প্রতিবেদনে বলা হয়, একদিকে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে প্রায় ১২০ কোটি মানুষ তিন বেলা মুখে আহার তোলার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছে৷
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)৷ জাপানের রাজধানী টোকিওতে ‘২০১৪ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন' প্রকাশের অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির প্রধান হেলেন ক্লার্ক দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসরত মানুষদের অবস্থার উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে করণীয় কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন৷
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermannভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebrokerলেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnewsভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Imagesজাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermannকম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আর্থিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য এবং নানা ধরনের সংঘাত দরিদ্রদের আরো গভীর দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মুহূর্তে ৯১টি উন্নয়নশীল দেশের দেড়শ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করছেন এবং আরো ৮০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমা ছুঁই ছুঁই করছেন৷ বিশ্বের প্রায় ১২০ কোটি মানুষের দৈনিক ক্রয়ক্ষমতা মাত্র সোয়া এক ডলার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
প্রতিবেদনের অন্যতম রচয়িতা খালিদ মালিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে বলেন, ‘‘যিনি দরিদ্র তাঁর অনেক রকমের আঘাত সামলানোর ক্ষমতাই খুব কম৷ অনেক দরিদ্র মানুষ আবার প্রতিবন্ধী, কেউ বা বয়সে প্রবীণ৷ সব মিলিয়ে তাঁদের প্রতিকূলতা অনেক বেশি৷''
ইউএনডিপি-র এ প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও উপস্থিত ছিলেন৷ জাতিসংঘের ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস'- কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্য অর্জনের সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে৷'' বুধবার প্রকাশ করা প্রতিবেদনে ইউএনডিপি অবশ্য নির্ধারিত সময় সীমার মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে কাঙ্খিত সাফল্য প্রাপ্তি সম্ভব হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছে৷
এসিবি/এসবি (এএফপি)