সারা বিশ্ব চলমান সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নাকাল হলেও ২০১৮ সালে সন্ত্রাসজনিত মৃত্যুর হার কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে৷ বুধবার ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদের সূচকে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কমেছে৷ বলা হয়, সন্ত্রাসবাদের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ইরাক৷ এই তালিকায় যথাক্রমে শীর্ষ পাঁচে রয়েছেআফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, সিরিয়া ও পাকিস্তান৷ প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ২০১৬ এবং ১৭ সালের তুলনায় ২৭ শতাংস মৃ্ত্যু কমেছে সারা বিশ্বে৷
সন্ত্রাসেবাদের শিকার শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আধিক্য রয়েছে৷ গতবারের মতো এবারও ইরাক ও সিরিয়া সবার প্রথমে রয়েছে৷ যদিও গত বছরের তুলনায় ইরাকে পাঁচ হাজারেরও কম লোক মারা গেছে৷ ২০১৬ সালের সঙ্গে তুলনা করে সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে এক হাজার৷
এদিকে এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ২০১৭ সালের মতো এবারও বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসবাদী দল ইসলামিক স্টেট তথা আইএস৷ তবে এর ক্ষমতা ও কার্যক্রম সীমিত হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে৷ ফলে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা কমেছে৷
স্থানীয় সামরিক বাহিনী ও সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনীগুলো বিভিন্নস্থানে আইএসকে দমন করতে পারায় এই সফলতা এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে৷
এদিকে ইউরোপে চোখে পড়বার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমেছে৷ ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পিস উল্লেখিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় পরিসংখ্যান ৭৫ শতাংশ কমেছে৷
পশ্চিম ইউরোপে সন্ত্রাসজনিত কারণের হত্যার সংখ্যা গত এক বছরে আশাবাদী হওয়ার মতো কমেছে৷ ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬৮, যেখানে ২০১৭ সালে এটি ৮১তে নেমে এসেছে৷
অন্যদিকে প্রতিবেদনটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কট্টরপন্থিদের মৌলবাদী আচরণ বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়িয়েছে৷ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে৷
ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিসের প্রতিবেদনটি বিশ্বের ১৬৩টি দেশের ওপর তৈরি করা হয়৷
এফএ/ডিজি
কোণঠাসা হলেও ফুরিয়ে যায়নি আইএস
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷