জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, চলতি বছর বিশ্বের রেকর্ড সংখ্যক মানুষকে শরণার্থী হিসেবে জীবন বেছে নিতে হবে৷ গতবছর শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ মিলিয়ন৷ এবার সেটা পেরিয়ে যাবে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর শরণার্থীর সংখ্যা ‘৬০ মিলিয়নের চেয়ে অনেক বেশি' হবে৷ এর অর্থ, বিশ্বের প্রতি ১২২ জনের একজনকে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে৷
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ২০.২ মিলিয়ন – ২০১১ সালের তুলনায় সংখ্যাটি প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি৷ সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪.২ মিলিয়ন মানুষকে শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছে৷
শরণার্থীদের একটি অংশ ইউরোপে আসতে আগ্রহী৷ এ জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট্ট নৌকা করে সাগর পাড়ি দিচ্ছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর গ্রিস শাখা জানিয়েছে, চলতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ শরণার্থী সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছেছে৷ এদের মধ্যে ৯১ শতাংশই এসেছে ১০টি দেশ থেকে, যেখানকার নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি শরণার্থী হচ্ছে৷
এ বছরের প্রথম ছয় মাসে জার্মানিতে প্রায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ সংখ্যাটি ২০১৪ সালের মোট আবেদনের কাছাকাছি৷ অবশ্য জুন মাসের পর জার্মানিতে শরণার্থী আসার হার অনেক বেড়ে গেছে৷ ফলে বছর শেষে জার্মানিতে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ ছুঁয়ে যেতে পারে৷
ইউরোপে আসা শরণার্থীদের ইইউ-র দেশগুলোতে ভাগ করে নেয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এই প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে তিনি ইইউ-র দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন৷ ইউরোপীয় কমিশন এর উদ্যোগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে৷
বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শরণার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়ার হার কমে গেছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর মতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মাত্র ৮৪ হাজার শরণার্থী তাদের দেশে ফিরে গেছেন৷ সংখ্যাটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
The hope for a new home
05:10
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু শরণার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়ার হার কমে গেছে৷ এভাবে চলতে থাকলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
জুতা যতদূর নিয়ে যায়
শরণার্থীরা জার্মানির কোলন-বন বিমানবন্দরে পৌঁছালে একজোড়া করে নতুন জুতা পান৷ কয়েক’শ কিলোমিটার যাত্রার পর পুরানো জুতার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে৷ সেই জুতার দিকে তাকালে তার মালিকের করুণ কাহিনি স্পষ্ট হয়ে উঠে৷
ছবি: Tanja Schmieder
জয়নাব, ৩৭, বাগদাদের বাসিন্দা
এই জুতাজোড়া ৪,৬০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছে৷ এই জুতা পরে ইরাক থেকে রওয়ানা হয়ে জয়নাব প্রায় ১৮ দিন ধরে যাত্রা করেছেন৷ আদম ব্যবসায়ীদের কুখ্যাত নৌকাতেও চড়তে হয়েছে তাঁকে৷ তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে দুর্ঘটনা সত্ত্বেও সপরিবারে জীবিত অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন তিনি৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত
জয়নাব (বামে) ও তাঁর ভাবী হায়াতের মুখে প্রায় তিন সপ্তাহের কঠিন যাত্রার ফলে ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ তাঁরা দু’জনেই নীরব রয়েছেন৷ জয়নাবের স্বামী সালিম দাবি করছেন, যে অস্ট্রিয়া-জার্মানির সীমান্তে তাঁদের মারধোর করা হয়েছে৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
মোরতাজার, ৫, হেলমন্দ, আফগানিস্তান
যুদ্ধ ও সন্ত্রাস থেকে পালাবার সময় পছন্দ-অপছন্দের কোনো অবকাশ থাকে না৷ যেমন এই বালককে মেয়েদের জুতা পরেই ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে৷ যাত্রাপথেই কোথাও এই জুতা কুড়িয়ে পায় ছেলেটি৷ ২১ দিন ধরে সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারেও বেশি পথ অতিক্রম করেছে মোরতাজার৷ তার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টা বরফ-ঢাকা পথ দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
হতবাক
মোরতাজারকে কোনো প্রশ্ন করলে সে ফিসফিস করে তার জবাব দেয়৷ ছেলেটির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না৷ কিন্তু তার চোখের দিকে তাকালে গভীর বেদনা ও ক্লান্তি অনুভূতি দেখা যায়৷ পাঁচ বছরের এই বালক তার বড় বোনের সঙ্গে জার্মানিতে এসেছে৷ তালেবান তাদের বাবাকে হত্যা করেছে৷ বয়সের কারণে মা এই যাত্রায় সঙ্গী হতে পারেননি৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
হাসান ইউসেফ বারাকাত, সিনজার, ইরাক
কালো, সুন্দর এই জুতোজোড়া দেখলে মনে হবে কোনো স্যুট-টাই পরা মানুষ এর মালিক৷ কিন্তু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের হাসান ইউসেফ অতি সাধারণ জামাকাপড় পরে ইরাকের উত্তরে সিনজার থেকে রওয়ানা দিয়ে ৪,৩০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করেছেন৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
নিশ্চিন্ত...
এবং উত্তেজিত হাসান ইউসেফ৷ বিমানবন্দরের তাঁবুতে ঢুকে শান্তি পেয়েছেন তিনি৷ এক সাহায্যকারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন চেয়ে নিয়ে নিজের ভাগ্নেকে পৌঁছ সংবাদ দিলেন তিনি৷ স্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১৫ দিন যাত্রার পর অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন তিনি৷ স্মৃতিশক্তিও ঠিকমতো কাজ করছে না৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
সিয়াওয়ার, হাজারাজাত, আফগানিস্তান
এই তরুণ মা বড়ই লাজুক৷ বেশি কিছু বলতে চান না৷ শুধু জানা গেছে, যে তিনি সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তালেবানের নিপীড়নে তাদের টেকাই দায়৷ ৬,৮০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তিনি জার্মানিতে পৌঁছেছেন৷ পায়ের আঙুল অক্ষত রাখতে মোটা মোজার উপর পাতলা স্নিকার্স পরেছেন৷
ছবি: DW/N. Shtrauchler
মনে ভীতি
ফটো তোলার সময়েও সাহারনাজ তাঁর মা সিয়াওয়ারকে চোখে চোখে রেখেছিল৷ বয়স মাত্র দেড় বছর৷ জার্মানিতে এসে স্ট্রলার পেয়েছে তারা৷ তার আগে মেয়েকে বেশিরভাগ সময়ে কোলে নিয়ে থাকতে হতো৷ কেন তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে, ক্লান্ত ছোট্ট মেয়েটি সেটা বুঝতে পারছে না৷