বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ৷ বিশেষত গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে অ্যামেরিকা মহাদেশেও৷
বিজ্ঞাপন
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গ্রতিগ্রস্ত হয়েছে হন্ডুরাস, তারপরেই আছে মিয়ানমারের নাম৷
গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কুফলে মারা যায় ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (পিপিপি তে) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ আর এর সরাসরি ফলাফল হিসাবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি৷
‘ইউএনইপি অ্যাডাপ্টেশন গ্যাপ'-এর ২০১৩ সালের রিপোর্টে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা ফলাফলের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে৷ আর বর্তমানে যা ধারণা করা হচ্ছে, তার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়বে ২০৫০ সাল নাগাদ৷ অন্যদিকে ঐ রিপোর্টটিতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ার সীমা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ এতে করে একদিকে যেমন মানুষের দুর্ভোগ কমবে অন্যদিকে নামতে থাকবে খরচের হারও৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন যেভাবে
লক্ষ্যটি খুবই সহজ৷ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শত্রু৷ আর গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো কিছু জিনিস, যা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ব্যবহার কম করলে অর্থ খরচ কমবে, জলবায়ুর জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
এ বিষয়ে কথা বলা
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আপনার কোন ছোট পদক্ষেপ বড় প্রভাব ফেলতে পারে? এটা নিয়ে কথা বলুন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে৷ আর এটা নিশ্চিত করুন যে, এ বিষয়ে তারা যাতে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Gemeinde Saerbeck/U.Gunnka
নিজের বাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
বাড়িতে বৈদ্যুতিক সেবা দেয়ার জন্য এমন কোম্পানিকে বেছে নিতে হবে যারা তাদের বিদ্যুত উৎপাদনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতাস বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে এবং যাতে তারা ‘গ্রিন ই এনার্জি’র অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়৷ যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজের বিদ্যুৎ বিলের দিকে নজর রাখুন৷ অনেক কোম্পানি বিলে লিখে দেয়, তাদের বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Chinatopix
আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা
ঠান্ডার সময় বাড়ির তাপমাত্রা বাড়ানো বা গরমের সময় শীতল করতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়৷ তাই নিজের আবাসস্থলকে ‘এনার্জি এফিসিয়েন্ট’ বা জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, যাতে ঘরে বাতাস চলাচল এবং বাতাস বন্ধ রেখে উত্তাপ বাড়ানোর সহজ ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: Imago/Westend61
জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি
১৯৮৭ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়৷ এ ধরনের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে এ পর্যন্ত সেখানকার বাতাসকে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত রাখা গেছে, যা বছরে ৪৪ কোটি গাড়ি থেকে নিঃসরণ হয়৷ জ্বালানি সাশ্রয়ী খুব কম খরচে কার্বন নিঃসরণ রোধের সহজ উপায়৷ তাই রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন এবং এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার সময় ‘এনার্জি স্টার’ লেবেল দেখে কেনা উচিত৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/C. Ohde
পানি খরচ কমানো
পানির অপচয় রোধ করেও কার্বন দূষণ কমানো যায়, কেননা, পানি পাম্প করতে, গরম করতে বা ঠাণ্ডা করতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়৷ তাই গোসল করার সময় কম পানি খরচ করুন৷ প্রয়োজন না হলে দাঁত মাজার সময় পানির কল বন্ধ রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
যেসব খাবার কিনছেন পুরোটা খান, মাংসের উপর চাপ কমান
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ভাগ জ্বালানি খরচ হয় খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত করা এবং সরবরাহে৷ তাই খাবার কম অপচয় করলে জ্বালানি বা শক্তি কম খরচ হয়৷ গবাদি পশু পালনে প্রচুর জ্বালানি অপচয় হয়৷ তাই মাংস খাওয়া কমালে বিরাট পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷
ছবি: Colourbox
ভালো বাল্ব কিনুন
অন্য সব বাল্বের চেয়ে এলইডি বাল্ব শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে৷ এসব বাল্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং খরচও কম৷ ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব, সাধারণ ৬০ ওয়াটের বাল্বের কাজ দেয় এবং এতে অনেক কম খরচ হয়৷
ছবি: AP
প্লাগ খুলে রাখুন
বাড়ির সব যন্ত্রপাতি যোগ করলে হয়ত দেখা যাবে ৬৫টি আলাদা যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো বিদ্যুতের সাহায্যে চলে৷ তাই যেসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে, সেগুলো চার্জে দিয়ে না রাখা, বা কোনো টাইমার সেট করা যাতে নির্দিষ্ট সময় পর চার্জিং বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া কম্পিউটার বা ট্যাব, ফোনের মনিটর কম পাওয়ার মোডে দিলেও জ্বালানির কম অপচয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Pape
জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার
গ্যাস-স্মার্ট গাড়ি, যেমন হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক যান চালালে জ্বালানি এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/P. Mlch
বিমান, ট্রেন এবং অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে আর একবার ভাবুন
বড় শহরগুলোতে যতটা পারেন হাঁটুন বা গণ পরিবহন ব্যবহার করুন৷ এর ফলে ব্যয়ও কমবে, জ্বালানির অপচয়ও কম হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমবে৷ এছাড়া অনেক মানুষ যদি বিমানে চড়া কমিয়ে দেয়, তাহলে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে৷ কেননা, আকাশ পথে চলাচল জলবায়ু দূষণের অন্যতম বড় মাধ্যম৷ বিমানের বিকল্প হিসেবে যদি ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটাই বেছে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Balzarini
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে লবণ সহিষ্ণু ধান নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ মাটি লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় সূর্যমুখীর ফুলের আবাদও বেড়েছে৷ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট৷ প্রচলিত ধানের বদলে এ ধরনের ধান চাষ যত বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ততই সহজ হবে৷
ছবি: CC/Rishwanth Jayaraj
11 ছবি1 | 11
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি
১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল, এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যায়ক্রমে হন্ডুরাস, মিয়ানমার ও হাইতি৷ চতুর্থ অবস্থানে আছে নিকারাগুয়া, পঞ্চম ফিলিপাইন ও ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ৷
ভিন্ন কোনো বিপর্যয়, অথবা ক্রমাগত হুমকি?
মিয়ানমারে ২০০৮ সালের ‘ঘূর্ণিঝড় নার্গিস'-এর কারণে যে পরিমাণ মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে, তা গত দুই দশকের অন্যান্য ঘটনার চেয়ে ৯৫ ভাগ বেশি৷ একইভাবে হন্ডুরাসে, ১৯৯৮ সালের ‘হ্যারিকেন মিচ'-এর কারণে ৮০ ভাগের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ১০তম অবস্থানে থাকা থাইল্যাণ্ডে ২০১১ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়৷ ২০১২ সালের ‘হ্যারিকেন প্যাট্রিসিয়া'র ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে৷ এই সময়ে সাইক্লোনের ঘটনা ঘটেছে ২৭টি৷ ফলে আবারও বলা দরকার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছে স্বল্পোন্নত ও ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো৷
জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সংযোগ
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো দাবদাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, যা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ২০১৪ সালের মূল্যায়নে এই বিষয়গুলো উঠে আসে৷ ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বড় অংশে দাবদাহ ক্রমাগত বাড়ছে৷ একইভাবে, উত্তর অ্যামেরিকা ও ইউরোপে ভারী বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে এবং কিছু দিন পরপরই বিশ্বের নানা জায়গায় একই উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে৷
অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার ওপর প্রভাব
বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের মতো ধনী দেশগুলোর এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়তো তাদের খুব একটা গায়ে লাগবে না৷ কিন্তু দরিদ্র কোনো দেশের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির কথা একবার ভেবে দেখুন! এই টাকা তাদের বার্ষিক জিডিপির একটি বড় অংশ৷ কাজেই তাদের অর্থনীতির ওপর কেমন প্রভাব পড়বে! আর ঘুরেফিরে সেই দেশের মানুষের ওপরই তো গিয়ে পড়ে সব ভোগান্তি৷
বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যেসব প্রভাব পড়ছে বলে আমরা উল্লেখ করেছি, এর সবগুলো ঘটতে শুরু করেছে বাংলাদেশেও৷ আশংকার কথা হলো, দিন দিন বাড়ছে এগুলো৷
খরা, বন্যা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের কয়েকটি জাত
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে৷ তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো বেশ কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যম খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ততা সহনীয় ধান
ব্রি ৫৫ হচ্ছে আউশ ও বোরো মৌসুমের ধান৷ এটি মাঝারি খরা, ঠান্ডা ও লবণাক্ত পরিবেশ সহ্য করতে পারে৷ আউশ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫ টন ফলন হলেও বোরো মৌসুমে এই জাত ফলন দেয় প্রতি হেক্টরে সাত টন৷ ব্রি ৫৫ ধান ১০-১২ দিন সেচহীন অবস্থায় এবং ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮ ডিএস/মিটার (প্রতি মিটারে ৮ ডেসিসিমেন্স) লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে৷ ১৪৫ দিনের মধ্যে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
অধিক খরা সহিষ্ণু জাত
ব্রি ৫৭ জাতের এই ধানটিও আমন মৌসুমের৷ এটিও খরা সহনীয় ধান৷ পানির স্তর ২০ সেমি নীচে নেমে গেলেও এ জাতটি টিকে থাকতে পারে৷ এর ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩ থেকে চার টন৷ ১০৫ দিনে এ ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
খরা সহনীয় জাত
খরা সহনীয় আগাম আমন মৌসুমের ধান হলো ব্রি ৫৬৷ ১৫ থেকে ১৬ দিন সেচহীন অবস্থায় টিকে থাকতে পারে৷ ব্রি ৫৬ প্রতি হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন ফলন দেয়৷ বীজতলা থেকে শুরু করে ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযোগী হয়৷
ছবি: M. Mamun
খরাপ্রবণ এলাকার ধান
ব্রি ৪৩ বোনা আউশের আগাম জাত ও কিছুটা খরাসহিষ্ণু৷ ছিটিয়ে, সারি করে এবং ডিবলিং- এই তিন পদ্ধতিতেই এর বীজ বোনা যায়৷ জাতটির জীবনকাল মাত্র ১০০ দিন৷ উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এই ধান হেক্টর প্রতি সাড়ে তিন টন ফলন দিয়ে থাকে৷
ছবি: M. Mamun
অতি খরা সহনশীল
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রি ৭১ ধানের জাত৷ খরা সহনশীল জাতটি প্রজনন পর্যায়ে ২১ থেকে ২৮ দিন বৃষ্টি না হলেও টিকে থাকতে পারে৷ দেখতে মাঝারি মোটা আকৃতির৷ জীবনকাল ১১৪ থেকে ১১৭ দিন৷ অতি খরা বা মাটির আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে থাকলেও প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টন, মধ্যম মানের খরায় চার টন ও খরা না থাকলে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত ফলন হয়৷
ছবি: M. Mamun
ঝড়, বৃষ্টি সহিষ্ণু ধান
ব্রি ২৯ জাতের ধান চাষে সেচ, সার ও সময় কম লাগে৷ ঝড়, বৃষ্টিতেও হেলে পড়ে না৷ ১৬০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায়৷ বিঘা প্রতি ফলন ২৪-২৮ মন৷
ছবি: M. Mamun
বন্যা সহিষ্ণু ধান
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি প্রায়ই আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়৷ এ ধরনের বন্যা সহ্য করতে পারে এমন কিছু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ এর মধ্যে একটি ব্রি ৫১৷ এটি টানা ১৫ থেকে ১৭ দিন পানির নীচে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না৷ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ হেক্টরে ৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়৷ দক্ষিণাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ধানের জাত এটি৷
ছবি: M. Mamun
অধিক বন্যা সহনশীল
ব্রি ৭৯ জাতের ধানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ১৮ থেকে ২১ দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও ফলনের তেমন ক্ষতি হয় না৷ আর এত দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে না পড়লে স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হেক্টর প্রতি ৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম৷
ছবি: M. Mamun
লবণ সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল
আমন জাতের ব্রি-৭৩ ধান লবণসহিষ্ণু ও অধিক ফলনশীল৷ চাল মাঝারি চিকন ও সাদা৷ ভাতও হয় অন্য চালের চেয়ে ঝরঝরে৷ প্রতি হেক্টরে স্বাভাবিক ফলন হয় সাড়ে চা টন৷ কম লবণাক্ত জমিতে এ ধান ৬ দশমিক ১ টন ফলন দিতে পারে৷ এ জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও অনেক কম৷
ছবি: M. Mamun
একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু
ব্রি ৭৮ জাতের আমন ধানটি একাধারে বন্যা ও লবণসহিষ্ণু৷ বাংলাদেশে এই জাতের ধান এটিই প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে৷ এর আগে আলাদাভাবে লবণাক্ততা ও বন্যা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছিল৷ সে রকম দুই জাতের ধানের জিন একীভূত করে ব্রি-৭৮ উদ্ভাবন করা হয়েছে৷
ছবি: M. Mamun
জোয়ার-ভাটায় চাষের উপযোগী
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষের উপযোগী জাত ব্রি ৭৬৷ এ জাতের ধানগাছের উচ্চতা ১৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়৷ এ জাতের ধান অন্য যে-কোনো আমনের চেয়ে হেক্টরপ্রতি এক টন বেশি ফলন দেয়৷
ছবি: M. Mamun
উচ্চমাত্রার আমিষযুক্ত ধান
১৯৯৭ সালে ইরান থেকে নিয়ে আসা ‘আমল ৩’-এর সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় মেগাজাত ব্রি ২৮-এর সংকরায়ণ ঘটিয়ে ব্রি’র বিজ্ঞানীরা নতুন জাতের একটি ধানের উদ্ভাবন করেছেন৷ এর নাম ব্রি ৮১৷ বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন জাতের ধানের ফলন হবে প্রচুর, মানের দিক থেকে হবে রপ্তানিযোগ্য৷ এছাড়া এতে আমিষও থাকবে বেশি৷
ছবি: M. Mamun
উচ্চ ফলনশীল সরু চালের ধান
জাতের নাম ব্রি ৬৩৷ এই জাতের ধান থেকে বোরো মৌসুমে উচ্চমানের চাল পাওয়া যায়৷ এর চাল সরু ও গুণাগুণ বালাম চালের মতো বলে জাতটি সরু বালাম নামে পরিচিত৷ এ ধানের চাল বাসমতির মতো লম্বা ও চিকন৷ ১৪৮ থেকে ১৫০ দিনে ফসল ঘরে তোলা যায় এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টরে সাড়ে ছয় থেকে সাত টন ফলন হয়৷ ব্রি ৬৩-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত ধানের জাতের চেয়ে অনেক কম৷
ছবি: M. Mamun
13 ছবি1 | 13
বছরের প্রায় দশ মাস গরম থাকা, শুধু গরম বললে ভুল হবে৷ তীব্র গরম৷ বছরে কোনো রকমে দুই মাস তাপমাত্রা একটু কম থাকে, যার মধ্যে এক মাসকে আমরা এখন শীতকাল বলে ধরে নিই৷ সেটি সাধারণত নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ এক মাস পর শীত আসবে, অথচ তখনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে৷ বছরের মাঝখানে কারণে-অকারনে শুরু হয় অতিবৃষ্টি, যার ফলাফল হলো বন্যা৷ এ বছর যেমন শরৎকালেও ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে৷
এসব ঘটনাকে গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন৷ এসবের ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমছে, বাড়ছে নিত্য নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অসুখ-বিসুখ৷ সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা৷ ফলাফল হিসেবে শহরাঞ্চলে বস্তিবাসীর সংখ্যাও বাড়ছে৷
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানিয়েছে যে, এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে৷ দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ওই ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি আছে৷ এ কারণে ঘর হারাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ৷
পার্বত্য এলাকায় অতিবৃষ্টি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বিভাগে এরইমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে৷ মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার, টেকনাফসহ এই বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দুইগুণ বেশি বৃষ্টি হয়৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীষ্মে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় পাহাড় এলাকার মাটির বুনন হালকা হয়ে যায়, আবার পরে অতি বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা এসব এলাকায় বাড়ছে৷ অবশ্য অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটাও এমন ধসের অন্যতম কারণ৷
বজ্রপাত
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে ১৭০ জন৷ আর গত সাত বছরে মারা গেছে ১ হাজার ৭৬০ জন৷ গবেষকরা বলছেন, কোনো জায়গায় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে যায়৷ সেখানে গত ৩০ বছরে সারা বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ১ ডিগ্রি৷ ফলে বেড়ে গেছে বজ্রপাতও৷
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
চলতি বছর পরপর তিনটি বন্যায় দেশের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়৷ বিশেষ করে উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ার সময় দেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে৷ ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের, যার খেসারত দিতে হয় বা হবে সব মানুষকেই৷
এছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে বেশি বেশি ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে৷ স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চার-পাঁচটি বড় বড় ঘূর্ণিঝড় হয়৷ এছাড়া গত এক দশকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু ও মোরা৷ এ ধরনের আঘাতের সংখ্যা যে বাড়বে তা বলা চলে নির্দধায়৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷