উলান বাটর শুধুমাত্র বিশ্বের সবচেয়ে ঠান্ডা রাজধানী নয়, এটি চরম বায়ু দূষণের শিকারও৷ শীতের মাসগুলোতে টেসিগি-র তাঁবুগুলো গরম রাখতে কয়লা এবং কাঠ ব্যবহার করা হয়, যা শহরের সত্তর শতাংশ স্মোগের কারণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ সীমার চেয়ে সাতগুন বেশি দূষিত উলান বাটরের বাতাস৷

চীনের রাজধানী স্মগে এতই ক্ষতিগ্রস্ত যে বিজ্ঞানীদের মতে, শহরটি বসবাসের প্রায় অনুপযোগী৷ তাসত্ত্বেও দুই কোটি মানুষ বাস করে সেখানে৷ ধারণা করা হয়, বিশ্বে প্রতিবছর ৩৫ লাখ মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়, যাদের মধ্যে অর্ধেকই চীনের বাসিন্দা৷

পরিবেশ নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগগুলোর মধ্যে অন্যতম বায়ু দূষণ৷ দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর করাচির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়৷ শহরটিতে স্মগের মূল কারণগুলো হচ্ছে রাস্তায় অনেক যান চলাচল, ময়লা পোড়ানো এবং আশেপাশের মরুভূমি থেকে আসা ধূলিকণা৷

ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে কারের সংখ্যা গত ৩০ বছরে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩৫ লাখে পৌঁছেছে৷ তাসত্ত্বেও অবশ্য সেখানে স্মগের সবচেয়ে বড় কারণ কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র৷ শহরের দূষিত বায়ুর ৮০ শতাংশের উৎসই এগুলো৷

রিয়াদে ধুলিঝড় স্মগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ৷ কেননা এটি বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়৷

কায়রোর দূষিত বাতাস শহরের বাসিন্দাদের অনেক রোগের কারণ৷ বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের নানাবিধ সমস্যাসহ ফুসফুসে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে৷ শিল্প উন্নয়ন এবং রাস্তায় যানবাহনের বাড়তি উপস্থিতি দূষণের কারণ৷

জার্মানির মাইনৎস শহরের ম্যাক্স-প্লান্ক ইন্সটিটিউট-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে ঢাকায় বছরে মারা যায় ১৫ হাজার মানুষ৷ গবেষকরা ঢাকার বাতাসে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সালফার ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন৷

বাহ্যিকভাবে একই মনে হলে শহর ভেদে স্মগের ধরন আলাদা৷ যেমন মস্কোর বাতাসে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি অনেক বেশি৷ আর এই দূষণের মধ্যে শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বাতাস তুলনামূলকভাবে ভালো৷

ভৌগোলিক কারণে মেক্সিকো সিটির স্মগ বিপজ্জনক৷ বাতাসে সালিফার ডাই-অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতির কারণে দীর্ঘসময় শহরটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷ কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ করায় এবং যান চলাচল নীতিতে পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে ভালো হয়েছে৷

২০১১ সালে ইউরোপের আটটি দেশে বায়ু দূষণের মাত্রা ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা ইইএ-র বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল৷ তবে আগের বছর এমন দেশ ছিল ১২টি৷ ফলে বলা যায়, সার্বিকভাবে ইউরোপের বাতাস আগের তুলণায় বিশুদ্ধ হয়েছে৷

বিদ্যুত উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্প কারখানা ও গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা৷

নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইডের ৪০ ভাগের জন্য দায়ী গাড়ি ও ট্রাক৷ ইইএ-র নির্বাহী পরিচালক বলছেন প্যারিস, মার্সেই, তুরিন, মিলান, রোমসহ চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার কয়েকটি শহর কর্তৃপক্ষকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে৷

বায়ু দূষণের কারণে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে শিশু কিশোরদের ফুসফুসের সমস্যাসহ নানারকমের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে৷

২০১০ সালের চেয়ে ২০১১ সালে ডেনমার্ক, মাল্টা, সুইডেন আর নেদারল্যান্ডসের বাতাসে দূষণের পরিমাণ কমেছে৷ শহরের মধ্যে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে, গতিসীমা কার্যকর করে এবং শহরের মধ্যে অধিবাসীদের বেশি করে সাইকেল চালাতে উৎসাহী করে নেদারল্যান্ডস সরকার বায়ু দূষণ কমানোয় সফলতা দেখিয়েছে৷

ইইএ-র মতে, বায়ু দূষণ কমানোয় সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে ডেনমার্ক সরকার৷ এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সে দেশের জলবায়ু ও জ্বালানি মন্ত্রী (বামে) ও পরিবেশমন্ত্রী (ডানে)৷

নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও ২০১১ সালে জার্মানিতে দূষণ বেড়েছে৷

দূষণ কমাতে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ প্রয়োজন হলেও ঘরে লিলি জাতীয় গাছ রেখে আপনিও দূষণ কমানোয় সহায়তা করতে পারেন৷