লার্স শাইডলার ছুরি তৈরি করেন৷ দামাস্ক ইস্পাতের অতি পাতলা, অতি ধারালো সব ছুরি, যা দিয়ে ‘চুল চেরা' যায়৷ কাজেই সে ছুরির দামও যে চমকে দেওয়ার মতো হবে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
বিজ্ঞাপন
৮৫ বছর বয়সি লার্স শাইডলারের পেশা ও নেশা হলো ছুরি তৈরি করা৷ ছেলেবেলা থেকেই তিনি জাদু তলোয়ার, জাদু তরবারি ইত্যাদির কাহিনি শুনতে ভালোবাসেন৷ তাই তিনি তাঁর নিজের তৈরি ‘সুপার' ছুরিটির নাম রেখেছেন: নেস্মুক৷
ছুরির ফলা থেকে তার বল ও ক্ষমতার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷ শাইডলার অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতির ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেছেন৷ প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে এ ধরনের জিনিস তৈরি হচ্ছে৷ তাঁর নিজের কর্মশালায় সেই সুপ্রাচীন প্রথাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেছেন লার্স শাইডলার৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যেসব যন্ত্রপাতি হাতে নিয়ে ব্যবহার করে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো সম্ভবত এই ছুরি বা ছুরিকা৷ ছুরি তৈরিতে যে সুপ্রাচীন, কিংবদন্তির উপাদান আছে, তা মানবসংস্কৃতির অঙ্গ৷''
দামেস্কের ছুরি
ইংরেজিতে যাকে ‘ডামাস্ক' বলে, সেই কথাটি এসেছে দামাস্কাস অর্থাৎ দামেস্ক থেকে৷ দামাস্ক ইস্পাতের ছুরিগুলো যেমন ধারালো, তেমনই তীক্ষ্ণ৷ তরোয়াল হিসেবেও তাদের কোনো তুলনা নেই৷ শুধুমাত্র সবচেয়ে অভিজ্ঞ কামাররাই দামাস্ক ইস্পাত তৈরি করতে জানেন৷ লার্স বলেন, ‘‘দামাস্ক স্টিল কীভাবে তৈরি হয়, আমার চিরকালই তা জানার আগ্রহ ছিল৷''
দামাস্ক ছুরি তৈরি করা অতি দুরুহ ব্যাপার৷ শাইডলার ও তাঁর সহযোগীরা একটি আগুন-গরম ইস্পাতের পাতকে বার বার মুড়ে, তার উপর হাতুড়ি পিটিয়ে একটি ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ছুরির ফলা তৈরি করেন৷ ইস্পাতের পাতটি কতবার মোড়া হয়? এতবার যে, শেষমেশ তাতে ৪৮০টি স্তর থাকে!
কয়েকদিন পরে দেখা যায়, শাইডলার ছুরির ফলাটায় ধার দিচ্ছেন৷ ফলাটা যত পাতলা হবে, ততই তার ধার বেশি হবে৷ ফলার আকৃতি তাঁর বহু বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল৷
বিভিন্ন দেশের খাওয়ার ধরন
খাওয়া-দাওয়া ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না৷ তবে এই খাবার খাওয়ার রীতি কিন্তু একেক দেশে একেক রকম৷ ছুরি-কাঁটাচামচ, ছুরি-চামচ, শুধু চামচ, চপস্টিক্স নাকি হাত? কোন দেশে কিভাবে খাওয়া হয় – চলুন জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: DW
নিজের মতো করে খাওয়া
খাবার টেবিলে বসে সুন্দর করে খাওয়াটাও যে আসলে শিখতে হয় তা বোঝা যায় যখন পাশে বা কাছাকাছি কেউ খুব এলোমেলোভাবে, শব্দ বা তাড়াহুড়ো করে খায় তখন৷
ছবি: Laurin Rinder - Fotolia
জার্মানদের খাবার টেবিল
ছবিতে দেখুন জার্মানদের খাবার টেবিল৷ তবে এটা প্রতিদিনের খাবার টেবিল নয়, একটি অনুষ্ঠানের জন্য টেবিলটি সাজানো হয়েছে৷ কাঁটাচামচ, টেবিল চামচ, ছুরি, চায়ের চামচ – এ সব কি সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে প্লেটের তিন দিকে৷ তাই না? কোন চামচ দিয়ে কী খেতে হয়, যেমন জার্মানিতে ডান হাতে ছুরি আর বাঁ হাতে কাঁটাচামচ ধরা হয় – তাই ঠিক সেভাবেই রাখা হয়েছে এ টেবিলে৷
ছবি: Imago
শব্দ না করে খাওয়া
খাবার টেবিলে ঠিকঠাক মতো ছুরি-কাঁটা দিয়ে খাওয়া জার্মানদের ভদ্রতার মধ্যেই পরে৷ এছাড়া মুখ দিয়ে শব্দ করে খাওয়া, ছুরি-কাঁটা ঠিক মতো ধরতে না পারা, চামচের শব্দ বেশি জোরে করা – এ সবই জার্মানদের কাছে অভদ্রতা বলে গণ্য হয়৷
ছবি: Philips
ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা
জার্মানিতে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে ছুরি-কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া শেখানো হয়৷ তবে ছোট বাচ্চারা অনেক সময় শুধু চামচ দিয়ে খেতেই ভালোবাসে৷ হোক তা নিজের ঘর বা আকাশে উড়ন্ত অবস্থায়৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
এই প্রজন্মের জার্মানরা
বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা এ সব ব্যাপারে অনেকটাই শিথিল, অর্থাৎ পিৎসা, আলু ইত্যাদির মতো ‘ফিঙার ফুড’ হাত দিয়ে খেতেই ভালোবাসে তারা৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
চাইনিজ
ইউরোপ-অ্যামেরিকায় খাওয়ার সময় সাধারণত সকলেই কাঁটাচামচ, ছুরি অথবা টেবলচামচ ব্যবহার করে থাকে৷ তবে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে চামচ, চপস্টিক্স বা কাঠি অথবা শুধু হাত দিয়ে খাওয়ার চল আছে৷ চীনারা খেয়ে থাকে চপস্টিক্স বা চিকন দুটো কাঠি আঙুল দিয়ে ধরে৷ কাঠি দিয়ে তুলতে সুবিধার জন্য থালায় নয়, বাটিতে খেয়ে থাকেন তাঁরা৷ অন্যদের কাছে খাওয়ার এ রীতিকে হয়ত শিল্প বলেই মনে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Chang
জাপানিজ
জাপানিরাও খাওয়ার সময় কাঠি ব্যবহার করেন৷ জাপানিদের বিশেষ খাবার ‘সুশি’ অবশ্য চাইনিজ খাবারের তুলনায় সহজেই চপস্টিক্স দিয়ে খাওয়া যায়৷ দেখলে অন্তত এমনটাই মনে হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa
ভাতে মাছে বাঙালি
বাঙালিদের কাছে ভাত-মাছ খেতে হাত ব্যবহার না করলে মনে হয় যেন খাওয়াই হলো না, তাই না? সেকথা আর বাঙালিদের কাছে ঘটা করে বলা কিছু নেই৷
ছবি: CNC
আফ্রিকাতেও হাত দিয়ে খাওয়া
আফ্রিকার দেশগুলোতেও কিন্তু বাঙালি বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য কিছু অঞ্চলের মতো হাত দিয়ে খাওয়ার চল আছে৷
ছবি: picture alliance/Godong
একসাথে বসে খাওয়া
একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করার মজা কিন্তু আলাদা৷ ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে একটি অনুষ্ঠানে সবাই মিলে রোদে বসে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছেন দেখুন৷ কেমন মজা, তাই না?
ছবি: Getty Images
ইউরোপের অন্যন্য দেশের মানুষ
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের মানুষই ছুরি, কাঁটাচামচ দিয়ে খান৷ তবে তুর্কিরা শুধু চামচ দিয়ে খেতেই পছন্দ করেন৷ তাঁদের খাবার অনেকটা বাঙালিদের মতো – টুকরো টুকরো করা মাছ, মাংস, সবজি সাথে ভাত বা নান-রুটি, যা এক হাতেই খাওয়া সম্ভব৷ ছবিটি জার্মানিতে একটি ইফতার পার্টির৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাত দিয়ে খাচ্ছেন বিদেশিরাও
প্রয়োজনে জার্মানরাও হাত দিয়ে খেতে পারেন৷ ভারতে কর্মরত এক জার্মান বললেন, ‘‘জার্মানিতে আমি ডান হাতে ছুরি আর বাঁ হাতে কাঁটাচামচ দিয়ে খেতাম, তবে বাঁ হাত ব্যবহার না করে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু শুধু ডান হাত দিয়েও মানুষ সুন্দর করে গুছিয়ে খেতে পারে৷’’
ছবি: DW
12 ছবি1 | 12
মরচে ধরে না
ফলাটা যাতে তার বিশেষ রূপ পায়, সেজন্য সেটিকে অ্যাসিডে চোবানো হয়৷ অম্লের প্রতিক্রিয়ায় ইস্পাতের উপর নকশাটা ফুটে ওঠে৷ লার্স বলেন, ‘‘এ কাজের ভিত্তি হলো কর্মকারের প্রথাগত কর্মপদ্ধতি৷ তারপর সেটার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি যোগ হয়, যেমন একটি বিশেষ ধরনের কোটিং, যা মরচের হাত থেকে বাঁচায়৷''
ড্রেসডেনের ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট গবেষণা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিটি আবিষ্কার করেছে: অতীব শক্ত একটি কোটিং, যা ছুরির ফলাকে মরচে ধরা থেকে রক্ষা করে৷ হাতের কাজের সঙ্গে হাই টেকের মিলন ঘটলে দামটাও বাড়ে ঠিক সেই অনুপাতে৷ একটি নেস্মুক ছুরির দাম পড়ে ৪,০০০ ইউরো৷
শেষ পালিশটা পড়লেই ছুরিটা তৈরি৷ ছুরির ফলাটা অবিশ্বাস্য রকম পাতলা: এক মিলিমিটারের এক হাজারের এক ভাগের চেয়েও কম৷ এ ধরনের একটি ছুরি এতই ধারালো যে, তা দিয়ে সত্যিই চুল চেরা যায়৷