‘মেড ইন জার্মানি’
১৭ আগস্ট ২০১৩![Symbolbild Made in germany (Fotolia: #20481058); Copyright: Fotolia/Oli_ok](https://static.dw.com/image/15683639_800.webp)
ইউরোপীয় কমিশনের পরিকল্পনাটি আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসম্মত৷ ভবিষ্যতে যে কোনো পণ্যের উৎপাদনকারী শিল্পসংস্থাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে, পণ্য তৈরিতে কোন দেশে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ তারপর দেখা হবে, কোন দেশে পণ্যটিতে সবচেয়ে বেশি ‘‘ভ্যালু অ্যাডেড'', অর্থাৎ মূল্য যোগ করা হয়েছে৷ কমিশনের গোটা উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল, শেষমেষ পণ্যের উপর কী পরিমাণ কর ধার্য করা হবে, সেটা নির্ধারণ করা – কেননা বছর শেষ হওয়ার আগেই ইইউ-এর নতুন ট্যাক্স কোড কার্যকরী হবে৷
ইইউ-র এই পরিকল্পনায় জার্মান শিল্পের আপত্তি এই কারণে যে, এই পন্থায় তাদের ‘‘মেড ইন জার্মানি'' লেবেল জোলো, এমনকি তামাদি হয়ে উঠতে পারে৷ উৎপাদনকারী জার্মান শিল্পসংস্থাগুলি এ যাবৎ সেই ধরনের পণ্যের উপর ‘‘মেড ইন জার্মানি'' লেবেল সাঁটতে পারতো, ‘‘যার বৈশিষ্ট্য হল তা জার্মানিতে সৃষ্টি ও জার্মান ম্যানুফ্যাকচারিং'-এর ফলাফল''৷
‘‘মেড ইন জার্মানি''
জার্মান শিল্প ও বাণিজ্য কক্ষ ডিআইএইচকে-র বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ফল্কার ট্রাইয়ার৷ তিনি বলেন: ‘‘বিকাশ, ডিজাইন ও চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি জার্মানিতে হলে, এবং শুধুমাত্র কিছু পার্টস বিদেশি সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে আসলে, সেই পণ্যকে ‘মেড ইন জার্মানি' বলে চিহ্নিত করা চলে৷ ''
‘‘মেড ইন জার্মানি'' বলতে বাকি বিশ্ব যা বোঝে, তা হলো নিখুঁতভাবে নির্মিত, নির্ভরশীল ও দীর্ঘদিন ধরে কাজ দেয়, এমন একটি পণ্য৷ এক কথায়: কোয়ালিটি৷ লোকে শুধু পণ্যটির জন্যই নয়, সেই সঙ্গে ইমেজটার জন্যও মূল্য ধরে দেয় – যে ইমেজের মূল্য জার্মান শিল্পের কাছে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি৷ কিন্তু ব্রাসেলস এবার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে জার্মান কোয়ালিটির এই গ্যারান্টির পরিবর্তে গ্রাহকরা পাবে কিছু কর সংক্রান্ত নিয়মকানুন, এই হল জার্মান শিল্পসমিতিগুলির আশঙ্কা৷
কাজেই ডিআইএইচকে বর্তমান বিধিনিয়মই বজায় রাখবে৷ পণ্যের উপর ইইউ যে ধরনের পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা চায়, তার ফলে বিশেষ করে মাঝারি পাল্লার শিল্পসংস্থাগুলির ব্যয় বাড়বে, অথচ গ্রাহকরা তাদের ক্রয় করা পণ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে আগের চেয়ে বেশি নিশ্চিত হতে পারবে না৷ নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, মাঝারি পাল্লার শিল্পসংস্থাগুলি নয়, বিশেষ করে বৃহৎ শিল্পসংস্থাগুলি এই বাড়তি খরচের সম্মুখীন হবে, কেননা তারাই প্রধানত বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পার্টস ক্রয় করে থাকে৷
নতুন নিয়ম, কিন্তু এখন কেন?
ইউরোপীয় কমিশনের উদ্দেশ্য সম্ভবত দক্ষিণ ইউরোপের টালমাটাল অর্থনীতিগুলোর জন্য সংরক্ষণনীতি, বলে জার্মান শিল্প ও বাণিজ্য কক্ষের ধারণা৷ এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলি বিশ্বের বাদবাকি কম মজুরির দেশ থেকে তাদের স্বাতন্ত্র্য জাহির করতে পারবে – তারপর হয়তো ‘‘মেড ইন ইইউ'' লেবেলের মাধ্যমে তারা সামগ্রিকভাবে জাতে উঠতে পারবে৷
জার্মানির পক্ষে এই বিকাশধারা স্বভাবতই প্রীতিজনক নয়৷ ইউরোপের বাদবাকি দেশ যে প্রগতি করুক, তা জার্মানির কাম্য৷ কিন্তু সেই প্রগতি ঘটবে তারা তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে, সংরক্ষণনীতির মাধ্যমে নয়৷ কিন্তু তা বলে সব জার্মান শিল্পপতি ইইউ-র নতুন নিয়মাবলীর বিরুদ্ধে নন৷
জার্মান কোম্পানি ট্রিগেমা গার্মেন্টস তৈরি করে থাকে এবং নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে যে, তাদের তৈরি টি-শার্ট ইত্যাদি এদেশেই তৈরি হয়৷ ট্রিগেমার প্রধান ভল্ফগাং গ্রুপ বলেন, বাকি ইউরোপের মতো জার্মানিরও কম মজুরির দেশগুলির সঙ্গে বিধ্বংসী প্রতিযোগিতায় নামার দরকার নেই৷ তাঁর মতে, লক্ষ্য নির্দিষ্ট রাখাটা খুবই জরুরি: ‘‘আমি বিশ্বের বৃহত্তম মোটরগাড়ি উৎপাদনকারী হতে চাই না৷ আমি চাই বিশ্বের সেরা মোটরগাড়ি উৎপাদন করতে৷''