ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপালের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বিষ ঠিক কোন দেশ থেকে এসেছে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা তা শনাক্ত করতে পারেননি৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ধরে নিয়েছিলেন, বিষের উৎস রাশিয়া বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণ হবে৷
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন গত মার্চ মাসে ডয়চে ভেলেকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, বিষ যে রাশিয়া থেকে এসেছে, পোর্টন ডাউনের কাছে তার প্রমাণ আছে৷
সামরিক পর্যায়ের স্নায়ুর বিষ
পোর্টন ডাউনের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরীক্ষাগারের মুখ্য কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি এইটকেনহেড স্কাই নিউজকে জানিয়েছেন:
- ‘‘বিষটি নভিচক নামের একটি সামরিক পর্যায়ের স্নায়ুর বিষ বলে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি৷''
- ‘‘বিষের সঠিক উৎস আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি, তবে আমরা সরকারকে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদান করেছি৷ অতঃপর সরকার সেই তথ্য অপরাপর সূত্রের সঙ্গে জুড়ে তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন৷''
- ‘‘এই বিষ তৈরির জন্য অত্যন্ত জটিল পদ্ধতির প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রের পক্ষেই করা সম্ভব৷''
- ‘‘আমরা অতিরিক্ত তথ্য আহরণের জন্য কাজ করে চলেছি, যা হয়তো আমাদের (বিষের উৎস) নির্ধারণে সাহায্য করবে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা তা করতে সমর্থ হইনি৷''
বরিস জনসনের দাবি
গত মাসে বরিস জনসনডয়চে ভেলেকে প্রদত্ত একটি একক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ওরা (পোর্ট ডাউনের বিজ্ঞানীরা) একেবারে নিশ্চিত ছিলেন – আমি নিজে (সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীকে) জিজ্ঞাসা করেছি: ‘আপনি কি নিঃসন্দেহ?' এবং তিনি বলেন, কোনো অনিশ্চয়তা নেই৷ আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তা নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না৷''
জরুরি বৈঠক
রাসায়নিক সমরাস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংগঠন জানিয়েছে যে, রাশিয়ার অনুরোধে বুধবার দ্য হেগ-এ ওপিসিডাব্লিউ-এর একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে৷
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন আংকারায় বলেছেন যে, স্নায়ুর বিষটির উৎস নির্ধারণ করা সম্ভব না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ‘‘তড়িঘড়ি রাশিয়ার বিরুদ্ধে (প্রচার) অভিযান সত্যিই বিস্ময়ের সৃষ্টি করে৷'' পুটিন বলেন যে, ঐ স্নায়ুর বিষ প্রায় ২০টি দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকতে পারে৷
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার যত চেষ্টা
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা বহুবার হয়েছে – কখনো সফল, কখনো অসফল৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
আলেক্সি নাভালনি
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনিকে সাইবেরিয়া থেকে জার্মানিতে নেওয়া হয়েছে৷ নাভালনির শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন সমর্থকরা৷ ১৯ আগস্ট ৪৪ বছর বয়সি সাবেক এই আইনজীবী চা খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudrayavtsev
সের্গেই স্ক্রিপাল
৬৬ বছর বয়সি সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনের স্যালিসবেরি শহরের একটি শপিং মলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় একটি বেঞ্চের উপর পাওয়া যায়৷ তিনি কোনো অজ্ঞাত বিষের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ বললেও যোগ করেছেন যে, ‘‘(ঘটনার) কারণ কী হতে পারে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করেছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে প্রাণ হারান৷ দৃশ্যত দুই নারী তাঁর মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ মালয়েশিয়ার একটি আদালতে অভিযুক্তদের বিচার চলার সময় জানা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যাম্পুল ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেবার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং রাশিয়ার ফেডারাল সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি ও পুটিনের বিরুদ্ধে দু’টি বই লেখেন৷ ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু’জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন৷ সরকারি তদন্তে দেখা যায় যে, তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kaptilkin
ভিক্টর কালাশনিকভ
সোভিয়েত কেজিবি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্নেল ভিক্টর কালাশনিকভ তখন সাংবাদিক হিসেবে সস্ত্রীক বার্লিনে বসবাস করছিলেন৷ ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কালাশনিকভ ও তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ সেখানে তাদের রক্তে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ পাওয়া যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে এক থেকে তিন মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকা নিরাপদ৷পরে এক সাক্ষাৎকারে কালাশনিকভ বলেন, ‘‘মস্কো আমাদের বিষ দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/RIA Novosti
ভিক্টর ইউশ্চেঙ্কো
ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ইউশ্চেঙ্কো ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ও দেখা যায় যে, একটি ভাইরাল ইনফেকশন ও সেই সঙ্গে রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার ফলে তাঁর অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটিস হয়েছে৷ এর ফলে ইউশ্চেঙ্কোর জন্ডিস হয়, মুখ ফুলে যায় এবং ত্বকে এক ধরণের দাগ থেকে যায়, যা ডাইঅক্সিন বিষের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকদের ধারণা৷ সরকারি চররা তাঁকে বিষ দিয়েছে বলে ইউশ্চেঙ্কো দাবি করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Leodolter
খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইসরায়েলের গুপ্তচর বিভাগ হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ কথিত আছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত হামাসের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তাঁর কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি-তে কাজ শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন – হঠাৎ কিছু একটা তাঁর থাই ফুঁড়ে দেয়৷ ওদিকে মার্কভ দেখেন, এক পথচারী তার ছাতা মাটি থেকে তুলছে৷ ছুঁচ ফোটার জায়গাটা ফুলে উঠে চারদিনের মধ্যে মার্কভ প্রাণ হারান৷ ময়না তদন্ত বলে, একটি শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্যু ঘটেছে৷ পথচারীর ছাতা থেকেই পেলেটটা ছোঁড়া হয়েছিল, বলে অনেকের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/Stringer
গ্রিগরি রাসপুটিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুটিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন গুনিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে আসেন প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে৷ প্রিন্স ইয়ুসুপভ তাঁকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন৷ সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা থেকে রাসপুটিনের কিছুই হয় না৷ অতঃপর রাসপুটিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ IMAGNO/Austrian Archives
9 ছবি1 | 9
আয়ারল্যান্ডে রুশ রাষ্ট্রদূত ইউরি ফিলাটভ বলেছেন, যুক্তরাজ্য যদি রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না দিতে পারে, সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, পুরো ঘটনাটি ‘‘রাশিয়ার সুনামহানি করার উদ্দেশ্যে লন্ডনের সংগঠিত একটি বড় আকারের প্ররোচনা৷''
স্ক্রিপাল ও তাঁর কন্যার উপর আক্রমণের জন্য রাশিয়াই দায়ী, এই ধারণার ভিত্তিতে ব্রিটেনের বহু মিত্রদেশ ডজন ডজন রুশ কূটনীতিক ও গুপ্তচরদের বহিষ্কার করেছে৷