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না৷’’
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেবার আগেও স্কুলগুলোতে ছেলে মেয়েরা আলাদাই ক্লাস করত৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষার সুযোগ ছিল এবং কোন ড্রেসকোড নির্ধারণ করা ছিল না৷ তালেবান বলছে, মেয়েরা চাইলে পোস্টগ্রাজুয়েটও পড়তে পারবে৷ তবে তার জন্য সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা ক্যাম্পাস অথবা অন্তত আলাদা ক্লাসরুম করা হবে৷
এরইমধ্যে আফগানিস্তানের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে ছেলে ও মেয়েদের মাঝে পর্দা টানিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
তালেবানের ১০ প্রতিশ্রুতি
কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ১৭ আগস্ট তালেবানে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করে৷ তাদের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ দিয়েছেন নতুন অনেক প্রতিশ্রুতি৷ তার কয়েকটি থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Rahmat Gul/dpa/AP/picture alliance
কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়
কাবুল দখলে নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে সঙ্গে যেকোন সংঘাত এড়ানোর কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ কারো প্রতি ইসলামিক এমিরেটের শত্রুতা বা বৈরিতা নেই৷ বৈরিতার অবসান হয়েছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ আমরা কোন অভ্যন্তরীন বা বহিরাগত শত্রু চাই না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance
প্রতিশোধ নেয়া হবে না
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভীত সন্ত্রস্ত আফগানরা দেশ ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ওঠেন৷ তালেবান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই, অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে৷ কারো প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না৷’’
ছবি: Stringer/REUTERS
বিদেশিদের নিরাপত্তা থাকবে
কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথমত, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে৷ সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু করতে দিব না৷ আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে৷’’
ছবি: Marc Tessensohn/Bundeswehr/dpa/picture alliance
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক
‘‘আমি আমাদের প্রতিবেশী দেশি, আঞ্চলিক দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের বিরুদ্ধে বা কোন দেশের ক্ষতিসাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ ... আমরা আন্তর্জাতিক সীমানা ও যোগাযোগকে স্বীকৃতি দেই৷ আমাদের সেভাবেই বিবেচনা করা উচিত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা নেই,’’ বলেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ৷
ছবি: Jafar Khan/AP Photo/picture alliance
নারীদের ‘অধিকার’ দেয়া হবে
সংবাদ সম্মেলন মুজাহিদ বলেন, ‘‘ইসলামিক এমিরেট শরীয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আমাদের বোন, আমাদের পুরুষরা একই অধিকার ভোগ করবেন৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমাদের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ কাজ করতে পারবেন৷ ...আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না, তবে অবশ্যই সেটি আমাদের কাঠামোর মধ্যে হবে৷’’
ছবি: Kyodo/picture alliance
গণমাধ্যমে নারীরা কাজ করতে পারবে
সংবাদ সম্মলনে প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ জানান, নতুন সরকারের গঠন হলে তাদের ইসলামিক শরীয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে৷ তবে দ্রুতই বিষয়টি পরিস্কার করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
‘‘আমরা গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যহত থাকবে৷ তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে৷’’ এমন আশ্বাস দিলেও মুজাহিদ বলেন গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে৷ ‘‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে৷...তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
চোরাচালান, মাদক রোধ
মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা দেশের পুরুষ, নারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই কোন ধরনের মাদক আমরা উৎপাদন করব না৷ কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না৷’’ তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেও সহায়তা চান৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/
অর্থনীতি পুনর্গঠন
দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব৷ এজন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে৷ ...অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব৷ এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারব৷’’
ছবি: AP
সরকারে সব পক্ষ থাকবে
সরকারে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে মুজাহিদ জানান, ‘‘আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামিক সরকার থাকবে৷ নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা৷ তারা এ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আলোচনা করছেন৷ কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমাদের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ইসলামিক ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না৷’’
ছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে হাক্কানি মেয়েদের জন্য নারী শিক্ষিকা নিয়োগের কথাও জানান৷ যদি এটি সম্ভব না হয় তাহলে পুরুষ শিক্ষকদেরকে শরিয়া আইন মেনে নারী শিক্ষার্থীদের পড়াতে দেওয়া হবে৷
শনিবার প্রেসিডেন্ট ভবনে তালেবান তাদের পতাকা উত্তোলন করে৷ এর অর্থ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব শুরু করেছে৷ তাদের সরকারে কোন নারী মন্ত্রী নেই৷
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিষয়ে তালেবান এমন এক সময়ে এ ঘোষণা দিয়েছে যখন আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা, ব্যক্তি অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷
গত ১৫ আগস্ট অনেকটা আকস্মিকভাবেই কাবুল দখল করে ইসলামী কট্টরপন্থি এ গোষ্ঠীটি ৷ তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর দেশ ত্যাগের চেষ্টায় হাজার হাজার মানুষ কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিজেদের নাগরিক ও দেশ ছাড়তে চাওয়া এমন অনেক আফগানকে সরিয়ে নেয়৷
ক্ষমতা দখলের পর সংবাদ সম্মেলনে তালেবান নেতারা নারী শিক্ষা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু উদার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রতিনয়তই দেশটিতে সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা তালেবান সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এমন খবর আসতে থাকে৷