গত দুই দশকে গোটা বিশ্বের চেয়ে দ্বিগুণ হারে তাপমাত্রা বেড়েছে ইউরোপের। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক রিপোর্টে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গোটা বিশ্বেই তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে ইউরোপের গড় তাপমাত্রা বাকি বিশ্বের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি দশকে ইউরোপের তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও এই সময়ের মধ্যেই ইউরোপের দেশগুলি কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড মাত্রায় কমিয়েছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত সংস্থা ডাব্লিউএমও এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস যৌথ সমীক্ষা করে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানেই বিস্তারিতভাবে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গলছে হিমবাহ
রিপোর্টে বেশ কয়েকটি বিপদের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউরোপের আলপাইন হিমবাহগুলি ক্রমশ গলতে শুরু করেছে। ১৯৯৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে অ্যালপাইন হিমবাহগুলি গড়ে ৩০ মিটার গলে গেছে। এই হারে হিমবাহ গলতে থাকলে বড় বিপর্যয় হতে পারে। গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদরও গলছে। যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হচ্ছে।
গলছে এশিয়ার হিমবাহ, বিপন্ন শতকোটি মানুষের জীবন
তীব্র তাপদাহে ক্রমাগত গলছে হিমালয়ের বরফ, যার উপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ৷ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী অন্য অঞ্চলের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে হিমালয়৷
ছবি: zhang zhiwei/Zoonar/picture alliance
বন্যার প্রকোপ
গত মে মাসে উত্তর পাকিস্তানের হাসানাবাদের হিমবাহী হ্রদের জল উপচে বন্যা সৃষ্টি হয়৷ ভেসে যায় বাড়িঘর৷ ধ্বংস হয় দুইটি জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও একটি সেতু৷ এতে ৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷
ছবি: -/AFP/Getty Images
উভয় সংকট
এই পার্বত্য অঞ্চলে অর্ধশত কোটি মানুষের বসবাস৷ জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জন্য ডেকে আনছে নানা ধরনের বিপদ৷ হিমবাহের বরফ গলায় তারা পড়ছেন উভয় সংকটে৷ মে মাসে পাকিস্তান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৩৩টি হিমবাহী হ্রদ অস্বাভাবিক গরমের কারণে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ আবার সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের জন্য এই হ্রদগুলোর উপর নির্ভরশীল৷ এর অর্থ হিমবাহ চিরতরে গলে গেলে তারা জলের সংকটে পড়বেন৷
ছবি: zhang zhiwei/Zoonar/picture alliance
মিঠা পানির বৃহৎ উৎস
হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা নিয়ে গঠিত এশীয় পার্বত্য অঞ্চল৷ চীন থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকায় ৫৫ হাজার হিমবাহ আছে৷ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে পৃথিবীর স্বাদু জলের সবচেয়ে বড় উৎস এটি৷ এই জল এশিয়ার ১০ টি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় যার উপর নির্ভরশীল ২০০ কোটি মানুষ৷ এরমধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের জলে নির্ভরশীল ৭৫ কোটি মানুষের জীবন৷
ছবি: Thomas L Kelly/robertharding/picture alliance
উত্তপ্ত হিমালয়
জাতিসংঘের ইউএনডিপির তথ্য অনুযায়ী, হিমলায় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারলে মধ্য এশিয়ার দুই তৃতীয়াংশ বরফ চলতি শতকের শেষাংশে হারিয়ে যেতে পারে৷ ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্সে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় যেসব দেশ বেশি বিপদে তার দশটিতে আছে পাকিস্তান ও নেপাল৷ ভারত ও আফগানিস্তান আছে শীর্ষ কুড়িতে৷
ছবি: Sideways
জলবিদ্যুৎ হুমকিতে
গলতে থাকা হিমবাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ হিমালয় অঞ্চলের ২৫০ টির বেশি হাইড্রোলিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হুমকিতে আছে৷ সেগুলো নতুন করে নকশা করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না৷ কেননা বরফ গলে গেলে জল সংকটে পড়বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো৷
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
দূষণরোধের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু দূষণ রোধ হিমবাহ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে৷ এই অঞ্চলে কালো কার্বনের পেছনে ইটের ভাটা ও জীবাষ্ম জ্বালানি দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দায়ী৷ দ্বিতীয় বৃহৎ দূষণকারী ডিজেল গাড়ি, যার কারণে সাত থেকে ১৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়৷
ছবি: REUTERS
দায় কার
হিমালয়ের বরফ গলার পেছনে ভূমিকা রাখছে সার্বিকভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি৷ কিন্তু এজন্য ভুক্তভোগী হওয়া দেশগুলোর দায় সামান্যই৷ যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাস নিঃসরণে পাকিস্তানের ভূমিকা মাত্র এক শতাংশ৷ অন্যদিকে আফগানিস্তান ও নেপালের দায় আরো কম৷ কিন্তু এই দেশগুলোতেই বন্য, ভূমি ধস কিংবা জলের সংকট ক্রমশ বাড়ছে৷
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ''ইউরোপ গোটা বিশ্বের সামানে উষ্ণায়নের প্রমাণ তুলে ধরছে। স্পষ্ট করে দিচ্ছে, যথেষ্ট তৈরি থাকা সত্ত্বেও ইউরোপ উষ্ণায়নের সঙ্গে যথেষ্ট লড়াই করে উঠতে পারছে না।''
২০২১ সালের গ্রীষ্মে প্রথম গ্রিনল্যান্ডে বৃষ্টি হয়েছে। তুষারপাতের জায়গায় বৃষ্টির জল পড়েছে বরফের চাদরের উপর। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও ইউরোপে একের পর এক তাপপ্রবাহ, বন্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপে এধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত উষ্ণায়নের কারণে পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের। এরমধ্যে ৮৪ শতাংশ ঘটনাই হয় বন্যা, নয় ঝড়।
কার্বন নিঃসরণ কমেছে
অথচ এই সময়পর্বের মধ্যেই ইউরোপের দেশগুলি গড়ে ৩১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে পেরেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। এই শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইউরোপ কার্বন-নিউট্রাল বা কার্বন নিরপেক্ষ জায়গায় পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।