সদ্য শেষ হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে বিদেশি কয়েকজন আলোকচিত্রীর সাজানো ছবি তোলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেট জগতে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিন টঙ্গী রেল স্টেশনে অপেক্ষমান একটি ট্রেনের এক শিশু জানালা দিয়ে মাথা বের করে মোনাজাত করছিল ৷ তাকে ঘিরে ছবি তুলতে ব্যস্ত কয়েকজন বিদেশি ফটোগ্রাফার৷ মোনাজাতের মধ্যেই তাকে নানা রকম নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ফটোগ্রাফাররা৷ পেছন থেকে সে দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন বাংলাদেশি ফটো সাংবাদিক এ এম আহাদ৷ সেদিনই নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে আপলোডও করেন ভিডিওটি৷
অল্প সময়েই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়৷ তার টাইমলাইন থেকে ভিডিওটি দেখা হয় ৪৭ হাজার বারেরও বেশি বার৷ আর ভিডিওটি শেয়ার করেন কমপক্ষে ৩০৭ জন৷ ফটোগ্রাফি বিষয়ক জনপ্রিয় ব্লগ ‘পেটাপিক্সেল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও এডিটর-ইন-চিফ মাইকেল ঝাং এ নিয়ে ‘দিস ইজ হাউ ফটোগ্রাফার্স স্টেজ সিন টু উইন প্রাইজেস’ শিরোনামে একটি ব্লগের সঙ্গে আহাদের সেই ভিডিওটিও শেয়ার করেন৷ সেখান থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করেন প্রায় চার হাজার জন৷
আহাদের টাইমলাইনে আপলোড করা ভিডিওটির মন্তব্যে অনেকেই, বিশেষ করে দেশি-বিদেশি ফটো সাংবাদিকরা এ ধরনের ‘অনৈতিক' কাজের তীব্র সমালোচনা করেন৷ সাথে সাথে যেসব ফটোগ্রাফারের সহায়তায় এরা এদেশে এসে এ ধরনের কাজ করেন, তাদেরও সমালোচনা করেন তারা৷
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fahadpix%2Fvideos%2F10215501134621010%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="316" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>
উল্লেখ্য যে, বিশ্ব ইজতেমাসহ কিছু অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিদেশি ফটোগ্রাফারদের জন্য বিভিন্ন রকম ফটোগ্রাফিক প্যাকেজ ট্যুর আয়োজন করেন বাংলাদেশের কিছু ফটোগ্রাফার৷ পেটাপিক্সেল সাইটে শেয়ার করা এ ভিডিওর নিচেও এর সমালোচনা করে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন দেশের পেশাদার আলোকচিত্রীরা৷
এ এম আহাদের ভিডিওর সূত্র ধরে জানা যায়, বিদেশি ওই ফটোগ্রাফারদের মধ্যে যিনি দরজায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলছিলেন তিনি হলেন মালয়েশিয়ার ফটোগ্রাফার ড্যানি ওং৷ বেশ কিছু আন্তর্জতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাওয়া এই আলোকচিত্রীর বিশ্ব ইজতেমারই একটি ছবি গত দুই বছর আগে সমালোচিত হয় বিশ্বজুড়ে৷ মালয়েশিয়ার ট্রাভেল ফটোগ্রাফার সোসাইটি (টিপিএস)-এ সে বছর প্রথম পুরষ্কার পাওয়া তার ছবিটি তিনি তৈরি করেছিলেন দু'টি ছবি জোড়া লাগিয়ে৷ বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরে অবশ্য তার সে পুরস্কার বাতিল ঘোষণা করেছিল টিপিএস কর্তৃপক্ষ৷
প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আলোকচিত্রীরা আসেন ছবি তুলতে৷ আর এর মধ্যে বেশিরভাগই আসেন চীন, মালয়েশিয়া ও কোরিয়া থেকে৷ উদ্দেশ্য, পুরষ্কারের ছবি তোলা৷ আর এসব ফটোগ্রাফার বেশিরভাগ ছবিই তোলেন সাজিয়ে গুছিয়ে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই৷ গত কয়েক বছর ধরেই বিদেশি এসব ফটোগ্রাফারদের কর্মকাণ্ড সমালোচনা করে আসছিলেন বাংলাদেশি ফটো সাংবাদিকরা৷ তাদের দাবি, বাংলাদেশের খারাপ দিকগুলোকেই বিশ্বের কাছে আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন কিছু বিদেশি ফটোগ্রাফার৷
এমএম/এসিবি
বিশ্ব ইজতেমা: দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে অনুষ্ঠিত হয় তাবলিগ জামাতের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় এ সমাবেশের নানান দিক নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ
বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ৷ বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদীর তীরে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মুসলমানদের বিশাল এই সমাবেশ৷ পৃথিবীর নানান দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এতে যোগ দেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
অর্ধশত বছরের পুরনো
এ বছরেরটি বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম আসর৷ ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
গোড়ার কথা
১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়৷ এর পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা৷ তখন এই সমাবেশ কেবল ইজতেমা নামেই পরিচিত ছিল৷
ছবি: Reuters
যখন থেকে তুরাগ তীরে
ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়৷ ওই বছর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নিতে শুরু করে৷ তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামে৷ পরের বছর থেকে তুরাগ নদীর উত্তর-পূর্ব তীরের বিশাল খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সমাবেশ৷
ছবি: Reuters
দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ
সৌদি আরবের হ্জের পর বিশ্ব ইজতেমা মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ৷ প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেনে প্রায় ত্রিশ লাখ মুসলমান৷
ছবি: REUTERS
বিদেশি অংশগ্রহণকারী
২০১৭ সালে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ছয় হাজার মুসল্লী৷ এসেছিলেন বিশ্বের ৯৬ টি দেশ থেকে তাঁরা৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
দুই পর্বে ইজতেমা
পুণ্যার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই পর্বে৷ এবছর প্রথম পর্ব ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি৷
ছবি: REUTERS
শুরু শুক্রবার
বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বই শুরু হয় শুক্রবার৷ ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় বয়ান (ধর্মীয় আলোচনা)৷ এদিন জুম্মার নামাজে অংশ নিতেও অনেকে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে আসেন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা৷ এ বছর বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও অংশ নেন আখেরি মোনাজাতে৷
ছবি: REUTERS
নিরাপত্তা
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে সরকার৷ প্রায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য ছাড়াও বেশ কিছু ব়্যাব সদস্যও থাকবে ইজতেমা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায়৷ এছাড়া বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার আর সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করা হবে মেলা প্রাঙ্গণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
অন অ্যারাইভাল ভিসা
বাংলাদেশে যেসব দেশের দূতাবাস নেই, সেসব দেশের নাগরিকরা ইজতেমায় অংশ নিতে চাইলে বাংলাদেশে ৩০ দিনের অন অ্যারাইভাল ভিসা পান৷
ছবি: REUTERS
শেষ দিনে
আখেরি মোনাজাতের দিন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় টঙ্গী এলাকা৷ তখন আশপাশের এলাকার সড়ক, বাড়ির ছাদে বসেও মোনাজাতে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
বিশেষ ট্রেন
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সড়ক বন্ধ
দুই পর্বেই আখেরি মোনাজাতের দিনে ভোর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা ও গাজীপুরের কিছু সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে৷ এদিন ঢাকার নিকুঞ্জ থেকে উত্তরামূখী এবং গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীমূখী সড়ক আর আশুলিয়া থেকে উত্তরামূখী সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷