বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় প্রধান মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, গোটা বিশ্বের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর অর্ধেকই ইউরোপে ঘটছে৷ কেয়ার হোমেই অর্ধেকের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
যেখানে যত বেশি পরীক্ষা হচ্ছে, সেখানেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বেশি ধরা পড়ছে৷ সেই অর্থে ইউরোপে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি করে চোখে পড়ার মতো৷ সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাপক আকারে বিশ্লেষণও করা হচ্ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ দপ্তর এমন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, ইউরোপে করোনা সংক্রমণের ফলে মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ঘটনা কেয়ার হোমে ঘটেছে৷
বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ দপ্তরের প্রধান ড. হান্স ক্লুগে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, এ এক অভাবনীয় ট্র্যাজেডি৷ বৃদ্ধাশ্রমের পরিষেবার মান অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিম্ন মানের হওয়ায় মারাত্মক চিত্র উঠে আসছে৷ ক্লুগে আরো বলেন, এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রায়ই অত্যন্ত কম বেতনের বিনিময়ে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়৷ তাঁদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি৷
ড. ক্লুগে মনে করিয়ে দেন, এখনো পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনার প্রায় অর্ধেকই ইউরোপে ঘটেছে৷ ইউরোপের কিছু দেশে পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি সত্ত্বেও মহামারি মোটেই শেষ হয়নি৷ বিশেষ করে পূর্বে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইউক্রেনে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেলারুশ, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তানে বিশেষজ্ঞদের দল পাঠাচ্ছে৷
শুধু স্বাস্থ সংকট নয়, ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে৷ লকডাউন ও অন্যান্য পদক্ষেপের ফলে গোটা মহাদেশে অকল্পনীয় মন্দার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা কাটিয়ে তোলা কঠিন হবে বলে একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷ বেরেনবার্গ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ফ্লোরিয়ান হেনসে সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেন, কোভিড-১৯-এর প্রসার রুখতে পদক্ষেপের জের ধরে গোটা ইউরোপ জুড়ে অর্থনীতি বিকল করে দিয়েছে৷ লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে পরিষেবা ক্ষেত্র মারত্মক ক্ষতির মুখ দেখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ এমন প্রেক্ষাপটে চরম বেকারত্বের আশঙ্কা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে৷
বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ইউরোপীয় ও জাতীয় স্তরে অনুদান, আর্থিক সহায়তা, ভরতুকি ও ঋণের মতো নানা রকম উদ্যোগের ফলে কার্যক্ষেত্রে কতটা সুফল পাওয়া যাবে, এখনই তার পূ্র্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে না৷ আরো বেশিকাল ধরে সংকট চলতে থাকলে তার পরিণাম সম্পর্কেও কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না৷
এসবি/এসিবি (এপি, এএফপি)
কড়াকড়ি উঠে গেলেও জার্মানিতে কী কী বন্ধ থাকবে?
করোনা সংকটের কারণে জার্মানিতে কড়াকড়ির মেয়াদ আপাতত ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ এই সময়ে বা তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে বাধানিষেধ তুলতে চাইছে না সরকার৷ এমনই কিছু দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: JACQUES COLLET/AFP/Getty Images
কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব
সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ একা, দুইজন অথবা পরিবার বা বাসার অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে বার হওয়ার অনুমতি রয়েছে৷ সব ক্ষেত্রেই কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ করোনায় আক্রান্ত কোনো মানুষ যাতে বড়জোর একজনের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Sommer
বন্ধ থাকবে কিন্ডারগার্টেন
স্কুলের নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাস আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও সরকার এখনো কিন্ডারগার্টেন খুলতে সাহস পাচ্ছে না৷ শিশুদের কাছে সামাজিক দূরত্ব ও কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রত্যাশা করা কঠিন বলেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশার মানুষ যাতে কাজে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে তাদের শিশুদের দেখাশোনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Fassbender
বার, রেস্তোঁরা খুলছে না
বার বা রেস্তোরাঁর বদ্ধ ঘরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বলে এই সব স্থাপনাও আপাতত বন্ধ রাখছে জার্মানির সরকার৷ তবে কিছু রেস্তোঁরা রান্না করা খাবার কেনার ব্যবস্থা শুরু করেছে৷ বাইরে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অর্ডার দিয়ে মোড়কবন্দি খাবার কিনছেন অনেক মানুষ৷ বাসায় খাবার পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করলেও বাধা নেই৷
ছবি: picture-alliance/D. Kubirski
বড় আকারের অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা
কনসার্ট, উৎসব, খেলার ম্যাচ ইত্যাদি যে সব অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সমাবেশ হয়, সেগুলি আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখছে জার্মানির সরকার৷ ভিড় যেখানে অনিবার্য, সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কার্যত অসম্ভব৷ আয়োজকদের পক্ষেও এমন গ্যারেন্টি দেওয়া সম্ভব নয়৷ একই কারণে বন্ধ থাকছে মিউজিয়াম, গ্যালারির মত স্থাপনাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রার্থনা করা যাবে না উপাসনালয়ে
গির্জা, মসজিদ, সিনাগগ, মন্দির – কোনো ধর্মের মানুষই আপাতত সমবেত হয়ে প্রার্থনা করতে পারবেন না৷ সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের পর ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ উপাসনালয়ে কড়া বিধিনিয়ম নিশ্চিৎ করে প্রার্থনার ব্যবস্থা করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা চিন্তা করবে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
ভ্রমণ, পর্যটনের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে
ভ্রমণেও বহাল থাকছে নিষেধাজ্ঞা৷ এমনকি দেশের মধ্যে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিচ্ছে না সরকার৷ খুব জরুরি ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ পর্যটকের অভাবে বেশিরভাগ হোটেলও বন্ধ থাকছে৷ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিত্যযাত্রীদের জন্য শুধু কয়েকটি হোটেল খোলা রাখা হচ্ছে৷ তবে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের নিয়ম মেনে বেশি মানুষ সেই সুযোগ গ্রহণ করছেন না৷