করোনা সংকটকালে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতের নাজুক অবস্থায় চিত্র বেশ পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে৷ সারা বিশ্ব প্রয়োজনের তুলনায় ৫০ লাখ ৯০ হাজারের বেশি নার্স কম আছেন৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে৷ সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে আফ্রিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ অ্যামেরিকার দরিদ্র দেশগুলোতে৷ ডব্লিউএইচও সংকট সমাধানের পরামর্শও দিয়েছে৷
ডব্লিউএইচওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসিস বলেন, ‘‘যে কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হলেন নার্স৷ কোভিড-১৯ মহামারীতে অনেক নার্স সামনে থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন৷’’
‘‘তাদের ভূমিকা যে কতখানি অমূল্য, এই প্রতিবেদন সে কথাই আবার মনে করিয়ে দিল৷ একই সঙ্গে এটা সতর্ক বার্তাও৷ তাই বিশ্বকে সুস্থ রাখতে নার্সদের প্রয়োজনে যথাযথ সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে৷’’
২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে নার্সদের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪৭ লাখ হয়েছে৷ তাদের ৮০ শতাংশের বেশি কাজ করেন ওই সব দেশে যেখানে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের বাস৷
জার্মানিতে নার্স: হাততালি বেশি, বেতন কম
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন বলে বিভিন্ন দেশের মতো জার্মানির নার্সরাও এখন হাততালি পাচ্ছেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসা এই স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন তাদের জন্য শুধু হাততালি যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Filip Romanovskij
কাজের চাপ
জার্মানির হাসপাতাগুলোতে আগে থেকেই নার্সের সংকট আছে। এই সংকট সামাল দিতে যারা আছেন তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, অথচ সে অনুযায়ী অর্থ পান না। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছাড়েন। ২৭ বছরের জ্যান একই কারণে ছয়মাস আগে চাকরি ছেড়েছিলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে ‘সৈনিক’। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ানের মত অনেক সাবেক নার্স আবার হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জার্মানিতে ৪০ হাজার নার্সের সংকট রয়েছে। বাস্তব চিত্র আরো খারাপ বলে ধারণা করা হয়। এতদিন এ বিষয়ে জনগণের আগ্রহ ছিল না।
ছবি: Filip Romanovskij
সংকট সবখানে
বার্লিনে একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, “আমি সম্মানিত, কিন্তু হাততালি কোনো কাজে আসবে না। শুধু নার্স নয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য যারা এই প্রক্রিয়ার অংশ, তাদের সব জায়গায় সংকট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিনে সবাই বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।’’
ছবি: Reuters/W. Rattay
‘হাততালি বাড়ি ভাড়া জোগাবে না’
হামবুর্গের একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, ‘‘লোকজন আমাদের জন্য হাততালি দিচ্ছে, এটা সত্যি দারুণ। কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি ভাড়া দেবে না।’’ তিনি মনে করেন,
“মানুষের প্রশংসা এবং স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটা আরো বেশি দরকার ছিল যখন আমরা ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের জন্য লড়াই করছিলাম।’’
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
প্রটেক্টিভ গিয়ারের সংকট
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে সুরক্ষা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসের অভাব। উন্নত দেশগুলোতেও এই সংকট চোখে পড়ার মতো। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। জার্মানিতে প্রায় ২,৩০০ হাসপাতালকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rietschel
আস্থাহীনতা
নার্স সংকটের কারণে যারা এ পেশায় আছেন তাদের উপর কাজের চাপ অনেক বেশি। জার্মানির নার্সিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ইয়োহানা ক্নুপেল বলেন, ‘‘কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে শিক্ষানবীশ নার্সদের অনেকে প্রথম বছরেই চাকরি ছেড়ে দেন।’’
ছবি: Imago-Images/7aktuell
অবস্থার উন্নতির আশা
জার্মানিতে নার্সদের সংগঠনগুলো আশা করছে, করোনা সংকটে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে চলে এসেছে। ভালো বেতন ও কর্ম পরিবেশের জন্য তাদের আন্দোলন এ থেকে লাভবান হবে। জার্মানিতে নার্সরা সাধারণত ঘণ্টায় ১৫ ইউরো বেতন পান।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Heimken
7 ছবি1 | 7
বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন নার্স যে দেশ জন্ম নিয়েছেন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তার বাইরের কোনো দেশে কাজ করেন৷ আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রতি ছয়জনে একজন নার্স অবসর নেবেন৷
বিশ্বের ৯০ শতাংশ নার্স নারী এবং তাদের হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ পদে আছেন৷ ফলে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরার কেউ নেই৷
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নার্সরা যখন নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন- উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন সরকার ব্যবস্থায় একজন প্রধান নার্সিং কর্মকর্তা থাকবেন তখন তাদের অবস্থার উন্নতি হবে৷
জার্মানির মত উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দেশেও নার্সদের বেতন এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য আন্দোলনে নামতে হয়েছে৷ সংকট মোকাবেলা করে কীভাবে নার্সদের অবস্থার উন্নতি করা যায় তার একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছে ডব্লিউএইচও৷ সংস্থাটি এই খাতে ‘জরুরি বিনিয়োগের’ আহ্বান জানিয়েছে৷