বিশ্ব সম্পদ প্রতিবেদন অনুসারে পৃথিবীতে কখনোই এত ধনী ছিল না। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগই এর পেছনে অন্যতম কারণ বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
১০ লাখ মার্কিল ডলারের সম্পদ রয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে দুই কোটি ২৮ লাখ।ছবি: Carlo Allegri/REUTERS
বিজ্ঞাপন
ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ রিপোর্ট নামে পরিচিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর স্টক মার্কেটগুলোতে ঊর্ধ্বগতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ভাগ্যকে আরো সুপ্রসন্ন করেছে। এর ফলে ডলার মিলিয়নেয়ার ক্লাব, অর্থাৎ অন্তত ১০ লাখ মার্কিন ডলার আছে এমন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে৷
পরামর্শক সংস্থা ক্যাপজেমিনির একটি সমীক্ষা অনুসারে, অন্তত ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ রয়েছে, বিশ্বে এমন মানুষের সংখ্যা গত বছর পাঁচ দশমিক এক শতাংশ বেড়ে আনুমানিক দুই কোটি ২৮ লাখে দাঁড়িয়েছে৷
১৯৯৭ সাল থেকে এই বার্ষিক সমীক্ষা প্রকাশ শুরুর পর এটিই ধনীদের সর্বোচ্চ সংখ্যা। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদও চার দশমিক সাত শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৮৭ লাখ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
স্টক মার্কেটে ঊর্ধ্বগতির বেড়ে যাওয়া কোটিপতিদের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি কারণ। ২০২৩ সালে নিউইয়র্কের নাসডাক সূচক বেড়েছে ৪৩ শতাংশ, এসএন্ডপি ৫০০ সূচক বেড়েছে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। প্যারিসের সিএসি ৪০ বেড়েছে ১৬ শতাংশ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের ডিএএক্স বেড়েছে ২০ শতাংশ।
জার্মানি তৃতীয় স্থানে
গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নীচে অবস্থান করা সত্ত্বেও জার্মানিতেও বেশ কিছু রেকর্ড হয়েছে। ধনীদের সম্পদ দুই দশমিক দুই শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সোয়া ছয় লাখ কোটি মার্কিন ডলার। ডলার মিলিয়নেয়ারদের ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৩৪ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ এবং কোটিপতির সংখ্যাও কমেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "২০২৩ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং প্রধান বিনিয়োগ খাতগুলোতে পতনের বিপরীতে সৌভাগ্য বয়ে এনেছে।"
সমীক্ষা অনুসারে জার্মানি মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বিবেচনায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ৭৪ লাখ মিলিয়নেয়ার নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ৩৭ লাখ মিলিয়নেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। ১৫ লাখ মিলিয়নেয়ার নিয়ে জার্মানির পেছনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীন।
পাঁচ বিলিয়নেয়ারের সম্পদ দিগুণ, পাঁচশ কোটি মানুষের কমেছে
২০২০ সাল থেকে বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে পাঁচশ কোটি মানুষের সম্পদ কমেছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফাম।
ছবি: Mandoga Media/picture alliance
পাঁচ শীর্ষ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ
এই পাঁচ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হচ্ছেন- ইলন মাস্ক, বার্নার্ড আর্নল্ট, জেফ বেজোস, ল্যারি অ্যালিসন এবং মার্ক জাকারবার্গ। এই পাঁচ ধনীর সম্মিলিত সম্পদ ৪৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক ডলার = প্রায় ১০০ টাকা) থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার প্রায় ১১৪ শতাংশ।
ছবি: Getty Images/AFP
৫০০ কোটি মানুষের সম্পদ কমেছে
অক্সফামের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কোটি মানুষের সম্পদের পরিমাণ কমেছে। নতুন সম্পদ অর্জনের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ এক শতাংশ বাকি ৯৯ শতাংশের সম্মিলিত সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০২০ সালের পর থেকে ৯৯ শতাংশের আয় করা প্রতি ডলারের বিপরীতে একজন বিলিয়নেয়ার আয় করেছেন এক দশমিক সাত মিলিয়ন ডলার।
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
শ্রমের মূল্য পাচ্ছে না কর্মীরা
করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বজুড়েই শ্রমিকেরা ভুগছেন। অনেকের বেতন কমে গেছে, অনেকে হারিয়েছেন চাকরি। কিন্তু এর মধ্যেও ধনীদের সম্পদ অর্জন থেমে থাকেনি। অক্সফামের তথ্যমতে, বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ প্রতিদিন দুই দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার করে বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি শ্রমিকের মূল উপার্জন মূল্যস্ফীতির কারণে আগের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
ক্ষুধার্তের খাবার নেই, কোম্পানির লাভ দ্বিগুণ
২০২২ সালে খাদ্য এবং জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভ ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পেরেছে। এই বিপুল লাভের লভ্যাংশ পেয়েছেন ধনী শেয়ারহোল্ডাররা। ২০২২ সালে ২৫৭ বিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে, অক্সফামের তথ্যমতে ৮০ কোটি মানুষ রাতের খাবার নিশ্চিত করতে না পেরে ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই ঘুমাতে গিয়েছেন।
ছবি: Jerome Delay/AP/picture alliance
কর বৈষম্য
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বিলিয়নেয়ারই একেকটি নীতিগত ব্যর্থতার উদাহরণ। কর বৈষম্যের একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ইলন মাস্ক ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর দিয়েছেন তিন শতাংশের একটু বেশি। অন্যদিকে আবের ক্রিস্টিন নামে উত্তর উগান্ডার এক দোকানদারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চাল, আটা এবং সোয়া বিক্রি করে তার মাসে লাভ করেন ৮০ মার্কিন ডলার। তাকে কর দিতে হয় ৪০ শতাংশ।
ছবি: Tingshu Wang/REUTERS
ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব
ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর এড়ানোসহ নানাভাবে বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে ধনীদের সম্পদের ওপর কর বাড়ানোর। মাল্টি-মিলিয়নেয়ার এবং বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের ওপর কর পাঁচ শতাংশ আরোপ করলে বছরে এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ২০০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া এবং ক্ষুধা দূরীকরণে বৈশ্বিক তহবিল গঠন করা সম্ভব।