শুরু হয়েছে ভয়ংকর কথার লড়ই। একদিকে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ।
ছবি: Payel Samanta/DW
বিজ্ঞাপন
এবারের বিবাদটা শুরু হয়েছে অমর্ত্য সেনের জমিবিবাদকে কেন্দ্র করে। বিশ্বভারতীর অভিযোগ, অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীতে ৩৩ ডেসিবেল জমি বেশি নেয়া আছে। তারা এখন সেই জমি ফেরত চাইছে। কিন্তু অমর্ত্য সেনও তার দাবিতে অনড়। তিনি বলছেন, তার বাবার আমলে লিজে নেয়া জমির উপর বাড়ি হয়েছে। একটুও জমি বেশি নেয়া হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তার কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে। তিনি সেই প্রমাণ অমর্ত্য সেনকে দেখিয়েছেন। মমতার দাবি, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ মানছে না। ওদের কথা তিনি আগে শুনবেন। তারপর নিজেদের কথা বলবেন।
মমতা বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন। ঠাকুর পরিবারের শেষ বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুরের বাড়ির সামনেও বিশ্বভারতী পাঁচিল তুলে দিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার প্ল্যান তৈরি।
শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক যোগসূত্রকে আরো শক্তিশালী করতে শান্তিনিকেতনে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ভবন৷ এর জন্য ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ৷ এখানে ৪৫০ আসনের প্রেক্ষাগৃহসহ একটি সংগ্রহশালা ও পাঠাগারও রয়েছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
শুভ উদ্বোধন
রবীন্দ্রনাথের সার্ধ-শতবর্ষের সময়ই শান্তিনিকেতনে এই ভবন গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শেখ হাসিনা৷ তখন থেকেই তিনি প্রতীক্ষায় ছিলেন৷ শুক্রবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো৷ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ ভবনের৷ আশা, ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় খুলে যাবে এবার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আনন্দযজ্ঞ
বাংলাদেশ ভবনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে৷ সাধারণের ব্যবহারের করার কথা ভেবেই বাড়িটিতে একটি ক্যাফেটোরিয়াও রাখা হয়েছে৷ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শান্তিনিকেতনে এসে বাড়িটির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ তদারকি করে গিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে চাঁদের হাট
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের দিন শান্তিনিকেতনে উপস্থিত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা৷ ছিলেন বহু রবীন্দ্র অনুরাগীও৷ এদিনই ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবর্তন৷
ছবি: DW/P. Samanta
কবি ও মুজিবুর
বাংলাদেশ ভবন যে শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই৷ বাংলাদেশ ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুরাল’ স্থাপন করা হয়েছে৷ ভেতরেও দেখা মিলবে তাঁদের৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্মারক
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক সংগ্রহশালায় দেখা মিলবে জানা-অজানা কিংবা চেনা অচেনা বস্তুর৷ কিন্তু রবীন্দ্র অনুরাগী মাত্রেই জানেন পদ্মার বোটের প্রতিরূপটির কথা৷ কবিগুরুর জীবনের একটা বিশেষ সময় কেটেছে বাংলাদেশে৷ সেই সব স্মৃতিকে নিয়ে গড়া হয়েছে বাংলাদেশ ভবনের গ্যালারি৷ এখানেই ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কবিগুরুর বাংলাদেশে কাটানোর নানা স্মৃতিবাহী স্মারক, ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পায়ে পায়ে শান্তিনিকেতন
বিশ্বভারতীতে আজকাল পর্যটকদের জন্য প্রায়ই যানজট হয়৷ ব্যক্তিগত গাড়ি বা টোটোর উৎপাতে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে যান৷ তবে এমন আনন্দঘন মুহূর্তকে ধরে রাখতে কেউ কেউ পায়ে পায়েই বেরিয়ে পড়েছেন৷ পুলিশি নিরাপত্তায় শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন ভবনগুলি আর বিখ্যাত মনীষীদের বাড়িগুলিও দেখে নিয়েছেন তাঁরা৷ ছবিতে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’৷
ছবি: DW/P. Samanta
আলোকিত মঞ্চ
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবার শান্তিনিকেতনে এলেন বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সঙ্গে ছিলেন দুই বাংলার দুই নেত্রী৷ কাজেই তিস্তার জলবণ্টন সমস্যা বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে কোনো কথাই হয়নি, এটা ভাবা যায় না! বাংলাদেশে এ বছরই সাধারণ নির্বাচন৷ তাই শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ সফর বাড়তি তাৎপর্য পাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
7 ছবি1 | 7
বিশ্বভারতীর জবাব
বুধবার রাতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মমতাকে জবাব দেন। জবাবটা উপাচার্য দেননি। দিয়েছেন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। সেখানে বলা হয়েছে, ''বিশ্বভারতীর উপর আপনার আশীর্বাদ না থাকলেই আমাদের সুবিধা। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলি।''
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। তাঁর স্তাবকেরা যা শোনান তিনি তাই বিশ্বাস করেন এবং টিপ্পনি করেন।''
আরো বলা হয়েছে, ''মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতীতে দেওয়াল তোলার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।...ওনার বাসস্থান, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কি দেওয়াল নেই।''
প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনার মনোনীত মন্ত্রী, উপাচার্য কী করে জেলের গরাদের ভিতর আছেন? আপনার প্রিয় শিষ্য যাকে না হলে বীরভূম ভাবতে পারতেন না, সেও জেলে। কবে তিনি ছাড়া পাবেন? জনসমক্ষে ভুল তথ্য দিয়ে তিনি বিশ্বভারতীকে আক্রমণ করছেন।
খোয়াইয়ের হাট
শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি মানেই লাল মাটির ঢাল আর ইউক্যালিপটাস বনের খোয়াই৷ প্রতি শনিবার সেই খোলা জায়গাতেই বসে হাট৷ নানাবিধ হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে এই হাট এখন শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কাঁথার কাজ
বীরভূম জেলার এই অঞ্চলের কাঁথার কাজ বেশ বিখ্যাত৷ খোয়াইয়ের হাটের পসরার এক বড় অংশ এই কাঁথার কাজ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সাঁওতাল নাচ
এক বড় সাঁওতাল বসত আছে শান্তিনিকেতনের লাগোয়া গ্রামগুলিতে৷ সাঁওতালদের নাচও খোয়াই হাটের অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হাতে আঁকা ছবি
শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের ছাত্র-ছাত্রীরাও কেউ কেউ আসেন তাঁদের হাতে আঁকা ছবির সম্ভার নিয়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ঝুটো গয়না
জাঙ্ক জুয়লারি, বা ঝুটো গয়নার জন্যেও শান্তিনিকেতন প্রসিদ্ধ৷ তারও অঢেল আয়োজন থাকে খোয়াইয়ের হাটে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আদিবাসী শিল্প
তালপাতার ফুল, কুড়নো কাঠের ভাস্কর্য — যার ঐতিহ্য বহু বছরের, সেসব নিয়ে আদিবাসী শিল্পীরা নিজেরাই আসেন এই হাটে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
চট, বেত
চট, বা বেতের ব্যাগ এই অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় হস্তশিল্প৷ অনেকেই কিনে নিয়ে যান এই গ্রামজ শৌখিনতা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ডোকরা শিল্প
প্রথাগত ডোকরা শিল্পেও এখন আধুনিক মননের ছোঁয়া৷ নানা ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি হয় ডোকরা রীতিতে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পোশাকি বাহার
পোশাক তৈরির কাপড় থেকে তৈরি পোশাক, সবই মেলে খোয়াই হাটে৷ সব জামা-কাপড়েই স্থানীয় সূচিশিল্পের উজ্জ্বল অলঙ্করণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
খুদে শিল্পীর পসরা
নেহাতই কমবয়সি, সদ্য হাত পাকিয়েছে হস্তশিল্পে, কিন্তু তার কাজও সমানভাবে নজর কাড়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাউল গান
হাটের মাঝে জায়গায় জায়গায় বসে বাউল গানের আসর৷ অনেকেই গোল হয়ে ঘিরে বসে শোনেন সেই গান৷ খুশি হয়ে পাঁচ-দশ টাকা সম্মানদক্ষিণা দিয়ে যান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
খাওয়া দাওয়া
মেলা হবে, কিন্তু ভালো-মন্দ খাওয়ার আয়োজন থাকবে না, তাও কি হয়! খোয়াই হাটেও আছে রকমারি খাবারের সম্ভার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
থেকে যায় সুর
সন্ধে নামলে মেলা ভাঙে৷ যে যার বাড়ি ফেরেন৷ কিন্তু কানে থেকে যায় বাউল গানের সুর৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
12 ছবি1 | 12
প্রতিক্রিয়া
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার টিভি৯-কে বলেছেন, "বিশ্বভারতী যদি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ বিবৃতি জারি করে থাকে, তাহলে আমি বলব ব্যাপারটা আদালত মীমাংসা করুক। অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়টাও আদালত মীমাংসা করুক। আমি উপাচার্যকেও অনুরোধ করব, তিনি যেন নিজে কোনও ব্যাখ্যা না করেন।”
আবার তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, বিশ্বভারতী বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলব। তাদের তো রবীন্দ্রনাথের দেখানো পথে চলা উচিত।
এই বিতর্ক নিয়ে দুই ভাগ হয়ে গেছেন বাংলার সুশীল সমাজ। কেউ বলছেন, বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণ হচ্ছে। যে ভাষায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তা মেনে নেয়া যায় না।
অন্যপক্ষের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীও রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী নিয়ে যা বলেছেন, তা তার মুখে মানায় না।