এই অবস্থায় চলতি বছরের শুরুতে সরকার স্কুলের সব শিক্ষার্থীদের জন্য সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দেয়৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ফারহানা হক, যিনি এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আছেন, তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি প্রায় চার কোটি শিশুকে আমরা সাঁতার শেখানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি৷ আমার মনে হয় এটি কোনো এক সময়ে নেয়া সবচেয়ে বড় সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি৷''
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ৷ শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদনদীর অবস্থান এদেশে৷ নদী তাই এখানকার মানুষের জীবনের অংশ৷ আর বিভিন্ন ধরনের ‘‘জলক্রীড়া’’ নিত্যদিনের ব্যাপার৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Farjana KHAN GODHULY/AFP/Getty Imagesনদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে পানিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে নৌকাবাইচ৷ নদীতে নৌকা চালানোর প্রতিযোগিতা প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা যায়৷ বাংলার লোকসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নৌকাবাইচ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Imagesনৌকাবাইচের জন্য তৈরি নৌকাগুলো হয় সরু এবং লম্বাটে৷ আর মাঝিরা বৈঠা হাতে সারিবদ্ধভাবে বসেন তাতে৷ গঠনের কারণে পানিতে দ্রুত গতিতে চলতে পারে এগুলো৷ প্রতিযোগিতার সময় নৌকাগুলোকে বিশেষভাবে সাজানো হয় আর মাঝিরা সার গানের তালে তালে দাঁড় টানেন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Imagesবাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ তবে আঞ্চলিক পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতা তেমন একটা জনপ্রিয় নয়৷ অলিম্পিকেও বাংলাদেশ কোনো সাফল্য পায়নি৷ এই ছবিটি ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে তোলা৷ সেবার সাফ গেমসে অংশ নিয়ে রৌপ্য জয় করেন সাঁতারু কারার সামেদুল ইসলাম৷
ছবি: ROB ELLIOTT/AFP/Getty Imagesক্রীড়া হিসেবে সাঁতার বিশেষ জনপ্রিয় না হলেও গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ মানুষকে নিত্যদিনের প্রয়োজনেই সাঁতার শিখতে হয়৷ এখনো বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে চলাচলের অন্যতম বাহন নৌকা৷ আর পুকুরে গোসল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার৷ শিশুরা তাই ছোটবেলাতেই শিখে নেয় সাঁতার৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Imagesগ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা সাধারণত পানিতে সময় কাটায় বেশি৷ কখনো পুকুরে ডুব দিয়ে শাপলা তোলা, কখনো সেতুর উপর দিয়ে খালে ঝাপ দেয়া – তাদের কাছে এসবই খেলা৷ তারা কলাগাছ দিয়ে ভেলা তৈরি করে ভাসাতে ভালোবাসে, সুযোগ পেলে বিলে গিয়ে ধরে ছোট মাছ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Imagesউন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে বহু আগে থেকেই সার্ফিং চালু থাকলেও বাংলাদেশে এই ‘‘জলক্রীড়া’’ এখনো নতুনই বলা যায়৷ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সার্ফিং ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘বিশ্বের দীর্ঘতম অভঙ্গুর প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত৷’’ দীর্ঘ এই সৈকতে সার্ফিং-এর উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন অনেকে৷
ছবি: Farjana KHAN GODHULY/AFP/Getty Imagesপানির দেশে বাংলাদেশের নদীতে পালতোলা নৌকা হরহামেশাই দেখা যায়৷ এরকম এক পাটের তৈরি ছোট পালতোলা নৌকা নিয়ে বাংলাদেশের কুয়াকাটা থেকে ফ্রান্সের লা সিওতা অবধি পাড়ি দেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে৷ ২০১০ সালে কোরঁত্যাঁ দ্য শাতেলপেরঁ নামক এক ফরাসি যুবক এই অসাধ্য সাধন করেন৷
ছবি: Muntasir Mamun Imran
সাঁতার প্রশিক্ষণের এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সুইমিংপুলের অভাব একটি বড় বাধা৷ এই অভাব দূর করতে সরকার স্থানীয় পুকুর ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে৷
কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিসেফ অর্থ ও জনবল দিয়ে সহায়তা করছে৷ এছাড়া বাতাস ঢুকিয়ে ফোলানো যায় এমন বড় সুইমিংপুলও সরবরাহ করছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি৷
ঢাকায় স্থাপন করা ইউনিসেফ-এর এমনই এক সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেখতে গিয়েছিলেন বার্তা সংস্থা এএফপি-র প্রতিনিধি৷ সেখানে তিনি যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের সঙ্গে কথা বলেন৷ ১০ বছরের কবিতা আক্তার তাঁকে জানায়, ‘‘আগে আমি পানি দেখলে ভয় পেতাম৷ এখন আমার বারবার এখানে আসতে ইচ্ছা হয়৷''
ইউনিসেফ-এর শিশু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যামি ডেলনয়ভিলে এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশে যেহেতু অনেক জলাভূমি আছে সেহেতু পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে৷'' মানুষজন তাদের কর্মসূচি নিয়ে সন্তুষ্ট বলে জানান এই ইউনিসেফ কর্মকর্তা৷ ‘‘কারণ তাঁরা (মানুষ) জানেন পানি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে'', বলেন তিনি৷
পানি যে কতটা বিপদের কারণ হতে পারে সেটা ভালো করেই জানেন জাহানারা আনোয়ার৷ ২০১১ সালে তাঁর ১৪ বছরের ছেলে আমান্ত পানিতে ডুবে মারা যায়৷ তাই তিনি এখন তাঁর আট বছর বয়সি ছেলে অনন্তকে সাঁতার শেখাচ্ছেন৷ শুধু নিজের জন্য নয় পানিতে ডুবতে থাকা অন্য কাউকে বাঁচানোর জন্যও সাঁতার শেখা প্রয়োজন বলে ছেলে অনন্তকে বলেছেন মা জাহানারা আনোয়ার৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি)
প্রিয় পাঠক, আপনার সন্তান কি সাঁতার শিখছে? অভিজ্ঞতা জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...