বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নাগাল পেতে আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ
২৬ এপ্রিল ২০১৯
গত কয়েক দশকে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক টেলিস্কোপ মহাকাশের প্রত্যন্ত অংশকেও বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে দিচ্ছে৷ এবার ইউরোপের এক টেলিস্কোপ এক্ষেত্রে বড় এক অভাব পূরণ করছে৷
বিজ্ঞাপন
২৩ মিটার ব্যাস ও ৪৫ মিটার দীর্ঘ এই টেলিস্কোপের পোশাকি নাম ‘লার্জ সাইজড টেলিস্কোপ নাম্বার ওয়ান'৷ অত্যন্ত শক্ত অথচ হালকা কার্বন তন্তু দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে৷ ফলে সেটি অত্যন্ত দ্রুত ঘোরানো যেতে পারে, এতকাল যা সম্ভব ছিল না৷
মিউনিখ শহরের বিজ্ঞানীরা এই প্রকল্প রূপায়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন৷ মাক্স প্লাংক ইনস্টটিউটের বাগানে গবেষকরা এক পরীক্ষামূলক নকল গড়ে তুলেছেন৷ সেখানেই তাঁরা গোটা কাঠামোর খুঁটিনাটি বৈশিষ্ট্যগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী রদবদল করেছেন, যাচাই করে দেখেছেন৷ এ যেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এক জিম! ডেভিড গ্রিন এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কার্বন তন্তু দিয়ে তৈরি কাঠামোয় লেন্স বসানোর সব সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখেছি৷ তাছাড়া ডিস্কের উপর বসানোর জন্য নতুন এক সরঞ্জাম তৈরি করেছি৷ এখানে সেটি পরীক্ষা করে তার কার্যকারিতা নিশ্চিত করেছি৷ ফলে লা পালমা-য় গিয়ে সেখানে শুধু মূল বস্তুটি বসালেই চলবে৷''
তিন বছর ধরে ১০০ সদস্যের এক আন্তর্জাতিক টিম প্রায় ৪০ কোটি ইউরো মূল্যের এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন৷ বিশাল এই টেলিস্কোপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গামা রশ্মির বিকিরণ পরিমাপ করতে পারে৷ এই রশ্মি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গভীরের বার্তা বহন করে৷ যেমন অন্য কোনো ছায়াপথে নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ঘটলে অবিশ্বাস্য দূরত্ব অতিক্রম করে গামা রশ্মি সেই বার্তা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়৷ এই প্রকল্পে গবেষণার এই ক্ষেত্রটি নতুন মাত্রা পাচ্ছে৷
ডেভিড গ্রিন নিজে লা পালমায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে বেশ উচ্ছ্বসিত৷ ডেভিড বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানের অর্ধেক অংশ পার্টি, বাকি অর্ধেক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের মতো ছিল৷ প্রথম টেলিস্কোপের কাজ শেষ হবার পর সবাই খুবই উত্তেজিত ছিলেন৷ তবে আমরা এ বিষয়ে সচেতন, যে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে৷ নির্ভুলভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে, ক্যামেরা ঠিকমতো চালু রাখতে হবে, সবকিছু ঠিকমতো চলতে হবে৷''
যে সব বিজ্ঞানীরা বিশেষ এই ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন, এখনো পর্যন্ত তাঁদের দৃষ্টিশক্তি সীমিত ছিল বলা চলে৷ নতুন ‘লার্জ সাইজ টেলিস্কোপ' তাঁদের দূরের বস্তু দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে৷ এই ক্ষমতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি ছিল৷ ইউরোপের নতুন এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ২০৪৮ সাল পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
নাসার ৬০ বছরের ইতিহাসের ছয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা
নাসার প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তিতে ডয়চে ভেলে ছয়টি ঘটনার কথা তুলে ধরছে যা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা হিসেবে নাসাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়৷
ছবি: AP/DW
এক্সপ্লোরার ১ – নাসার চেয়েও পুরনো
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে মহাকাশে স্পুটনিক স্যাটেলাইট পাঠায়৷ তখন অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়নি৷ ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এইদিক থেকে এগিয়ে যায় এবং মহাকাশে সোভিয়েত আধিপত্যের শঙ্কা সৃষ্টি হয়৷ পরের বছরই অবশ্য মার্কিন সেনাবাহিনী এক্সপ্লোরার ১ (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) মহাকাশে পাঠাতে সক্ষম হয়৷ আর সেবছরের ২৯ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে নাসা সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়৷
ছবি: NASA/JPL-Caltech
চাঁদে মানুষ
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের বুকে মানুষের পায়ের ছোয়া পড়ে৷ সৃষ্টির ১১ বছরের মাথায় এই সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয় নাসা৷ সেসময় বর্তমান কালের স্মার্টফোনের চেয়েও অনেক কম ক্ষমতার ‘কম্পিউটিং পাওয়ার’ ব্যবহার করে সেই মিশন সফল করতে সক্ষম হয়েছিল মহাকাশ সংস্থাটি৷ ছবিতে নিল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিনকে চাঁদের মাটিতে মার্কিন পতাকাযুক্ত খুঁটি বসাতে দেখা যাচ্ছে৷
১৯৭০ সালের ১৪ এপ্রিল অ্যাপোলো ১৩ মহাকাশযানের একটি অক্সিজেন ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটে৷ সেসময় মহাকাশচারী জেমস লাভেল (মাঝখানে) টেক্সাসে নাসার ঘাঁটিতে সমস্যার কথা জানা৷ এক ঝুঁকিপূর্ণ সংষ্কার অভিযানের পর অবশ্য দলটি পৃথিবীতে ফিরতে সক্ষম হয়৷ পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অ্যাপোলো ১৩’ ছবিতে লাভেলে’র ‘হুস্টন, উই হ্যাভ হ্যাড এ প্রব্লেম’ বাক্যটি কিছুটা ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছিল, যা বিখ্যাত হয়ে যায়৷
‘চ্যালেঞ্জার স্পেস শ্যাটলটি’ অবশ্য ‘অ্যাপোলো ১৩’-র মতো ভাগ্যবান ছিল না৷ ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি সেটি উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিট পরই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায়৷ ফলে মারা যায় সেটির সব মানে সাত আরোহী৷ প্রখ্যাত মহাকাশচারী রিচার্ড ফিমান মনে করেন, সামান্য এক রাবার সিলের কারণে, যেটি অপ্রত্যাশিত ঠান্ডা তাপমাত্রায় ঠিকভাবে কাজ করেনি, মহাকাশযানটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/B. Weaver
বৈরিতার সমাপ্তি
রুশ এবং মার্কিন বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীতলযুদ্ধের সময়ে সৃষ্ট রেষারেষির চূড়ান্ত অবসান ঘটে ১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ সেদিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ইউনিটি মডিউল এবং রাশিয়ায় তৈরি জারিয়া মডিউল মহাকাশে যুক্ত হয়৷ এই দুই মডিউলের মাধ্যমে মহাকাশে বর্তমানে পরিচিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
মঙ্গলে নাসা
মঙ্গলে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট নাসার কিউরিওসিটি রোভার অবতরণ করে৷ এই মোবাইল গবেষণাগারটি এখনো মঙ্গল গ্রহ থেকে বিজ্ঞানিক তথ্যউপাত্ত এবং সেলফি পাঠাচ্ছে, এমনকি টুইটও করছে৷ কিউরিওসিটির পাঠানো তথ্যউপাত্ত নাসার পরবর্তী মিশনের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷ ২০৩০ সালের দিকে মঙ্গলে মানুষ পাঠাতে চায় মার্কিন মহাকাশ সংস্থাটি৷