গোরিলা, গণ্ডার, বাঘ, সিংহ – এদের অনেক প্রজাতি ২১০০ সালের আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ স্তন্যপায়ীদের বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
এদের বলা হয় বৃহৎ পঞ্চ (লার্জেস্ট ফাইফ): আফ্রিকার হাতি, সিংহ, গণ্ডার, চিতাবাঘ এবং মহিষ৷ আগে কেবল শিকারিদের টার্গেট ছিল এরা, কেননা বড় বড় পুরস্কার থাকত এদের এক একটি মাথার জন্য৷ আর বর্তমানে আফ্রিকার সাফারি পার্কে এই পাঁচটি প্রাণীকে দেখতে সবচেয়ে বেশি মানুষ যায়৷ কিন্তু এরা যেন ডুমুরের ফুল, অর্থাৎ এদের দেখার ভাগ্য খুব কম মানুষের কপালেই জোটে৷
অক্সফোর্ড জার্নালের প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদন যা বলছে, তাতে খুব শিগগিরই এদের দেখা আর নাও মিলতে পারে৷ এই বৃহৎ স্তন্যপায়ীরা বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে৷ যদি অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে দ্বাবিংশ শতাব্দীর অনেক আগেই এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, খুব শিগগিরই হয়ত বিজ্ঞানীরা এইসব প্রজাতির প্রাণীদের শোকসংবাদ লিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন৷ এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের শতকরা ৫৯ ভাগ মাংসাশী এবং ৬০ ভাগ তৃণভোজী প্রাণী বিলুপ্তির হুমকিতে আছে৷ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের রেড লিস্টে এদের নাম রয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি সাহারা অধ্যুষিত আফ্রিকা এবং এশিয়ার রয়েছে এই তালিকায়৷
তাই বিজ্ঞানীরা এসব দেশের সরকার, কর্মকর্তা ও প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলোকে ঐ প্রাণীদের রক্ষার ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ বনাঞ্চল ধ্বংস, কৃষিজমি বৃদ্ধি এবং প্রাণী পাচারের কারণে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে৷ তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, এতে বাস্তুসংস্থানের উপরও প্রভাব পড়বে৷ এ সব প্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বৃদ্ধি এবং ইকো বা পরিবেশবান্ধব পর্যটন গড়ে তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
আপনার চারপাশের পরিবেশ এবং প্রাণীজগতকে রক্ষা করতে, বাঁচাতে আপনি কী করছেন? লিখুন নীচের ঘরে৷
অস্ট্রেলিয়ায় স্তন্যপায়ীরা বিলুপ্তির আশঙ্কায়
স্বাভাবিক মৃত্যু বা শিকারীদের দৌরাত্ম্যে নয়, মূলত অন্য কারণে ধীরে ধীরে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া থেকে৷ একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Imago/UIG
ওয়ালাবিরা কমছে
অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বিচিত্র ধরণের স্থলচর স্তন্যপায়ী রয়েছে৷ ক্যাঙ্গারু তাদের মধ্যে অন্যতম৷ তবে ছবির এই প্রাণী ক্যাঙ্গারুর মতো হলেও ক্যাঙ্গারু নয়৷ এদের নাম ওয়ালাবি৷ এতদিন অনেক ওয়ালাবি ছিল অস্ট্রেলিয়ায়৷ সংখ্যাটা এখন কমছে৷ প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর সমীক্ষা বলছে, অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয়দের আগমনের পর থেকে ওয়ালাবির চারটি প্রজাতি অন্তত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷
ছবি: L. Robayo/AFP/GettyImages
রডেন্টদের কে বাঁচাবে!
ছোট ছোট এই ইঁদুরগুলোও আছে বিপদে৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, রডেন্ট নামে পরিচিত এই প্রাণীগুলো যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে, সেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে, অর্থাৎ দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তারা৷
ছবি: Imago/UIG
তালিকায় নবাগত
অস্ট্রেলিয়া থেকে বিলুপ্ত প্রাণীদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এই ইঁদুরগুলো৷ ২০০৬ সালের আগেও এরা ছিল৷ কিন্তু তারপর থেকে কমতে কমতে ২০১৪ সালে এসে অস্ট্রেলিয়া থেকে এরা একদম বিলুপ্ত!
ছবি: Queensland Government
বাদুড়দের সৌভাগ্য
অস্ট্রেলিয়ায় বাদুড়দের ভাগ্য কিছুটা ভালোই বলতে হবে৷ নইলে অন্য অনেক স্তন্যপায়ী যখন নীরব প্রস্থানের পথে, এরা তখন রাতের আকাশে দাপিয়ে উড়তে পারে? গত ২০ বছরে বাদুড়ের বিলোপই সবচেয়ে কম হারে হয়েছে৷ এর মাঝেও বড় কানওয়ালা এই লর্ড হাওই-সহ দু’ধরনের বাদুড় অবশ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে উধাও হয়েছে৷
ছবি: Imago/UIG
মানুষ দায়ী নয়
প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীর শতকরা ২১ ভাগই এখন বিলুপ্তির আশঙ্কার মুখে৷ আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিলুপ্তি বেশি ঘটছে এমন সব এলাকায় যেখানে মানুষের ঘনবসতি নেই৷
ছবি: Reuters
অস্ট্রেলিয়ার বাইরে নিরাপদ
অস্ট্রেলিয়া থেকে এরা বিলুপ্ত৷ তবে নিউ গিনিতে এখনো দেখা যায় এদের৷ সেখানেও বেশি দিন ওরা অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে কিনা এ নিয়ে অবশ্য সংশয় আছে৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans/Ardea
প্রাণীও দায়ী
এগুলো ইউরোপীয় লাল শেয়াল৷ অস্ট্রেলিয়াতেও আনা হয়েছিল এদের৷ এমন কিছু মাংসাশী প্রাণীর কারণেও বিলুপ্ত হচ্ছে অনেক স্তন্যপায়ী৷
ছবি: imago/blickwinkel
বিড়াল ভয়ংকর!
এই বুনো বিড়ালগুলো সত্যিই ভয়ংকর৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এদের কারণেও অনেক প্রাণীই অস্ট্রেলিয়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/vlorzor
নিরাপদ জলরাজ্য
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে স্থলের চেয়ে জলের স্তন্যপায়ীরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ৷ সেখানে বিলুপ্তির হার অনেক কম৷ তবে বিজ্ঞানীরা স্বীকার করছেন, সাগরের গভীরে কাজ করা খুব কঠিন, সুতরাং সেখানকার হিসেবে ভুলের শঙ্কাও বেশি৷