বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে ঘেরাও করে রেখেছে ছাত্ররা। তিনজন ছাত্রের উপর থেকে শাস্তি না উঠলে আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকমাস ধরেই ছাত্র আন্দোলন চলছে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে গত পাঁচ দিনে তা চরম পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছে ছাত্ররা। বুধবার সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কংগ্রেসের ছাত্রশাখা ছাত্র পরিষদ। বৃহস্পতিবার তাতে যোগ দিয়েছে তৃণমূলের ছাত্রশাখা তৃণমূল ছাত্রপরিষদ এবং সিপিএমের ছাত্রশাখা এসএফআই। আন্দোলনরত ছাত্ররা উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগ দাবি করেছে।
উপাচার্যও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করে একটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ দিয়ে ছাত্র আন্দোলন সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে সেখানে। ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসে পৌঁছেছে পুলিশ। উপাচার্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন বলে পুলিশ প্রহরা বসেছে বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। উপাচার্যের অভিযোগ, ছাত্ররা কার্যত তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। খাবার পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রদের পাল্টা বক্তব্য, সকাল-বিকেল উপাচার্যকে খাবার পাঠাচ্ছে ছাত্ররাই। বুধবার সকালে এবং সন্ধ্যায় উপাচার্যকে খাবার পাঠানো হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ।
শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক যোগসূত্রকে আরো শক্তিশালী করতে শান্তিনিকেতনে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ভবন৷ এর জন্য ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ৷ এখানে ৪৫০ আসনের প্রেক্ষাগৃহসহ একটি সংগ্রহশালা ও পাঠাগারও রয়েছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
শুভ উদ্বোধন
রবীন্দ্রনাথের সার্ধ-শতবর্ষের সময়ই শান্তিনিকেতনে এই ভবন গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শেখ হাসিনা৷ তখন থেকেই তিনি প্রতীক্ষায় ছিলেন৷ শুক্রবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো৷ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ ভবনের৷ আশা, ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় খুলে যাবে এবার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আনন্দযজ্ঞ
বাংলাদেশ ভবনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে৷ সাধারণের ব্যবহারের করার কথা ভেবেই বাড়িটিতে একটি ক্যাফেটোরিয়াও রাখা হয়েছে৷ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শান্তিনিকেতনে এসে বাড়িটির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ তদারকি করে গিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে চাঁদের হাট
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের দিন শান্তিনিকেতনে উপস্থিত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা৷ ছিলেন বহু রবীন্দ্র অনুরাগীও৷ এদিনই ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবর্তন৷
ছবি: DW/P. Samanta
কবি ও মুজিবুর
বাংলাদেশ ভবন যে শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই৷ বাংলাদেশ ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুরাল’ স্থাপন করা হয়েছে৷ ভেতরেও দেখা মিলবে তাঁদের৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্মারক
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক সংগ্রহশালায় দেখা মিলবে জানা-অজানা কিংবা চেনা অচেনা বস্তুর৷ কিন্তু রবীন্দ্র অনুরাগী মাত্রেই জানেন পদ্মার বোটের প্রতিরূপটির কথা৷ কবিগুরুর জীবনের একটা বিশেষ সময় কেটেছে বাংলাদেশে৷ সেই সব স্মৃতিকে নিয়ে গড়া হয়েছে বাংলাদেশ ভবনের গ্যালারি৷ এখানেই ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কবিগুরুর বাংলাদেশে কাটানোর নানা স্মৃতিবাহী স্মারক, ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পায়ে পায়ে শান্তিনিকেতন
বিশ্বভারতীতে আজকাল পর্যটকদের জন্য প্রায়ই যানজট হয়৷ ব্যক্তিগত গাড়ি বা টোটোর উৎপাতে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে যান৷ তবে এমন আনন্দঘন মুহূর্তকে ধরে রাখতে কেউ কেউ পায়ে পায়েই বেরিয়ে পড়েছেন৷ পুলিশি নিরাপত্তায় শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন ভবনগুলি আর বিখ্যাত মনীষীদের বাড়িগুলিও দেখে নিয়েছেন তাঁরা৷ ছবিতে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’৷
ছবি: DW/P. Samanta
আলোকিত মঞ্চ
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবার শান্তিনিকেতনে এলেন বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সঙ্গে ছিলেন দুই বাংলার দুই নেত্রী৷ কাজেই তিস্তার জলবণ্টন সমস্যা বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে কোনো কথাই হয়নি, এটা ভাবা যায় না! বাংলাদেশে এ বছরই সাধারণ নির্বাচন৷ তাই শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ সফর বাড়তি তাৎপর্য পাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
7 ছবি1 | 7
ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ জানুয়ারি। ওই দিন শান্তিনিকতেনর প্রাণকেন্দ্র ছাতিমতলায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্ররা। ফি-বৃদ্ধি সহ একাধিক বিষয়ে ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখান। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এরপর তিন ছাত্র-- সোমনাথ সৌ, ফাল্গুনী পান এবং রূপা চক্রবর্তী অর্থনীতি বিভাগের একটি ঘরের তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন। এরপরেই উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই তিন ছাত্রকে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করে। সাসপেনশনের নোটিস আসার পরেই একাধিক ছাত্র সংগঠন আন্দোলনে নেমে পড়ে। বারংবার উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও তারা পারেননি বলে অভিযোগ করেন। শেষপর্যন্ত উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেননি তারা।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক অশান্তি শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার সঙ্গে বিজেপি এবং আরএসএস-এর যোগাযোগ আছে বলেও একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। শুধু ছাত্ররা নয়, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরাও তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। উপাচার্য অবশ্য বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এর আগে ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ঘটনাচক্রে বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে এবং তার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন উপাচার্য। তবে প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে সমস্ত তথ্য তিনি জানিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।