1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে ভীত নির্যাতনের শিকার ছাত্রী

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্বিবিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন সবাই৷ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতও বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর অভিযোগ শুনবেন বলে জানিয়েছেন৷

Islamic University, Bangladesh
ছবি: Ruhul Amin

কিন্তু  নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিয়ে দুইটি কমিটি গঠন করেছে মাত্র৷ আর ছাত্রলীগও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷

নির্যাতের শিকার ওই শিক্ষার্থী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''আমি এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি৷ পাবনা গ্রামের বাড়িতে আছি৷ আমাকে এখন হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ আামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে বা সেখানে পড়াশুনা চলিয়ে যেতে পারব কী না জানি না৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ আমার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি৷''

নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন৷ তবে তিনি চাপ ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন৷ অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে  তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন৷ তারা উল্টো বুধবার নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন৷

সাড়ে চার ঘন্টা ধরে শেখ হাসিনা হলে ওই ছাত্রীকে আটকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা করা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে৷ প্রথম বর্ষের ছাত্রী হওয়ায় তার হলে সিট ছিল না৷ তিনি আরেকজনের সঙ্গে অতিথি (দ্বৈত আবাসিক) হিসেবে থাকতেন৷ ছাত্রলীগ নেত্রীদের না জানিয়ে হলে ওঠার অভিযোগে তাকে নির্যাতন করা হয়৷ নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে হত্যারও হুমকি দেয়া হয়৷ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন৷

নির্যাতনের শিকার ছাত্রী যা বললেন

ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘৷ এই কারণে আমাকে ৩০৬ নাম্বার রুম থেকে গণরুমে নিয়ে রাত ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়৷ নির্যাতনের পর আমাকে গণরুমেই শুইয়ে রাখা হয়৷ পর দিন আমি ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে আসি৷''

তিনি জানান, ‘‘আমাকে চড়, লাথি, ঘুষি কিছুই দিতে বাদ রাখা হয়নি৷ এক পর্যায়ে আমার কাপড়চোপড় খুলে বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়৷ আর কয়েকজনের বিরুদ্ধে কিছু অশ্লীল কথা হাসিমুখে পড়তে বাধ্য করে তা রেকর্ড করে রাখা হয়৷''

‘তাদের না জানিয়ে হলে ওঠাই আমার অপরাধ’

This browser does not support the audio element.

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘তাদের নির্যাতনে আমরা মুখমণ্ডলসহ শারীরে বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ হয়ে যাওয়ায় আমাকে সব সময় মুখ ঢেকে, মাস্ক, বোরকা ও হিজাব পড়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়৷ আর আমি এই ঘটনা প্রকাশ করলে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷''

‘‘ওই রাতে গণরুমে আমাকে মারার সময় সেখানে অনেক ছাত্রী ছিলো; কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি৷ আমাদের হলের কোনো শিক্ষকও আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি৷ নির্যাতনের সময় আমার মুখ ঘামছা দিয়ে বেধে রাখা হয়,'' জানান নির্যাতনের শিকার এই ছাত্রী৷

তদন্তে আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

ইসাামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘আমি দুই পক্ষের কাছ থেকেই অভিযোগ পেয়েছি৷ আজ (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি৷ হলের পক্ষ থেকেও আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে৷ উভয় কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবে৷ রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এর আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়৷ কারণ আমাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷''

তিনি জানান, ‘‘নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী এখন ক্যাম্পাসে নেই৷ তার সাথে আমরা কথা বলব৷ তবে তার বিরুদ্ধে কয়েক মিলে একসাথে এসে অভিযোগ দিয়ে গেছে৷ সব অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে৷''

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাহাদাত হোসেন আজাদ জানান, ‘‘ঘটনার পরই ওই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান৷ মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ করতে এসেছিলেন৷ অভিযোগ করার পর আবার চলে গেছেন৷ আমরা তাকে ক্যাম্পাসে আসতে বলেছি৷ তার নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হবে না৷ তবে তদন্ত শেষ হওয়া আগে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না৷''

‘দুটো তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়’

This browser does not support the audio element.

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং হলে বুধবারও নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীরা মহড়া দিয়েছেন৷ তারা ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ভয়ে কথা বলতে পারছেন না বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী৷

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ইমানুল সোহান বলেন, ‘‘নির্যাতনকারীরা ছাত্রলীগ নেত্রী বলেই হয়তো এখনো আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না৷ তবে সংবামাধ্যমে খবর প্রকাশ ও বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসায় তারা আজকে(বুধবার) আজকে কিছুটা নীরব৷ তারা ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দিয়ে চাপ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে৷''

তার কথা, ‘‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখনো প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস করছে না৷ তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ আর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে৷ ছাত্রলীগ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে৷''

এদিকে ওই ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনা হাকোর্টের নজরে এসেছে৷ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার অভিযোগ শুনবেন বলে জানিয়েছেন৷

ছাত্রলীগকে দেখার কেউ নেই?

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকার ইডেন কলেজে সিট বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগেরই এক নেত্রীকে মারধর করে ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপ৷ এই নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ তখন সিট বাণিজ্য ছাড়াও ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে৷ তখন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার ও কমিটি সাময়িক স্থগিত করা হয়৷ পরে আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও কমিটি বহাল করা হয়৷

সম্প্রতি আরো কিছু অঘটন ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ৷ পুরানো ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক ছাত্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিকের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়৷

চলতি মাসেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চার শিক্ষার্থী৷ তাদের মধ্যে দুইজনকে আইসিইউকে রাখতে হয়৷ আইসিইউকে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের কবরে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়৷ এদিকে একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খবর পবিবেশন করায় এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা৷

তবে এসব নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ