1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুন্দরবনের বাঘ

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী১১ জুলাই ২০১৫

যা-কে খাঁচায় দেখলে গা শির শির করে; বনের পথে দেখলে বুকের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়; সার্কাসে দেখলে মনে হয় যেন রাজার অপমান৷ এ হলো সেই জীব: মাংসাশী, শিকারি, অপরূপ, যেন নিজেই একটা রূপকথা৷ এক কথায়: বাঘ৷

Bildergalerie Tierkreiszeichen Tiger
ছবি: CC/BY/Alias 0591

পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে যাঁদের চোখে জল আসে না, তাঁদের হৃদয় নেই – বলেছিলেন কোনো এক রান্নাঘরের দার্শনিক৷ সে'রকমই ‘বাঘ' বলতে যাঁদের মনে ছোট্ট একটা ত্রাস কিংবা শঙ্কা এসে বাসা বাঁধে না, তাঁদের মনই পাথর হয়ে গেছে, বলা চলে৷ ঈশ্বর বাদবাকি জীব কেন সৃষ্টি করেছিলেন, বলতে পারব না – কিন্তু বাঘ নিশ্চয় সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি সৌন্দর্য ভালোবাসেন বলে৷

অথচ বাঘ একটা দার্শনিক চিন্তাও বটে৷ জীবন কিংবা প্রকৃতির মতোই, যা সুন্দর, তা-ই তো মৃত্যু আনে, যন্ত্রণা আনে৷ রবি ঠাকুরের রাজা নাটকের অন্ধকারের রাজার মতো – তার রূপ এতই নিষ্ঠুর যে, সুদর্শনার পক্ষে তা সহ্য করাই কঠিন৷ বাঘ আসলে একটা পরীক্ষা: এই পৃথিবীর, এই প্রকৃতির, এই সৃষ্টিরহস্যের আমরা কতটুকু বুঝি, তার পরীক্ষা৷ ভাগ্য থেকে বিধাতা, সকলেই তো সুন্দর আর ভয়ংকর, প্রেম আর মৃত্যুর – গ্রিক দর্শনের এরোস আর থানোটোসের – সংমিশ্রণ৷ বাঘও তাই৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

কিপলিং যা-কে ‘জাঙ্গল বুক'-এর শের খান হিসেবে খলনায়ক করেছেন৷ তার অনেক আগে ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেক টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট কবিতায় যার ‘ফিয়ারফুল সিমেট্রি' বা বিভীষণ প্রতিসাম্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন৷ সর্বকালের সেরা ব্যাঘ্রশিকারি জিম করবেট যার সম্বন্ধে লিখেছিলেন: ‘লার্জ-হার্টেড জেন্টলম্যান অফ আওয়ার ফরেস্টস' – ‘আমাদের অরণ্যের উদারহৃদয় ভদ্রলোক'৷ এ সেই বাঘ৷

টুনটুনির বইতে কিন্তু বাঘকে বোকা বানাতে শেয়াল পণ্ডিতের কোনো কষ্টই হয়নি৷ অথচ মুক্ত প্রকৃতিতে যে বাঘ দেখেছে, সারা জীবন ধরে সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখেছে এবং সুযোগ পেলেই অন্যদের সে কাহিনি শুনিয়ে বোর করতে ছাড়েনি৷ সে কাহিনি কিন্তু বীরত্বের কাহিনি নয়, কাপুরুষত্বের কাহিনি, যদিও তা-তে কোনো লজ্জা নেই: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বক্তার কিরকম প্রাণ উড়ে গিয়েছিল, পা চলছিল না, গলা দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছিল না – সেই গপ্পো৷ কেননা বাঘের ভয় হচ্ছে মানুষের প্রাচীনতম ভয়গুলির মধ্যে একটি৷ কথায় বলে না? যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যে হয়..

পড়াশুনো শেষ করে বিদেশযাত্রার কথা যখন উঠল, তখন স্বর্গীয় পিতৃদেব তার বিরোধী ছিলেন৷ বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা হয়ে থাকায় বিশ্বাস করতেন তিনি, কিন্তু যে কাহিনিটি শুনিয়েছিলেন, সেটি ছিল বাঘের কাহিনি৷ ‘‘ধরো সুন্দরবনের বাঘকে গিয়ে বললে: এখানে থেকে কি করবে? জল আর জঙ্গল৷ জলে কুমির, তো পাড়ের কাদায় থাবা আটকে যায়, কিংবা শিকড়ে থাবা কেটে যায়৷ গরম, মশা, মাছি৷ বনবাদাড়ে শিকার ধরা যেমন শক্ত, শুকনো ডাঙায় মধুশিকারি, কিংবা নৌকোয় হানা দিয়ে ঘুমন্ত মাঝি ধরাও তেমনি শক্ত৷

‘‘তার চেয়ে চলো আমার সঙ্গে সুদূর জার্মানির কোলোন শহরে৷ থাকবে ‘এয়ারকন্ডিশন্ড কমফর্ট'-এ৷ ঘড়ির কাঁটা ধরে আসবে ফ্রেশ মাংস৷ ওসুখ-বিসুখ হলে থাকবে ডাক্তার৷ এক সঙ্গিনী মরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য সঙ্গিনীর ব্যবস্থা হয়ে যাবে৷ অমন জায়গায় থেকে আয়ু যা বাড়বে, তা-তে একটা ব্যাঘ্রজন্মে তিনটে ব্যাঘ্রজন্মের কাজ হয়ে যাবে৷''

বাবা একটু থেমে বললেন: ‘‘এই শুনে বাঘ কি বলবে জানো তো? ‘কোলোনে কোথায় থাকতে হবে? ঠিকানাটা কি?' তুমি বলবে: ‘ঐ কোলোনের চিড়িয়াখানায় আর কি!' তখন বাঘ কি করবে জানো? ঘ্যাঁক করে তোমায় কামড়ে দেবে৷''

সেই জন্যেই তো আমি সুন্দরবনের বাঘের সুন্দরবনে থাকার পক্ষপাতী৷ যদি না মহামান্য সরকার বৈদেশিক ঋণ নিয়ে কোনো ব্যাঘ্র পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করে থাকেন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ