বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য ভেদ করতে অভিনব উদ্যোগ
৯ ডিসেম্বর ২০১৯দেশ হিসেবে জার্মানিকে বড় বলা যেতে পারে? পৃথিবীর তুলনায় বেশিরভাগ দেশই তো বেশ ছোট৷ পৃথিবীও তো আমাদের সৌরজগতের অনেকগুলি গ্রহের একটিমাত্র৷ সেই সৌজগতের সূর্যও নক্ষত্র হিসেবে আমাদের ছায়াপথের প্রায় ৩০,০০০ কোটি নক্ষত্রের একটি৷ সে সবই মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের অংশ৷
এমন এক গ্যালাক্সিকে কিশমিশের আকারে ছোট করে এনে হাতের মুঠোয় ধরার স্বপ্ন দেখেন মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ ইয়খেন ভেলার৷ তাঁর মতে, ‘‘এমন দূরত্ব কল্পনাই করা যায় না৷ তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের টেলিস্কোপের মাধ্যমে এত দূর পর্যন্ত নজর দিতে পারি, যার মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে এক বিস্ময়কর ধারণা পাওয়া যায়৷''
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অনেকটা ইস্ট দিয়ে তৈরি কেকের মতো৷ কিশমিশগুলিকে সেখানে গ্যালাক্সি হিসেবে ভাবা যেতে পারে৷ ইয়খেন ভেলার বলেন, ‘‘এমন কেক বেক করার সময় শুরুতে কিশমিশগুলি পরস্পরের কাছে থাকে৷ ওভেনের মধ্যে কেক ফুলে উঠলে কিশমিশগুলি পরস্পরের থেকে দূরে চলে যায়৷ সেগুলির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে৷''
আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও অনেকটা সে রকম৷ সেটির সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে৷ তার গতিও বাড়ছে৷ কয়েকশো কোটি গ্যালাক্সি পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷
এই ঘটনার মধ্যেই বড় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ ঠিক কোন শক্তি এই সম্প্রসারণ ঘটিয়ে চলেছে? গবেষকরা একে অন্ধকার শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন৷ অনেকটা ইস্ট দিয়ে তৈরি কেকের মধ্যে অন্তর্নিহিত শক্তির মতো৷
সেই শক্তির চরিত্র বুঝতে গবেষকরা গ্যালাক্সি থেকে বিচ্যুত এক্সরে-র পেছনে ধাওয়া করছেন৷ কিন্তু আমাদের থেকে এত দূরে থাকার কারণে একটা গোটা গ্যালাক্সির আলোও খুব দুর্বল৷ গবেষকদের তাই একাধিক গ্যালাক্সির প্রয়োজন৷ মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ হিসেবে ইয়খেন ভেলার বলেন, ‘‘আমরা আবার গ্যালাক্সিকে কিশমিশ হিসেবে দেখি৷ আমাদের কাছে গ্যালাক্সিগুলি লাইটহাউসের মতো৷ আমরা সেগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷ অকল্পনীয় দূরত্বে সেগুলি ছড়িয়ে রয়েছে৷ গ্যালাক্সিগুলির সাহায্যে আমরা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিমাপ করতে পারি৷''
ই-রোসিটা এক্স রে টেলিস্কোপে সেই লাইটহাউসের আলো ধরা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এটির মধ্যে কিন্তু কোনো লেন্স নেই৷ আছে সোনা দিয়ে মোড়া বাঁকানো আয়না৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়া মেরলোনি জানান, ‘‘নলের পাশ থেকে এক্স-রে এসে এটির প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে সেই রশ্মি লাফিয়ে ওঠে৷ ফলে এভাবে সাধারণ টেলিস্কোপের মতো একটি বিন্দুর দিকে নজর দেওয়া সম্ভব৷ আমরা বেশ কয়েকটি এমন নল তৈরি করেছি৷ সবকটির সমন্বয়ে তৈরি এই টেলিস্কোপ দূরের ব্রহ্মাণ্ড ও দূরের কিশমিশ পর্যবেক্ষণ করতে পারে৷''
নিজস্ব মহাজাগতিক বিকিরণ সত্ত্বেও অত্যন্ত সংবেদনশীল ও নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করতে পারে – এমন যন্ত্র তৈরি করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ তবে সেই কাজ সফল হয়েছে৷
পৃথিবী থেকে দেড়শো কোটি কিলোমিটার দূরে গিয়ে ই-রোসিটা মহাকাশে অনুসন্ধান চালানোর কাজ শুরু করছে৷
স্টেফান গাইয়ার/এসবি