1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থাই চাইবে না ভারত-পাক যুদ্ধ লাগুক'

শময়িতা চক্রবর্তী কলকাতা
২ মে ২০২৫

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী৷

কাশ্মীরের শ্রীনগরে প্যারামিলিটারির টহল
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকেছবি: Saqib Majeed/SOPA Images/ZUMA Press Wire/picture alliance

ডয়চে ভেলে: ২০১৯ -এর পরে যে উন্নয়নের মুখ দেখলো কাশ্মীর, ২২ এপ্রিলের ঘটনা তার উপর একটা আঘাত। এখান থেকে আবার সেই বিশ্বাসের পুনর্নির্মাণ হবে কীভাবে?

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী: পাকিস্তান যেভাবে বারবার ক্রসবর্ডার সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছে, সেটা ভারতের এই মুহূর্তে একটা বড় চিন্তা। এটা তো নতুন নয়। অতীতেও, বিশেষ করে ১৯৮৫-র পর থেকে, ধারাবাহিকভাবে এটা চলছে। কোনো একটা জায়গায় পাকিস্তানকে বোঝাতে হবে যে, এটা চলবে না। আইএসআই, দেশের সামরিক বাহিনী এবং জঙ্গি সংগঠন নিয়ে পাকিস্তান একটা ত্রিভুজ তৈরি করে রেখেছে। এই আমাদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। একই সঙ্গে আমাদের সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার উপরেও থ্রেট। আমার মনে হয় এটার একটা নির্ণায়ক মীমাংসা অবশ্যই জরুরি। সেটা সামরিকভাবে হবে, না অসামরিক উপায়ে হবে সেটাই দেখার। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। সামরিক বাহিনীকে স্ট্র্যাটেজি নেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রিহ্যান্ড দেওয়া হয়েছে। ফলে যারা এটা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি প্রয়োজন। তবে সাধারন মানুষকে পর্যটনে ফিরিয়ে আনতে হয়ত সময় লাগবে। কিন্তু উন্নয়ন বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। আমি যতদূর খোঁজ নিলাম, রেলের কাজ বন্ধ হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি জম্মু থেকে বন্দেভারত ছুটবে। রেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। উন্নয়নের কাজ চলছে। পর্যটনকে আবার এই জায়গায় ফেরাতে হয়ত খানিকটা সময় লাগবে। সারা ভারতকে এই বার্তা দিতে হবে যে, কাশ্মীরকে জঙ্গিমুক্ত করা গেছে, আপনারা নিরাপদে বেড়াতে যেতে পারেন। এই আশ্বাসটা দিতে হবে। ভারত সরকারকেই এই সার্টিফিকেট দিতে হবে। সময় লাগলেও এই ঘোষণা সরকারকেই করতে হবে। না হলে পর্যটন গতি পাবে না। মানুষের বিশ্বাস ফেরানোর জন্যও এটা খুব জরুরি।    

পর্যটকদের উপর আক্রমণ তো খুব প্রচলিত একটা চিত্র নয়। এই আক্রমণের উদ্দেশ্য কী ছিল বলে মনে করেন?

এর আগে পর্যটক আক্রান্ত হয়েছেন। জম্মু কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারতে হয়েছে। অমরনাথ যাত্রাতে তো অনেকবার আক্রমণ হয়েছে। এবারের হামলার একটা ছক ছিল যেটা সামনে এসেছে। এটার কারণ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক পরিকাঠামোতে আঘাত হানা। এটাতে যদি আঘাত হানা যায়, তাহলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে। সুখের খবর হলো এত বড় ঘটনার পরেও ভারতে হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে বাসও করছেন। কেউ কারুর প্রতি বিদ্বেষ ছড়াননি। এবং আমি প্রত্যেক ভারতবাসীকে তার জন্যও ধন্যবাদ জানাবো। টার্গেট ছিল হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করার। পাকিস্তান সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পাহেলগাম হামলায় একটা গোয়েন্দা গাফিলতির কথা উঠে আসছে বারবার। ওই জায়গায় নিরাপত্তা রক্ষীদের না থাকার কথাটাও উঠে আসছে এই গাফিলতির কারণ কী? ২০১৯-এর পরে মোটের ওপর শান্তি ফিরেছিল কাশ্মীরে। জঙ্গি হানা কমেছে। পর্যটকদের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। কোথাও কি একটা শিথিলতা ছিল?

আর্টিকেল ৩৭০ তুলে দেওয়ার পর জম্মু কাশ্মীরের উন্নতি কিন্তু চোখে পড়ার মতো হয়েছিল। রাজনৈতিক এবং সামাজিক, এই দুই ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক উন্নতি হিসেবে দুটো উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ৬০ শতাংশের মতো মানুষ অংশ নিয়েছিল। আবার কাশ্মীর ভ্যালির বিধানসভা নির্বাচনেও সর্বোচ্চ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ফলে রাজনৈতিক উন্নয়ন খুব ভালোভাবে এগোচ্ছিল। আর একই সঙ্গে এই অঞ্চলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো হয়েছে। যে-কোনো মাপকাঠিতেই উন্নয়ন হয়েছে। ৩৭০ উঠিয়ে দেওয়ার পর সেখানে চাকরিতে তফসিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সার্বিক উন্নয়নের একটা উদ্যোগ ছিল। পর্যটক সংখ্যা সাংঘাতিক বেড়েছে। সব মিলিয়ে যখন একটা ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রগতির দিকে যাচ্ছিল জম্মু কাশ্মীর। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছিল। নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থান হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজে নিয়মিত পঠনপাঠন চলছিল। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যেও কনফিডেন্স তৈরি হচ্ছিল। আমার মনে হয় এই স্বাভাবিক অবস্থা যতখানি গুরুত্ব পেয়েছে জম্মু কাশ্মীরের ইমার্জেন্সি অবস্থা ততখানি পায়নি। হয়ত এই বিষয়টা আরো মাথায় রাখার সুযোগ ছিল। আরো পাঁচটা মেইনস্ট্রিম রাজ্যের মতো না ভেবে যে সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা অতীতে ছিল তা যদি আরো শক্তিশালী করা হতো তাহলে অন্তত বাইরের শক্তি এই ঘটনাটা ঘটিয়ে আসতে পারতো না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফও থেকে যে অল পার্টি মিটিং হয়েছিল সেখানেও একথা স্বীকার করা হয়েছে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কোথাও একটা ছিল। সেটা ওমর আব্দুল্লার স্থানীয় প্রশাসনেও ছিল। সেটা সামরিক এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের মধ্যেও ছিল। কারণ সীমান্ত অতিক্রম করে এসে, অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে, দুদিন থেকে এরকম একটা ঘটনা ঘটিয়ে গেল, সেই সময় স্থানীয় প্রশাসন কী করছিল সেই প্রশ্ন তো উঠবেই। ফলে আপনার প্রশ্নের সূত্র ধরেই আমি বলব একটা খামতি তো ছিল আর সেটা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে এসেছিল।

এবার এই জঙ্গিহানার পরবর্তী সময়ের কথা যদি বলি, ভারত কতগুলি নির্দিষ্ট  ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে। দূতাবাসে প্রতিনিধির সংখ্যা সংকোচন করেছে। এছাড়াও ভিসা বাতিল হয়েছে। এই ব্যবস্থায় আমরা সবসময়েই দেখি দুদেশের সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ছেন। এর ভবিষ্যৎ কী?

অতীতেও এরকম সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো সাময়িক ব্যবস্থা, যা মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে ভারত বোঝাতে চেয়েছে একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তারা পাকিস্তানের উপর কতখানি কঠোর। টেনশন কমলে এই সিদ্ধান্ত আবার তুলে নেওয়াও হয়েছে। দুই দেশই তুলে নিয়েছে। অতীতেও একাধিকবার দুই দেশ দুই দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরাও বন্ধ করেছিলাম। আবার খুলেছে। এই প্রথম ১৯৬০-এর সিন্ধু জল চুক্তি রদ করা হলো। আমি আশা করবো ভারত সরকার নিশ্চই ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, 'তোমার প্রতিবেশী যত খারাপই হোক, তুমি তার পরিবর্তন করতে পারবে না।' অবশ্যই তাদের অন্যায় কাজের সবক শেখাতে হবে। মানুষ উপযুক্ত জবাবের অপেক্ষা করছে। তবে একই সঙ্গে ২২ এপ্রিলের পরবর্তী সময়ে যে সিদ্ধান্তগুলি (সিন্ধু জল চুক্তি রদ বাদ দিয়ে) নেওয়া হয়েছে, যাকে আমরা সফট ডিপ্লোম্যাটিক মেজার্স বলি, সেগুলো টেনশন কমলে উঠে যাবে।

এর আগে উরি বা পুলওয়ামার ঘটনার পরে ভারত আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে। সার্জিকাল স্ট্রাইক করেছে। পাহেলগামের ঘটনার পরে ভারতের উপর আন্তর্জাতিক চাপ কতটা?

ভারত এখন পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ফলে ভারত যদি অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তার প্রভাব সারা পৃথিবীতে পড়বে। অ্যামেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা চীন সর্বত্র পড়বে। গ্লোবালাইজেশানের পৃথিবীতে একটা কোথাও যুদ্ধ লাগলে তার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়ে। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়েছিল ইউরোপে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়াতেও। রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো দেশের যুদ্ধে যদি প্রভাব পড়ে, তাহলে ভারতের মতো বড় অর্থনীতর দেশে যুদ্ধ হলে তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে, স্টক মার্কেটে পড়বে। বিশ্ব রাজনীতির ব্যবস্থা চাইবে না এই যুদ্ধটা লাগুক। অ্যামেরিকা, চীন বা রাশিয়া কেউই চাইবে না এই যুদ্ধটা লাগুক। বহুজাতিক সংস্থাগুলিও চাইবে না ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হোক।

যদি সংঘর্ষ লাগে তাহলে কী হবে? দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। পরিণতি কী হবে?

সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, পাকিস্তান তার ধারে-কাছে নেই। সেনার সংখ্যায় আমরা সাড়ে ১৬ লক্ষ। ওদের মাত্র ছয় লক্ষের মতো সেনা। আমাদের সাড়ে ছহাজার ট্যাঙ্ক, পাকিস্তানে আড়াই হাজার। আমাদের এক তৃতীয়াংশ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের কাছে আছে। যুদ্ধে পাকিস্তান দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু যুদ্ধ মানে তো শুধু এটাই নয়। যুদ্ধে উভয় পক্ষের ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ১৯৪৮-এ পাকিস্তান পরাজিত হয়েছিল। ১৯৬৫-র যুদ্ধে ভারত লাহোর ইসলামাবাদ দখল করেছিল। ১৯৭১-এ রাওয়ালপিন্ডি পর্যন্ত দখল করে। আমার ব্যাক্তিগত ধারণা বর্তমানের সামরিক শক্তি নিয়ে ভারত ২০ থেকে ২৫ দিনে পুরো পাকিস্তান দখল করার ক্ষমতা রাখে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ