২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর – ছয় বছর পর আজও মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার অভিশপ্ত দিনটির কথা মনে পড়লে শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে যায়৷ নৃশংসতার দিক থেকে ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারের সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে এর কোনো ফারাক নেই৷
ছবি: AP
বিজ্ঞাপন
নিউ ইয়র্কের সেই হামলায় গোটা বিশ্ব কেঁপে উঠেছিল৷ কিন্তু ৯/১১-র জঙ্গি হামলার জের যেন এখনও থেকে গেছে৷ বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ঘটে চলেছে একের পর এক হামলা৷ তা সে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক-সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ, নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বোকো হারাম মুসলিম জঙ্গি গোষ্ঠীর দৌরাত্ম, বাংলাদেশের জামাত, ভারতের ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন কিংবা আফগানিস্তানের তালিবান হামলা হোক৷ বুঝতে পারি না কীভাবে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আল-কায়েদা বা তালিবানি নেটওয়ার্ক৷ সন্ত্রাস রুখতে গোটা বিশ্ব একজোট হয়েও কেন বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে? ভাবতে বসলে আমার চিন্তাগ্রন্থি কেমন অবশ হয়ে আসে৷ মনে প্রশ্ন জাগে এই হামলার লক্ষ্য কী? কী তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ৷ প্যান ইসলামিক বিশ্ব গড়ে তোলাই যদি তাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে কেন শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষ? মুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেন অন্য মুসলিম ভাইদের জীবন নিয়ে রক্তস্নান করছে?
মুম্বই হামলার ১০ বছর
২৬ নভেম্বর ২০০৮ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেপেঁ ওঠে হোটেল তাজ৷ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছিল তাজ৷
ছবি: DW/Ashraf
সন্দেহভাজন ডেকান মুজাহিদিন
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইতে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলা চালায় সন্দেহভাজন জঙ্গি সংগঠন ডেকান মুজাহিদিন৷ ছবিতে ভারী অস্ত্র সজ্জিত ডেকান মুজাহিদিনের দুই সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷ অবশ্য কাসাভ ছাড়া সকলে নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
হামলার লক্ষ্যবস্তু
গত বছরের নভেম্বরে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এই ম্যাপে৷
ছবি: AP Graphics
তাজের সামনে কড়া পাহারা
সন্ত্রাসী হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হোটেল তাজ৷ ঘটনার পর তাজ এর সামনে সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান৷(ফাইল ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যেন প্রাণ ফিরে পেলেন
মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে সন্ত্রাসী রা জিম্মি করে দেশের ও বিদেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে৷ ছবিতে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসীদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টায় নিরাপত্তা বাহিনী
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসীরা আটক করে বেশ কয়েকজনকে৷ জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
উদ্ধার কাজ
ঘটনার পর তাজ হোটেলের পণবন্দী দশা থেকে মুক্ত করে এক বিদেশী পর্যটককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীরা৷
ছবি: AP
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলা
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশ একটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশন
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনের ছবি এটি৷ গত বছরের ২৬ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা মুম্বইয়ের একাধিক অভিজাত হোটেল, হাসাপাতালও রেল স্টেশনসহ নয়টি এলাকায় হামলা চালায়৷ এই হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৬৬জন৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী হামলায় আহত
মুম্বইয়ে বুধবার মধ্যরাতের সন্ত্রাসী হামলায় কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজনকে উদ্ধার করছে নিরাপত্তা কর্মীরা৷ মুম্বইয়ের নয়টি স্থানে এই হামলায় কমপক্ষে ১৬৬ জন নিহত হন (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
আহত
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনে সন্ত্রাসী হামলার পর আহত একজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ
দক্ষিণ মুম্বইয়ের প্রধান রেল স্টেশনে পুলিশ এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে আহত একজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী হামলার পর রাস্তায় চেকপোস্ট
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সে সময় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করে৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
স্বজন হারানো মানুষদের আহাজারি
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় স্বজন হারানোর আহাজারি৷ ছবিটি ঘটনার একদিন পর মুম্বইয়ের একটি রেল স্টেশনের কাছ থেকে তোলা৷
ছবি: AP
অবশেষে নিস্তার ...
২৬ নভেম্বরের একদিন পর মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের পণবন্দী দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন দুই বিদেশি পর্যটক৷ তাদের নাম পরিচয় অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি৷
ছবি: AP
তাজ হোটেল, ঘটনার একদিন পর
২৬ নভেম্বর ২০০৮ মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেপেঁ ওঠে হোটেল তাজ৷ ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও জ্বলছিল তাজ৷(ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
ধ্বংসযজ্ঞ
হামলার পর মুম্বই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র৷ (ফাইল ছবি)৷
ছবি: AP
প্রস্তুত সেনা সদস্যরা
মুম্বই হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান৷ ফাইল ফটো৷
ছবি: AP
সর্তক অবস্থান
মুম্বই সন্ত্রাসী ঘটনার দুই দিন পর, তখনও জ্বলছে তাজ৷ সেনাবাহিনীর সদস্যরা কৌশলগত স্থানে সতর্ক অবস্থান৷ (ফাইল ফটো৷)
ছবি: AP
আজমাল কাসাভ
মুম্বই হামলার একমাত্র ধৃত আজমাল কাসাভ৷ (ফাইল ফটো৷)
ঘটনার পর ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রের সে দিনের সংস্করণ৷ (ফাইল ফটো৷)
ছবি: DW/Ashraf
21 ছবি1 | 21
গত ২রা নভেম্বর ভারত-পাক ওয়াঘা সীমান্ত চৌকিতে আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় প্রাণ গেল গোটা পঞ্চাশেক তাজা জীবনের৷ এই তো দু'দিন আগে কাবুলে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা ছিনিয়ে নিল ৪৫টি তরতাজা প্রাণ, যাঁদের ৯৯ শতাংশই মুসলিম৷ এটাকে কী বলবো? এর শেষ কোথায়? পরিণাম কী? মৌলবাদী মুসলিম নেতারা এর নাম দিয়েছে ‘জেহাদ', মানে ধর্মযুদ্ধ....এটা কোন জাতের ধর্মযুদ্ধ বুঝে উঠতে পারি না, যেখানে একই মুসলিম জেহাদির কাছে অন্য মুসলিম ভাইয়ের জীবনের কানাকড়ি দাম নেই৷ কোরানে কিন্তু জেহাদের ভিন্ন অর্থ, যার মর্মার্থ শান্তি৷ এই নির্বিচারে গণহত্যা কি সেকথা বলে? আমার তো মনে হয় বলে না৷
আসলে কিছু কিছু দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চাইছে৷ যদি ২৬শে নভেম্বর মুম্বই হামলার কথা তুলি, তাহলে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে – তাতে শুধু ভারতই নয়, প্রায় গোটা বিশ্ব অভিযোগের আঙুল তুলেছে পাকিস্তানের দিকে৷ মুম্বই জঙ্গি হামলার একমাত্র জীবিত ও ধৃত সন্ত্রাসী আজমল কাসভের জবানবন্দিতেও তা প্রমাণিত যে, মূল চক্রি হলো পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার মাথা হাফিজ সৈঈদ৷ পেছনে কলকাঠি নেড়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংগঠন আইএসআই, অভিযোগ এমনটাই৷ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড হেডলিও জেরার মুখে এ কথাই স্বীকার করেছে৷ অথচ সেই হাফিজ সৈঈদ দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী, এমনকি পাকিস্তানের সমরযন্ত্র চায় না যে, দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ও সদ্ভাব বজায় থাকুক৷ এতে উভয়েরই প্রভাব-প্রতিপত্তির গুরুত্ব কমে না যায়৷
ডিডাব্লিউ বাংলার দিল্লি প্রতিনিধি অনিল চট্টোপাধ্যায়ছবি: DW
তবে জানতে ইচ্ছা করে, ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে, যেখানে নিরন্ধ্র নিরাপত্তার বেড়াজাল, সেখানে কী করে সন্ত্রাসীরাভেদ করে? কীভাবে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে? উচ্চস্তরের প্রশিক্ষণ কে দেয়? কারা দেয়? কীভাবে পারে? কীভাবে মুসলিম যুবকদের ধর্মের নামে মগজ ধোলাই করে তাঁদের মস্তিষ্কে আত্মঘাতী হামলার বীজ বপন করে? একটা কথা কি তাঁরা বোঝে না যে, সহিংসতার পথে যাবার প্ররোচনা কোনো ধর্মই দেয় না৷ ভারতে মাওবাদী সহিংসতা আছে, কিন্তু সেটা ধর্মের কারণে নয়৷ বলিভিয়ার সশস্ত্র আন্দোলন ধর্মের জন্য নয়, শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে৷ অবশ্য মাওবাদীদের বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের স্লোগানের ফানুস ফেটে গেছে৷ এখন স্রেফ পেট চালানোর দায়ে তাঁরা খুন, হত্যা ও রাহাজানিতে নেমে এসেছে৷