বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে যে, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা যথার্থ নয়৷ আর সে কারণে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বেশ কয়েকটি গবেষণার ফলাফল থেকে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে তা শুক্রবার প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১০ থেকে ১৪ কোটি নারী যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের কম বয়সি অন্তত ৭ কোটি নারীকে বিয়ে দেয়া হয়েছে৷ গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর অধ্যাপক শার্লট ওয়াটস বলেছেন, ‘‘কোনো জাদুর ছড়ি নারী ও মেয়েদের এই সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না৷ তবে এ সব সহিংসতা এটা বুঝিয়ে দেয় যে, নারী-পুরুষের কোনো কোনো আচরণে পরিবর্তন আনাটা জরুরি এবং একমাত্র তাহলেই হয়ত এক প্রজন্মের মধ্যেই সাফল্য অর্জন সম্ভব৷''
অ্যাসিড সন্ত্রাস!
একটা সময় বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই আসতো নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের খবর৷ এমন বর্বরোচিত হামলা এখনও হয় কিছু দেশে৷ কয়েকটি দেশ ঘুরে জার্মান ফটোগ্রাফার অ্যান-ক্রিস্টিন ভোর্ল-এর তোলা ছবি নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Griebeler
বাংলাদেশের ফরিদা
ফরিদার স্বামী ছিলেন ড্রাগ এবং জুয়ায় আসক্ত৷ ঋণের দায়ে একসময় বাড়িটাও বিক্রি করে দেয় নেশাগ্রস্ত লোকটি৷ রেগেমেগে ফরিদা বলেছিলেন, এমন স্বামীর সঙ্গে আর ঘর করবেন না৷ সেই রাতেই হলো সর্বনাশ৷ ঘুমন্ত ফরিদার ওপর অ্যাসিড ঢেলে দরজা বন্ধ করে দিল পাষণ্ড স্বামী৷ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন ফরিদা৷ প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে তাঁকে৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
মায়ের স্নেহে, বোনের আদরে...
অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়ার সময় ফরিদা ছিলেন ২৪ বছরের তরুণী৷ ১৭টি অস্ত্রোপচারের পর এখন কিছুটা সুস্থ৷ তবে সারা গায়ে রয়েছে দগদগে ঘায়ের চিহ্ন৷ পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলোর ত্বক মসৃণ রাখতে প্রতিদিন মালিশ করে দেন মা৷ নিজের কোনো বাড়ি নেই বলে মায়ের সাথেই বোনের বাড়িতে থাকেন ফরিদা৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
উগান্ডার ফ্লাভিয়া
ফ্লাভিয়ার ওপর এক আগন্তুক অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল ৫ বছর আগে৷ আজও ফ্লাভিয়া জানেন না, কে, কেন তাঁর ওপর হামলা চালালো৷ বিকৃত চেহারা নিয়ে অনেকদিন ঘরেই ছিলেন৷ বাইরে যেতেন না৷ এক সময় ফ্লাভিয়ার মনে হলো, ‘‘এভাবে ঘরের কোণে পড়ে থাকার মানে হয় না৷ জীবন এগিয়ে চলে৷ আমাকেও বেরোতে হবে৷’’
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আনন্দময় নতুন জীবন
এখন প্রতি সপ্তাহে একবার সালসা নাচতে যায় ফ্লাভিয়া৷ আগের সেই রূপ নেই, তাতে কী, বন্ধুদের কাছে তো রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি! ফ্লাভিয়া খুব ভালো নাচ জানেন৷ তাই একবার শুরু করলে বিশ্রামের সুযোগই পান না৷ এভাবে পরিবার আর বন্ধুদের সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ফ্লাভিয়া৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
ভারতের নীহারি
নীহারির বয়স তখন ১৯৷ একরাতে আত্মহত্যা করার জন্য আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের শরীরে৷ স্বামীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি মনে হয়েছিল তখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
নতুন রূপ
যে ঘরটিতে বসে নীহারি তাঁর চুল ঠিক করছেন এটা ছিল বাবা-মায়ের শোবার ঘর৷ এখানেই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন৷ দেয়াশলাইয়ের বাক্সে একটা কাঠিই ছিল৷ তা দিয়েই আগুন জ্বালিয়েছিলেন শরীরে৷ তবে এখন আর দুর্বল মনের মেয়েটি নেই নীহারি৷ নিজেকে সামলে নিয়ে একটা সংস্থা গড়েছেন৷ সংস্থাটির নাম, ‘পোড়া মেয়েদের রূপ’৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
পাকিস্তানের নুসরাত
দু-দুবার অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে নুসরাতের ওপর৷ প্রথমে স্বামী আর তারপর দেবর৷ ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন নুসরাত৷ ভালোই আছেন এখন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
আশার আলো
দু-দুবার অ্যাসিড হামলার শিকার হওয়ায় মাথার অনেকটা চুলও হারিয়েছেন নুসরাত৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাথার ক্ষতস্থান পুরোপুরি সারিয়ে চুল এবং আগের হেয়ারস্টাইল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
বন্ধুদের মাঝে...
নিজের ভাবনা, যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে কিংবা গল্প করতে প্রায়ই অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এ যান নুসরাত৷ সেখানে এমন অনেকেই আসেন যাঁদের জীবনও অ্যাসিডে ঝলসে যেতে বসেছিল৷ এখন সকলেই জানেন, তাঁরা আর একা নন৷
ছবি: Ann-Christine Woehrl/Echo Photo Agency
9 ছবি1 | 9
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, নানা ধরনের আইন পরিবর্তনের পরও নারীরা স্বাস্থ্য সেবা, কর্মক্ষেত্র এবং আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে সহিংসতা এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিজিশিয়ান ক্লদিয়া গার্সিয়া-মোরেনো বলেছেন, ‘‘কোন কোন স্থানে বা ক্ষেত্রে নারী ও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হতে পারে, সেগুলো চিহ্নিত করা এবং যাঁদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে এ অবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে৷''
অধ্যাপক শার্লট ওয়াটসের মতে, প্রতিটি দেশের সরকার যদি এটা উপলব্ধি করতে পারে যে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কম হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে তাহলে এর বিরুদ্ধে তারা অবশ্যই লড়বে৷ এছাড়া বিশ্বনেতারাই পারেন আইন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য দূর করে নারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও সহিংসতার হার কমাতে৷ ওয়াটস বলেন, ‘‘সব দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের অবিলম্বে উচিত এ ধরনের গবেষণাকে উৎসাহিত করা এবং সেখান থেকে তথ্য নিয়ে সে অনুযায়ী এর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া৷''
ভারতে সম্মান রক্ষায় হত্যা
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে ভিন্ন বর্ণের এক ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে নিজের মেয়েকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে৷ ভারতে ‘সম্মান রক্ষার' নামে হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকলেও বড় শহরগুলোর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে এমনটি সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না৷ পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দিল্লিতে নিজ বাড়িতেই ভাবনার বাবা জগমোহন যাদব ও মা সাবিত্রী তাকে খুন করে রাজস্থানের আলওয়ার গ্রামে দাহ করে৷ এর আগে গত সপ্তাহেই ভাবনা তাঁর বাবা-মার অমতে অভিষেক শেঠকে বিয়ে করেছিলেন৷