বিশ্বে উদাহরণ হয়ে উঠছে স্পেনের এক শহর
৪ অক্টোবর ২০২৩শহরটির নাম পুয়ের্তোলইয়ানো৷ সেখানকার এক সার কারখানায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ ফ্যার্তিবেরিয়া নামে ঐ সার কারখানার কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘‘অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য হাইড্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ৷ আর আমরা যে সার বিক্রি করি তা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া৷
বর্তমানে পুয়ের্তোলইয়ানোতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বছরে ৪০ হাজার টন হাইড্রোজেন উৎপাদিত হচ্ছে৷ এটি পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া নয়৷ হেরেরো জানান, প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে প্রতি টন অ্যামোনিয়া তৈরি করতে দুই মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়৷
সবুজ হাইড্রোজেন সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে উৎপাদন করা হয়৷ কোনো জীবাশ্ব জ্বালানির প্রয়োজন হয় না৷ তবে এখন বছরে যে তিন হাজার টন উৎপাদিত হচ্ছে তা চাহিদার এক-দশমাংশেরও কম৷
ইবেরড্রোলা ইউটিলিটি কোম্পানির খাভিয়ের প্লাসা বলেন, ‘‘এটি ইউরোপের এমন সবচেয়ে বড় কোম্পানি৷ এটা ইবেরড্রোলা ও ফ্যার্তিবেরিয়ার মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প৷ আমাদের পরিকল্পনা ২০ মেগাওয়াট থেকে ৮০০ মেগাওয়াটে যাওয়া- পুয়ের্তোলইয়ানো ও পালো দে লা ফ্রন্তেরাতে, যেখানে ফ্যার্তিবেরিয়ার কারখানা আছে৷’’
স্পেন হাইড্রোজেনের হাবে পরিণত হচ্ছে৷ জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রে বিষয়টি চোখে পড়ে৷ এটিও পুয়ের্তোলইয়ানোতে অবস্থিত৷ কেন্দ্রের পরিচালক মিগেল আংখেল ফ্যার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থনের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অর্থ সহায়তা আছে৷ সে কারণে কাজ আরও দ্রুত এগোচ্ছে৷ এছাড়া স্পেনে অনেক নবায়নযোগ্য জ্বালানি আছে- যা এনার্জি ট্রানজিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেকটি ভৌগলিক সুবিধা৷’’
পরবর্তী দুই বছরে স্পেনে আরও বায়ু ও সৌরশক্তি অবকাঠামো নির্মিত হতে যাচ্ছে৷ এগুলো থেকে ৩৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, যা ২৫টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান৷ তবে এই পরিকল্পনা ও সবুজ হাইড্রোজেন তৈরির পরিকল্পনার সমালোচনাও হচ্ছে৷
পরিবেশকর্মী খাবিয়ের আন্দালুস বলেন, ‘‘অবশ্যই সেইসব কোম্পানির জন্য এটা ভালো হবে, যাদের আর কোনো বিকল্প নেই৷ কিন্তু স্পেনের জন্য এটা বাবলের মতো, অনেকক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়৷ এবং এ কারণে অনেক জায়গায় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাদ হচ্ছে৷''
বেশি হাইড্রোজেন মানে বেশি পানির ব্যবহার৷ পুয়ের্তোলইয়ানোর কারখানায় এক কেজি সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে কমপক্ষে নয় লিটার পানির প্রয়োজন হয়৷ আর ঐ জায়গাটা স্পেনের দক্ষিণ অবস্থিত, যেটি খরাপ্রবণ এলাকা৷ আন্দালুস বলেন, ‘‘একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাদের সবকিছুর জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকবে কিনা- শুধু এখনকার জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও৷ পূর্বাভাস বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দশকগুলোতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পানি কম পাওয়া যাবে৷''
তবে জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রের প্রকৌশলী ও গবেষকদের কাছে পানি কোনো সমস্যা নয়৷ মিগেল আংখেল ফ্যার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলেন, ‘‘২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ইউরোপে হাইড্রোজেনের পুরো চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবো, যার পরিমাণ দেড়শো থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার৷ প্রতিবছর শুধুমাত্র স্পেনে সেচকাজে ব্যবহার হওয়া পুকুরগুলো থেকে এই পরিমাণ বাষ্প হয়ে যায়৷’’
ফ্যার্তিবেরিয়া সার কারখানা ইতিমধ্যে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে৷ কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘‘সবুজ হাইড্রোজেনের কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে আমরা তা কাজে লাগাতে চাই এবং নতুন বাজারে ঢুকতে চাই৷''
এর অর্থ হলো, সার প্রস্তুতকারক ফ্যার্তিবেরিয়া তার পণ্য তালিকায় ক্লিন এনার্জি যোগ করতে চাইছে৷
ক্রেতার কোনো অভাব হবে না৷ কারণ স্পেনের রিফাইনারি ও ইস্পাত কারখানাগুলোতে বছরে কয়েকশ হাজার টন সবুজ হাইড্রোজেন প্রয়োজন৷ এছাড়া আরো নতুন শিল্প যোগ হচ্ছে৷ পুয়ের্তোলইয়ানোতেই একটি হাইড্রোজেনচালিত ইস্পাত কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ শিগগিরই এই শহর কয়লা ও খনিজ তেল থেকে হাইড্রোজেনে রূপান্তরের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে৷
মার্কুস ব্যোনিশ/জেডএইচ