পেছনে ফিরে তাকালে স্কুল জীবনের কোনো শিক্ষকের চেহারা নিশ্চয়ই স্মৃতিতে ভেসে উঠবে, যিনি পরবর্তী পথ চলায় আপনার উপর বড় প্রভাব রেখেছেন৷ আর পিটার তাবিচির মতো শিক্ষক থাকলেতো কথাই নেই, যিনি শিক্ষার্থীদের জীবন আমূল বদলে দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রত্যন্ত স্কুলটিতে মাত্র একটি কম্পিউটার৷ তাতে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই বললেই চলে৷ ল্যাবরেটরি বলেও তেমন কিছু নেই৷ কিন্তু তাতেও শিক্ষার্থীরা দমে যায়নি৷ গত বছর দেশটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলায় শহরাঞ্চলের বাঘা বাঘা একাডেমিকে পেছনে ফেলে গণিত বিভাগের সেরা পুরস্কার তারা ছিনিয়ে নিয়েছে৷ এমন একটি যন্ত্র তারা উদ্ভাবন করেছে, যা শুধু বৃত্তের পরিমাপ সহজে বের করতেই সক্ষম নয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আর বধিররাও সেটি ব্যবহার করতে পারে৷ মাত্র ছয় বছর আগে যাত্রা করা স্কুলটি কেনিয়ার ৫৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে৷ শিক্ষার্থীদের গণিত দলটি এবার ইন্টেল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলার জন্যেও উত্তীর্ণ হয়েছে৷ আগামী মে মাসে তাদের দুজন প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার সেই আয়োজনে অংশ নেবে৷ এই স্কুলটি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রিরও অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে৷
গল্পটি কেরিকো মিক্সড ডে সেকেন্ডারি স্কুলের৷ কেনিয়ার নাকুরু কাউন্টির পোয়ানি নামের প্রত্যন্ত এক গ্রামে তার অবস্থান৷ যার নাম এখন শুধু আফ্রিকার দেশটিতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে৷ আর এই পরিচিতি এনে দিয়েছেন স্কুলটির গণিত ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পিটার তাবিচি, যিনি দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর সহিংসতা জয় করে শিক্ষার্থীদের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য লড়াইয়ের পথ দেখাচ্ছেন৷ তৈরি করে দিচ্ছেন সাফল্যের সুযোগ৷
শিক্ষার্থীদের জীবন বদলের গল্প
পিটার তাবিচির এক তৃতীয়াংশ ছাত্রই এতিম কিংবা একক অভিভাবকের পরিবার থেকে আসা৷ তাদের ৯৫ ভাগই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করে৷ অনেককে স্কুলে আসতে হয় সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে, বর্ষায় যা ব্যবহারেরই অনুপযোগী হয়ে পড়ে৷
ক্লাসে ঠিকমত বসবার সুযোগ হয় না৷ ৩৫ থেকে ৪০ জনের এক একটি শ্রেণিতে ৭০ থেকে ৮০ জনকে জায়গা দিতে হয়৷ কিন্তু তাতে কি, পিটার তাবিচি সুবিধাবঞ্চিত এই শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অদম্য স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন৷ গণিত আর বিজ্ঞানের অবারিত দুনিয়ার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন৷ তাদেরকে তিনি পিছিয়ে রাখতে চান না আধুনিক জ্ঞান আর প্রযুক্তিতেও৷ তাঁর মতে, ‘‘ভাল শিক্ষক হতে হলে আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে, সেই সঙ্গে প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করতে হবে৷ আপনাকে অবশ্যই শিক্ষকতার আধুনিক উপায়গুলোকে গ্রহণ করতে হবে৷ কাজ করতে হবে বেশি, কথা বলতে হবে কম৷'' ছাত্রদের জানানোর জন্য বিশ্বের নিত্যনতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হতে হয় তাঁকে৷ এজন্য স্কুলে ইন্টারনেট না থাকলেও নিয়মিত সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে সেই ক্ষুধা মেটান তিনি৷
শিক্ষার্থীদের দেশে যান যে জার্মান শিক্ষক
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে বুঝতে চেয়েছিলেন ইয়ান কাম্মান৷ তাই তিনি হামবুর্গে শিক্ষকের চাকুরি থেকে ছুটি নিয়ে ঘুরেছেন ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন অ্যামেরিকা এবং আফ্রিকা৷ ভ্রমণে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
দক্ষিণ কোরিয়া: রান্নার ক্লাস
কোরিয়ার শিক্ষার্থী মি-সুন তাঁর শিক্ষককে সৌল ঘুরে দেখতে এবং সেদেশের খাবার পরখ করতে বলেছিলেন৷ জার্মান শিক্ষক ইয়ান কাম্মান এবং তাঁর বান্ধবী লুইসা ভোল্ফ সেদেশে যাওয়ার আগে ট্রাভেল গাইডবুক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোরীয় শব্দগুলো শিখেছেন৷ পাশাপাশি শিখে নিয়েছেন সেদেশের সৌজন্যতা প্রকাশের নানা ধরন৷ সৌলে একটি কুকিং স্কুলে গিয়েছেলিন তাঁরা৷ ‘বিবিমব্যাপ’ নামে কোরিয়ার এক ডিশ রান্না করতে ভালোবাসেন তিনি৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
শিক্ষার্থীদের তৈরি ট্রাভেল গাইড
কাম্মানের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকের জন্য নিজ নিজ দেশের পর্যটন আকর্ষণ, বিশেষত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ বুলি দিয়ে ট্রাভেল গাইড তৈরি করে দিয়েছেন৷ যদিও ছবিতে কাবুলের কথা দেখা যাচ্ছে, কাম্মান আসলে আফগানিস্তান ভ্রমণে সক্ষম হননি৷ সংঘাত এবং নিরাপত্তার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি৷ তবে, আফগান তরুণদের সঙ্গে দেখা করেছেন আম্মান — ইরানে৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
আফগান শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম
ইরানের সরকারি স্কুলে আফগান শিশুরা ভর্তি হতে পারে না৷ ফলে জ্ঞানঅর্জনের জন্য তাদের প্রায়শই নির্ভর করতে হয় স্বেচ্ছাসেবীদের তৈরি স্কুলে৷ তেহরানের একটু বাইরে সেরকম এক স্কুলে গিয়েছিলেন কাম্মান৷ সেই স্কুলে লেখাপড়া করা অধিকাংশ আফগান শিক্ষার্থী আসলে কখনো আফগানিস্তানে যাননি৷ স্কুলের আগে ও পরে সেই আফগান শিক্ষার্থীরা রাস্তায় সস্তা জিনিসপত্র বিক্রি করে পরিবারের জন্য বাড়তি টাকা আয় করে৷
ছবি: Jan Kammann
ইরান: ইস্ফাহানের আউটডোর কালচার
‘ইস্ফাহান হচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক’: ইরানের সর্বত্র একথাটা শুনেছেন কাম্মান৷ সেখানকার সুন্দর সব মসজিদ, পার্ক এবং সেতু দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এই শিক্ষক৷ ইস্ফাহানের স্থানীয় পার্ক এবং স্কয়ারগুলোতে সূর্যাস্তের সময় পিকনিকের আয়োজন এবং সাধারণ মানুষের জীবন উপভোগের নানা আয়োজন আকৃষ্ট করেছে তাঁকে৷ তিনি এখন তাঁর শিক্ষার্থীরা যখন বলে যে তারা ইস্ফাহানের ‘আউটডোর কালচার’ মিস করছে — সেকথার অর্থ বোঝেন৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
মঙ্গোলিয়া: টিভি ট্যালেন্ট শো
যদিও কাম্মানের কোনো মঙ্গোলীয় শিক্ষার্থী নেই, তারপরও তিনি যাযাবরদের সম্পর্কে জানতে সেদেশে গেছেন৷ সেদেশের এক স্থানীয় বাসিন্দা তাঁকে রাতে নিজের তাঁবুতে থাকতে দিয়েছেন৷ রাতের খাবারের পর সেই স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে বসে মঙ্গোলিয়ান ট্যালেন্ট শো দেখেছেন কাম্মান৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
কিউবা: কাস্ত্রোর বিদায়
২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে কিউবার এক ছোট্ট শহরে বিষন্নতার ছাপ দেখতে পান কাম্মান এবং ভোল্ফ৷ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এক ওয়েট্রেস তাঁদের বলেন, ‘‘মহান নেতা ফিডেল কাস্ত্রো মারা গেছেন৷’’ হাভানায় কাস্ত্রোর রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য দেখারও সুযোগ হয়েছিল তাঁদের৷
ছবি: Jan Kammann
নিকারাগুয়া: আগ্নেয়গিরি অনুসন্ধান
‘এটা একটা নিরাপদ দেশ,’ মধ্য আমেরিকার দেশ থেকে আসা কাম্মানের শিক্ষার্থী রিকোর্ডো বলেছিলেন একথা৷ শিক্ষার্থীর কথা শুনে সেদেশ ভ্রমণ করেন তিনি৷ কফি চাষ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মপ্রধান জঙ্গল এবং আগ্নেয়গিরির লাভাসমৃদ্ধ লেক দেখার জন্য শিক্ষককে বলেছিলেন রিকার্ডো৷ বর্তমানে অবশ্য সহিংস রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটিকে পর্যটকদের জন্য আর নিরাপদ বলা যাচ্ছে না৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
ঘানা: হোম স্কুলিং...
গাল্ফ অফ গিনির কেপ কোস্টে ম্যারি ডেনিসের সঙ্গে দেখা হয় কাম্মানের৷ ডেনিস অনেক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সেই সব শিক্ষার্থীদের কাছে যান, যারা পরিবারকে সহায়তা করতে কাজ করে বলে স্কুলে যেতে পারে না৷ তিনি সেসব শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার পথ সুগম করতে নানা উদ্যোগ নেন৷
ছবি: Jan Kammann
...এবং আকরার ব়্যাপ
ঘানার রাজধানী আকরায় পুরনো কম্পিউটার, টিভি এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ভেঙে এবং পুড়িয়ে দামি মেটাল এবং অন্যান্য কাঁচামাল আলাদা করা হয়৷ ‘টক্সিক সিটি’ নামে পরিচিত এলাকাটিতে অনেক তরুণ কাজ করেন৷ সেখানে ম্যাককার্থি বোয়ে নামক এক তরুণের সঙ্গে কাম্মানের পরিচয় হয়, যিনি দারিদ্র্য এবং হতাশা নিয়ে ব়্যাপ সংগীত করেন৷
ছবি: Jan Kammann
রাশিয়া: প্ল্যাটফর্মে আটকে যাওয়া
বিশ্ব ভ্রমণের শেষ দিকে ট্রেনে বেলারুশ হয়ে মস্কো থেকে হামবুর্গ আসতে চেয়েছিলেন ইয়ান কাম্মান৷ দুর্ভাগ্যবশত, সময়মত তিনি বেলারুশের ভিসা নিতে ব্যর্থ হন৷ আর তখনই তাঁর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই কেন পাসপোর্ট সমস্যা, ভিসা এবং ভ্রমণের অনুমোদন নিয়ে জটিলতার কথা বলেন — তা বুঝতে পারেন৷ জার্মান পাসপোর্টধারীরা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত, বলেন তিনি৷
ছবি: Jan Kammann und Luisa Wolff
10 ছবি1 | 10
শুধু ক্লাসের পড়াশোনাতেই নয় তার বাইরেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান চর্চার প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন পিটার৷ তাঁর মতে বিজ্ঞানই তার শিষ্যদের ভবিষ্যৎ দেখানোর পথে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ এজন্য স্কুলে দুটি ক্লাবও গড়েছেন৷ একটি ট্যালেন্ট নারচারিং ক্লাব, অন্যটি সায়েন্স ক্লাব৷
২০০৭ সালের নির্বাচনের পর কেনিয়ায় জাতিগত সংঘাত তৈরি হয়৷ সেটি পৌঁছে প্রত্যন্ত এই গ্রামেও৷ আদিবাসী বিভিন্ন গোষ্ঠী সেখানে একে অপরের সাথে বিবদমান৷ এই পরিস্থিতি থেকে নিজের ছাত্রদের দূরে রাখতেও উদ্যোগ নিয়েছেন পিটার৷ গড়ে তুলেছেন ‘পিস ক্লাব'৷ ৭টি গোষ্ঠী থেকে আসা তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলাই যার উদ্দেশ্য৷
পিটারের এসব কার্যক্রমে সুফলও মিলছে হাতে নাতে৷ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ মেয়েরা ছেলেদের চেয়েও ভাল করছে৷ স্কুলে শিক্ষার্থীদের বাজে আচরণের ঘটনা সপ্তাহে ত্রিশটি থেকে মাত্র তিনটিতে নেমে এসেছে৷ আর তাঁর পুরনো শিক্ষার্থীরা স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জায়গা করে নিচ্ছে৷ এর কৃতিত্ব অবশ্য নিজেকে নন, শিষ্যদেরই দিচ্ছেন পিটার৷ বলেন ‘‘আমি আমার ছাত্রদের নিয়ে ভীষণ গর্বিত৷ একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সামনে থেকে তাদের প্রতিশ্রুতি, মেধা, বুদ্ধি আর বিশ্বাস দেখতে পাই৷''
স্কুলের বাইরেও যিনি শিক্ষক
পিটার মাসে যে বেতন পান তার আশিভাগই খরচ করেন শিক্ষার্থী আর স্থানীয় মানুষের কল্যাণে৷ কেননা শুধু ক্লাসে আসলেই তো হবে না, শিশুরা যে পরিবেশে বাস করে তারও তো উন্নয়ন চাই৷
তাঁর মতে, অভিভাবকদেরকে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোই অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷ এজন্য যেসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি৷ যেসব মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বোঝান সেসব পরিবারকেও৷ সন্তানদের স্কুলে নিয়মিত পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করেন৷
এই গ্রামটির অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে দুর্ভিক্ষ নিয়মিত ঘটনা৷ তার হাত থেকে বাঁচাতে গ্রামবাসীকে ক্ষরা সহিষ্ণু শস্য উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষণও দেন তিনি৷
সেরা শিক্ষক
পিটার তাবিচির এসব গল্প এখন গোটা বিশ্বের মানুষের কাছেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ গত কয়েকদিনে বিশ্বের প্রধান সব গণমাধ্যম তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটার যা করেছেন তা অনেক ধনী দেশের জ্ঞানীদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হবে৷ আর এমন ব্যক্তি যদি বিশ্বের সেরা শিক্ষকের উপাধি পান তাহলে অবাক হবারইবা কী আছে৷
শিক্ষকতা পেশায় অসামান্য অবদান রাখছেন এমন একজনকে ২০১৫ সাল থেকে ‘গ্লোবাল টিচার প্রাইজে' ভূষিত করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যারিটি ‘ভারকি ফাউন্ডেশন'৷ চলতি বছর এজন্য ১৭৯টি দেশ থেকে ১০ হাজার জনকে মনোনীত করা হয়েছিল৷ সবাইকে পেছনে ফেলে পিটার তাবিচিই নির্বাচিত হয়েছেন সেরা শিক্ষক হিসেবে৷ পেয়েছেন ১০ লাখ ডলার মুল্যের পুরস্কার৷ সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজে চেপে তাঁকে যেতে হয়েছে দুবাইতে৷
বাবা, চাচাসহ, সহোদর সবাই শিক্ষক৷ পরিবারের মহান পেশাকেই জীবনের ব্রত করেছে পিটার৷ পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁর ছাত্রদের অর্জনই তাঁকে এতদূর পৌঁছে দিয়েছে৷ এই পুরস্কার তাদেরকেও একটা সুযোগ করে দিয়েছে৷ সুযোগ করে দিয়েছে এটি বলার যে তারা যে-কোনো কিছু করতে পারে৷ তাঁর স্বপ্ন, ‘‘আফ্রিকার তরুণদের প্রতি আর নিম্ন প্রত্যাশা করা হবে না৷ আফ্রিকা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তার জন্ম দিবে যাদের নাম একদিন গোটা বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়বে৷ এবং এই গল্পের একটি বড় অংশ জুড়েই থাকবে মেয়েরা৷''
যেসব স্কুলে পড়লে সুখী হওয়া যায়
জীবনযাপন ও লেখাপড়ার চাপ লাঘবে দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোতে নিয়মিত পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নতুন বিষয় ‘সুখ’ যোগ করা হয়েছে৷ বিশেষ এই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের চিত্ত বিনোদন ও মানসিক প্রশান্তির জন্য নানা কাজ করা হয়৷
ছবি: DW/S. Phalnikar
চাপ লাঘব
শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভার অনুভব করে, দিনের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে এবং তাদের জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সে বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয় ৪৫ মিনিটের এই ক্লাসে৷
ছবি: DW/S. Phalnikar
বৈপ্লবিক উদ্যোগ
দিল্লিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে৷ এর জন্য খ্যাতনামা স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতা এবং সে কারণে সৃষ্ট চাপ ও উদ্বেগকেই দায়ী করেন অনেকে৷ বইকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষায় পাস ও বেশি নম্বর পেতে মুখস্থ ও তা পরীক্ষার খাতায় ঢেলে দিতে ব্যস্ত থাকে শিক্ষার্থীরা, সে জায়গায় এই ধরনের ক্লাসকে বৈপ্লবিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন অনেকে৷
ছবি: DW/S. Phalnikar
‘সুখের ক্লাসে’ এখন ১০ লাখ শিক্ষার্থী
শুধু ডাক্তার, প্রকৌশলী ও কর্পোরেট অফিসের বড় কর্তা নয়, মানবিক বোধ সম্পন্ন ভালো মানুষ তৈরিতে নেওয়া এই প্রকল্প এসেছে দিল্লির আম আদমি সরকার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বাজেটের ২৬ শতাংশ করার কারণে৷ ভিন্নধর্মী এই ক্লাসের জন্য ৫০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ বর্তমানে দিল্লির এক হাজার স্কুলের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এসব ক্লাসে অংশ নিচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Phalnikar
দুশ্চিন্তা নয়, সুখী হও
‘সুখের ক্লাস’ চালুর এক মাস হতে না হতেই অনেক শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসার কথা জানা গেছে৷ অখিলেশ চৌহান নামের এক শিক্ষক বলেছেন, অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে পারছেন তিনি৷ আর সপ্তম গ্রেডের পৃথা বলেছেন, ‘‘হ্যাপিনেস ক্লাসে আমি নিজের ওপর আরো আস্থা পেতে শিখেছি৷ স্কুলও ভালো লাগছে৷ হোমওয়ার্ক নিয়ে আর সব সময় দুশ্চিন্তা করি না৷’’
ছবি: DW/S. Phalnikar
অনুপ্রেরণা ভুটান থেকে
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫৫টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৩৩তম৷ আর প্রতিবেশী ভুটান অনেক এগিয়ে এই সূচকে৷ দেশের উন্নয়ন পরিমাপে জিডিপির বদলে ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ সূচক রয়েছে তাদের৷ তারাই প্রথম পাঠ্যক্রমে ‘হ্যাপিনেস’ অন্তর্ভুক্ত করে ২০০৯ সালে, যা পরে পেরু ও মেক্সিকোসহ অন্তত ১২টি দেশে চালু করা হয়৷ ছবিতে ভুটানের সরকারি শিক্ষা কেন্দ্রে দেশীয় পোশাক বুনছেন এক শিক্ষার্থী৷