বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
প্রতিরক্ষা নজরদারি সংস্থা সিপ্রি জানিয়েছে, দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেলেও এখন সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে (প্রতীকী ছবি)ছবি: Ales Utouka/IMAGO
বিজ্ঞাপন
তবে আরো অনেক দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে, কিংবা চুক্তির মাধ্যমে নিজ দেশে স্থাপনের কৌশল হাতে নিতে পারে৷
বিশ্বের অনেক দেশের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরই) বলছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে যখন উদ্বেগ বাড়ছে, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি প্রসারের ফলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা৷
বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে৷ এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দেশ পরমাণু কর্মসূচির আধুনিকায়ন চালিয়ে যাচ্ছে৷ এই আধুনিকায়নের মধ্যে রয়েছে, তাদের হাতে থাকা বর্তমান অস্ত্রগুলোর উন্নয়ন এবং এতে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করা৷
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৫ সালে প্রকাশিত অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে৷ ইয়ারবুক ২০২৫ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড, বোমা এবং শেলের সংখ্যা ছিল ৬৪ হাজার৷ বর্মানে এই সংখ্যা ১২ হাজার ২৪১৷ কমে আসার এই প্রবণতা এখন উল্টো দিকে ঘুরছে বলে প্রতিবেদনটিতে আশঙ্কা করা হয়৷
সংস্থাটির পরিচালক ড্যান স্মিথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এই অস্ত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনার পদক্ষেপের বিষয়টি আর থাকছে না৷''
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র কত?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বুধবার পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, তার দেশ পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
সংখ্যা
‘ফেডারেশন অফ অ্যামেরিকান সায়েন্টিস্ট’ বা এফএএস-এর হিসেবে রাশিয়ার কাছে পাঁচ হাজার ৫৮০টি পরমাণু অস্ত্র আছে৷ এর মধ্যে ১,৭১০টি অস্ত্র মোতায়েন অবস্থায় আছে৷ ৮৭০টি আছে ভূমিতে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে, আর ৬৪০টি আছে ডুবোজাহাজে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে৷ আরও প্রায় ২০০টি পরমাণু অস্ত্র বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ আর কোনো দেশের কাছে এতগুলো পরমাণু অস্ত্র নেই৷
ছবি: AP Photo/picture-alliance
কখন ব্যবহার হবে?
২০২০ সালে রাশিয়ার প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়, পরমাণু বা অন্য কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার উপর হামলা হলে বা প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে হামলা করে ‘রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে নিয়ে গেলে’ এই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
পরীক্ষা
পুটিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে তারাও তা করবে৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন সবশেষ ১৯৯০ সালে এমন পরীক্ষা করেছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র সবশেষ পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে৷ এছাড়া চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে৷ ছবিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার খবর টিভিতে দেখছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকেরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ahn Young-joon
চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসা
রাশিয়া ১৯৯৬ সালে ‘কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ বা সিটিবিটিতে সই করেছিল৷ পরে ২০০০ সালে সেটি অনুমোদন করে৷ তবে গতবছর এই চুক্তি থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে নেওয়ার চুক্তিতে সই করেন পুটিন৷ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিটি সই করলেও কখনও অনুমোদন করেনি৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/Kremlin/Sputnik/REUTERS
নিউক্লিয়ার বাক্স
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুটিনের৷ সেজন্য ‘চেগেত’ নামের একটি নিউক্লিয়ার বাক্স সবসময় তার সঙ্গে থাকে৷ এই বাক্সের মাধ্যমে পুটিন তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন৷ ছবিতে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিনের কাছে থাকা চেগেত নিউক্লিয়ার বাক্স দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: NATALIA CHERNOKHATOVA/REUTERS
5 ছবি1 | 5
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ
১৯৯১ সালে সোভিয়ত ইউনিয়নের পতন এবং শীতল যুদ্ধ অবসানের পর থেকে পরমাণু অস্ত্র কমিয়ে আনার হারের চেয়ে নতুন করে তৈরি করার হার বেড়েছে৷ এদিকে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে এই অস্ত্রের আধুনিকায়নের বিষয়টি সাধারণ হলেও, স্মিথ মনে করেন, অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদের সময় থেকে এই প্রক্রিয়াটি তীব্রতর হয়েছে৷ তাছাড়া এই সময়ে নতুন প্রযুক্তির মিসাইল এবং বোমা বহনের খাতেও বিনিয়োগ বাড়ছে৷
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা আনুমানিক ১২ হাজার ২৪১টি৷ এর মধ্যে নয় হাজার ৬১৪টি রয়েছে সামরিক বাহিনীর ভাণ্ডারে৷ এগুলো হয় কোনো মিসাইলে যুক্ত করা রয়েছে, অথবা সক্রিয় কোনো বেস স্টেশনে রয়েছে৷ কিংবা কেন্দ্রীয় গুদামে রয়েছে, যেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী মোতায়েন করা যেতে পারে৷
এদিকে আনুমানিক তিন হাজার ৯১২টি বোমা মিসাইল বা এয়ারক্রাফটে যুক্ত করা রয়েছে৷ প্রায় দুই হাজার একশ বোমা ব্যালাস্টিক মিসাইলে যুক্ত করা রয়েছে, যেন জরুরি অপারেশনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়৷ মিসাইলে বা এয়ারক্রাফটে যুক্ত থাকা বোমাগুলোর বেশিরভাগই রাশিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে৷ তবে আরেক পারমাণবিক শক্তিধর দেশ চীনও কিছু বোমা মিসাইলে যুক্ত করে রাখতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
পারমাণবিক শক্তিধর নয়টি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল৷ বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের ৯০ ভাগের মালিকানায় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া৷
গবেষকেরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশই এখন পারমাণবিক বোমা বানানোর কথা বিবেচনা করছে, কিংবা বিধ্বংসী এই অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখতে চাইছে৷ নিউক্লিয়ার শেয়ারিং চুক্তির মাধ্যমে এমনটা হতে পারে৷ উদাহরণ হিসেবে রাশিয়া-বেলারুশের কথা বলা যেতে পারে৷ ধারণা করা হচ্ছে, বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে রাশিয়া৷ তাছাড়া ইউরোপের অনেক দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা নিজেদের দেশে স্থাপন করে রাখার ইচ্ছা পোষণ করছে বলে জানা যায়৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকিতে
২০০৭ সালে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত বিশ্বব্যবস্থার উপর নির্ভর না করার কথা জানান৷ সেইসাথে পূর্বদিকের দেশগুলোতে ন্যাটোর বিস্তৃতির বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেন পুটিন৷
এমন হুমকি সত্ত্বেও ২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের কথা বলেন৷ চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগ শহরে দেওয়া এক বক্তৃতায় ওবামা বলেন, ‘‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে আসা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জিনিস হলো পারমাণবিক অস্ত্র৷'' এমন উক্তি অবশ্য সেসময় তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে সহায়তা করে৷
তিনি বলেন, ‘‘পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাথে একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক রিডাকশন ট্রিটি' নামে চুক্তি করা হবে৷'' অবশ্য স্বাক্ষরের পর চুক্তিটি ২০১১ সালে কার্যকর হয়৷
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বাইডেন প্রাশাসনের প্রকাশিত নিউক্লিয়ার রিভিউতে দেখা যায়, পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকীকরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে পুটিন ওবামার সময়ে করা চুক্তি থেকে সরে আসতে একটি আইন পাশ করে৷
গবেষক স্মিথের মতে, ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে নিরাপত্তাহীণতার জোয়ার গড়ে উঠতে থাকে এবং ২০২২ সালে তা আছড়ে পড়ে৷
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, চীনের কাছে বর্তমানে অন্তত ছয়শ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীন দ্রুত গতিতে তার পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার প্রসারিত করছে৷
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির অনুমান, ভারতও ২০২৪ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার কিছুটা সমৃদ্ধ করেছে৷ একই কাজ করছে পাকিস্তানও৷ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জড়ো করছে দেশটি৷
ইসরায়েল অবশ্য নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে কখনোই স্পষ্ট তথ্য দেয়নি৷ তবে পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার আধুনিকায়ন করছে দেশটি- এমন সন্দেহ গবেষকদের৷
পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কি আসন্ন!
ভূরাজনীতি কি আবার ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে? বাড়ছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা?
ছবি: KCNA via KNS/AP Photo/picture alliance
সময়ের চাকা
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রদর্শনের আস্ফালনও ছিল চরম। সোভিয়েতের পতনের পর তা খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বর্তমান সময়ে ফের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ।
ছবি: Pavel Golovkin/AP/picture alliance
রাশিয়ার অবস্থান
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ফোর্সের জন্য বিশেষ অ্যালার্ট জারি করেছেন। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশ।
ছবি: Mark Schiefelbein/AP/picture alliance
রাশিয়ার নিউক্লিয়ার ক্ষমতা
রাশিয়ার হাতে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র আছে। সবমিলিয়ে তাদের পরমাণু ওয়ারহেড ছয় হাজার ৩০০।
ছবি: Oleg Kuleshov/TASS/dpa/picture alliance
অ্যামেরিকার পারমাণবিক শক্তি
ন্যাটোর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যামেরিকার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৮০০। যদিও এই সংখ্যা আরো বেশ বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকা সব অস্ত্রের খতিয়ান দেয়নি বলেই মনে করা হয়।
ছবি: picture-alliance/AP/US Navy/R. Rebarich
ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য
ফ্রান্সের হাতে আছে ৩০০ এবং যুক্তরাজ্যের হাতে ২১৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে।
ছবি: Ludovic Marin/AFP/Getty Images
চীনের শক্তি
বেজিংয়ের কাছে ৩২০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তবে চীনও গোপনে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার বাড়িয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা।
ছবি: Stephen Shaver/UPI Photo/Newscom/picture alliance
পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মানসিকতা
পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানসিকতা আলাদা। ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পক্ষপাতী নয়। তাদের বক্তব্য, পরমাণু শক্তিকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা যাবে না।
ছবি: Takuya Yoshino/AP/picture alliance
মার্কিন অভিমত
অ্যামেরিকা মনে করে, প্রয়োজনে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু তার মাত্রা হবে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা পৌঁছে যাবে। এ কারণে, কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে জোর দিয়েছে অ্যামেরিকা। মার্কিন প্রশাসন মনে করে, কোনো না কোনো সময়ে কম শক্তির পরমাণু যুদ্ধ হবে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জার্মানির কুচকাওয়াজ
জার্মানির টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলটদের পরমাণু বোমা ফেলার ট্রেনিং দেওয়া হয়। জার্মানিতে সঞ্চিত মার্কিন পরমাণু বোমা যে কোনো সময় টর্নেডো বিমানের সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ফেলতে পারেন এই পাইলটরা। বছরে একবার নকল বোমা নিয়ে তারা কুচকাওয়াজ করে।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Gallup
নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইটালি
এই তিন দেশও ন্যাটোর পরমাণু প্রকল্পের অংশ। এখানেও অ্যামেরিকার ১০০ থেকে ১৫০টি পরমাণু পরমাণু বোমা রাখা আছে। টর্নেডো বিমানে যা বহন করা যায়।
ছবি: Michael Varaklas/AP Photo/picture alliance
পরমাণু অস্ত্র এবং আন্তর্জাতিক আইন
কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ আছে। এর শাস্তি চরম হতে পারে। তবে কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র সমুদ্রে ব্যবহার করার সুযোগ এখনো আছে। এমনকী, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতেও তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছবি: Zaporizhzhya NPP/REUTERS
11 ছবি1 | 11
ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি
ইয়ারবুক ২০২৫-এর সূচনায় গবেষক স্মিথ নতুন পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘‘এতে শীতল যুদ্ধের সময়ের চেয়েও আরো বেশি ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা রয়েছে৷'' এর কারণ হিসেবে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার, সাইবার সক্ষমতা এবং মহাকাশ প্রযুক্তির কথা বলেন৷
কার কত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে সে বিষয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হলে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি করা হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেমন কিলার রোবটের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে৷ কিংবা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় এবং আধা স্বয়ংক্রিয় ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু এই প্রযুক্তির সাথে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পর্কের বিষযে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায়, যার ফলে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ খুব দ্রুত নেওয়া যায়৷ কিন্তু এমন সফটওয়্যারে বা সিস্টেমে যেটি মেশিন লার্নিং, কিংবা এআই-এর সাথে জড়িত, সেখানে ছোট্ট ভুলেরও ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে৷
এই বিষয়ে তিনি রাশিয়ার লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টানিসলাভ পেত্রোভের উদাহরণ তুলে ধরেন৷
১৯৮৩ সালে মস্কো থেকে ৬২ মাইল দক্ষিণে রাশিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন৷ সেসময় সিস্টেম থেকে জানানো হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে৷ জবাবে ওয়ার্নিং সিস্টেমের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে পেত্রোভ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন৷ এর ফলে ভয়ানক যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছিল৷
তবে গবেষক স্মিথ বলছেন, ‘‘আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পেত্রোভের দায়িত্ব কে পালন করবে?''
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷