হ্যাকাররা ভার্চুয়াল জগতে কাজ করলেও বাস্তব জগতেও বড় ক্ষতি করতে পারে৷ ‘বিষে বিষক্ষয়ের' নীতি মেনে অনেক সংস্থা তাদের মোকাবিলা করতে নিজেরাই হ্যাকার নিয়োগ করে৷ হামলার আগেই দুর্বলতা ও ত্রুটি শনাক্ত করা তাদের কাজ৷
বিজ্ঞাপন
হ্যাকার মোকাবিলা করবে হ্যাকার
04:17
তথ্য প্রযুক্তির ছাত্র ও হ্যাকার হিসেবে তাঁরা নাকি বিশ্বের কল্যাণ চান৷ হ্যাকার-রা অন্যের কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে৷ তবে এই দু'জনের কোনো কু-মতলব নেই৷ ২১ বছর বয়সি এই দুই তরুণ ‘বাউন্টি হান্টার'-এর মতো৷ বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে তাঁরা তথ্যভাণ্ডার ও সফটওয়্যারের মধ্যে ‘বাগ' বা নিরাপত্তার ফাঁক-ফোকর খোঁজেন৷ ‘বাগ বাউন্টি'-র ক্ষেত্রে সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানিগুলি হলো ফেসবুক, গুগল বা টুইটার৷ হয়তো বা পে-প্যাল৷ তবে আগে ভাবতে হয়, সেখানে কতটা পাবো এবং তার জন্য কতটা সময়ের প্রয়োজন৷ এবং তা থেকে কত টাকা পাওয়া যাবে৷ গুগল-এর ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে, যে সেখানে সহজে ফাঁক-ফোকর খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ কিন্তু পেলে অনেক বেশি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে৷''
দুজনেই প্রায় ৩০,০০০ ইউরো করে আয় করেছেন৷ উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শখের চাকরির মতো৷ কিন্তু টাকার জন্য তাঁরা এটা করেন না৷ স্বঘোষিত ‘গবেষক' হিসেবে সেবাস্টিয়ান নেফ মনে করেন, ‘‘প্রেরণা ও বড় কিছু আবিষ্কারের উত্তেজনা থেকেই এই তাগিদ আসে৷ কিছু মানুষ এক্সট্রিম স্পোর্টস নিয়ে মেতে ওঠে, বাকিরা হ্যাকিং করে৷''
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!
ছবি: Cover/Getty Images
5 ছবি1 | 5
এই ব্যক্তিও এমনটা করেছিলেন – তবে ৩০ বছর আগে৷ এখন তিনি জার্মান টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করেন৷ বলেন, সাইবার সিকিউরিটি তাঁদের জন্য বড় বিষয়৷ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে কোটি কোটি টাকার লোকসান হতে পারে৷ মার্কুস শ্মাল ‘ডয়চে টেলিকম' কোম্পানির তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ গত ৩ বছর ধরে তিনি নিজে হ্যাকার-দের কাজে লাগাচ্ছেন৷
এখনো পর্যন্ত সিস্টেমের মধ্যে প্রায় ১,৫০০ ফাঁক-ফোকর শনাক্ত করিয়ে তিনি ঠিক সময় পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন৷ ফলে অন্য কেউ অনলাইন স্টোর-এ দাম বদলে বা তথ্যভাণ্ডারে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করতে পারেনি৷ আইটি সিকিউরিটি প্রধান মার্কুস শ্মাল বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্যার মোকাবিলা করছি৷ যত ভালো প্রসেস হোক না কেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার গ্যারেন্টি দেওয়া সম্ভব নয়৷ সিস্টেমগুলি ইন্টারনেটে রয়েছে, হামলাকারীরা যে কোনো সময় বানচাল করার চেষ্টা করতে পারে৷ সেটা আজ অসম্ভব নয়৷ প্রতিটি দুর্বলতা শনাক্ত করতে পারলে ক্ষতির মাত্রা কমানো সম্ভব৷''
এই দুই হ্যাকার পাডারবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন৷ এখনো পর্যন্ত তাঁদের সেরা কাজ হলো পে-প্যাল ওয়েবসাইট-এর এক মারাত্মক দুর্বলতা শনাক্ত করা৷ তাদের সোর্স কোড-এর মধ্যে এক ত্রুটির কারণে যে কেউ তাদের সার্ভার থেকে তথ্য ডাউনলোড করতে পারতো৷ এই ভুল ধরিয়ে দিয়ে তাঁরা ১৫,০০০ ইউরো আয় করেছিলেন৷ বিশ্ব ভ্রমণের বাজেট উঠে এসেছিল৷
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় যা খেয়াল রাখবেন
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সব জায়গাতেই কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে৷ তবে কম্পিউটারের পর্দা থেকে কতটা দূরে বসা উচিত বা কতটা আলো দরকার আর সঠিকভাবে তা না হলে কী সমস্যা হতে পারে – এ সব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: imago/McPHOTO
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য
আজকের যুগে অফিস-আদালতের কাজ কম্পিউটার ছাড়া যেন ভাবাই যায় না৷ আর বাড়িতেও কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত মানুষ৷ মনিটর থেকে ঠিক দূরত্বে না বসা কিংবা অতিরিক্ত বা কম আলো থেকে হতে পারে চোখের নানা সমস্যা, এমনকি ঘাড় ব্যথাও৷ ‘‘কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এ সব সমস্যার কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়’’, বলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Colourbox
কতটা দূরত্বে বসবেন?
কম্পিউটারের বেশি কাছে বসে কাজ করলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, বিশেষকরে চোখের৷ বেশিরভাগ মানুষই কম্পিউটারের পর্দা থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসে কাজ করেন৷ এই দূরত্ব ৭৫ সেমি. হলে সবচেয়ে ভালো হয়৷ পরামর্শ দিয়েছে জার্মানির পেশাদারী নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের৷বিগ হাই রেজোলিউশন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই দূরত্ব ১০০ সেন্টিমিটার হতে পারে৷
ছবি: DW
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন
সব কিছুই নির্ভর করে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ওপর৷ কারণ প্রতিটি মানুষের বসা, স্ক্রিনের দিকে তাকানোর অভ্যাস, স্বভাব ইত্যাদি সবকিছুই আলাদা৷ তাই আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কে, কীভাবে পর্দার সামনে বসে কাজ করতে আরাম বোধ করেন৷ সঙ্গে যাতে হাত নাড়াচাড়া করার ভালো সুবিধা, যথেষ্ট জায়গা থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ তাছাড়া টেবিল এবং চেয়ারের উচ্চতাও লক্ষ্য রাখা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Syda Productions
আলো বা লাইট নির্বাচন
অনেকেই কম্পিউটারের কাজ করার সময় অভ্যাসবশত ঘরের লাইটটি জ্বালিয়ে রাখেন৷ বাইরে যথেষ্ট আলো থাকলে তো আর ঘরের আলোর প্রয়োজন হয় না৷ তাই নিজেকেই দেখে নিতে হবে কতটা আলো রয়েছে৷ অনেক অফিসেই মাথার ওপরে বিশাল টিউব লাইট থাকে, যাতে অনেকেরই অসুবিধা হয়৷ এক্ষেত্রে টেবিল লাইট ব্যবহার করুন৷ পরামর্শ কোলনন শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রাল্ফ ক্রট-এর৷
ছবি: DW/O. Klimtschuk
মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড লাইট
মনিটরের পর্দাটি সবসময় পরিষ্কার রাখুন৷ মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড আলোটি হালকা নীল হলে ভালো৷ তাছাড়া কম্পিউটারে লম্বা টেক্স পড়া বা কম্পোজ করতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর কালো রং দিয়ে লেখা হয়৷ এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে৷ প্রয়োজনে অক্ষরের সাইজ বড় করে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Munir Hasan
বিশ্রাম
অনেকেই কাজ করার সময় এত ব্যস্ত থাকেন যে চোখ বা ঘাড়ের বিশ্রামের কথা ভুলে যান৷ এর ফল অবশ্য পাওয়া যায় কিছুক্ষণ পরেই৷ তাই একবারে লম্বা বিশ্রাম না নিয়ে ঘণ্টাখানেক পর পর কয়েক মিনিট করে বিশ্রাম নেওয়া ভালো৷ অর্থাৎ দু-চার মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকা এবং জানালা দিয়ে অনেক দূরে তাকিয়ে থাকা আর ঘাড়টাকে একটি এদিক-সেদিক ঘোরালে আরাম পাওয়া যায়৷ এছাড়া সম্ভব হলে দাড়িয়ে একটু হাঁটাচলাও করা যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
6 ছবি1 | 6
এবার এই দুই তরুণ শিল্পক্ষেত্রে প্লান্টের কাজকর্মের ত্রুটি খুঁজছেন৷ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং হ্যাকার টিম শেফার্স বলেন, ‘‘কোনো কম্পিউটার সিস্টেমের মধ্যে বাইনারি কোড বা ডেটাব্যাংকের ত্রুটি এ ক্ষেত্রে মূল বিষয় নয়৷ বাস্তবে তার প্রভাব পড়লে বিপদ ঘটতে পারে৷ কোথাও কোনো পাম্প বিকল হয়ে গেলে, আলোর নিয়ন্ত্রণে ভুল হলে অথবা স্মার্টফোনে গোলমাল হলে বাস্তব জগতে তার বিশাল পরিণাম দেখা যায়৷ গ্রাহক সংক্রান্ত তথ্য চুরির তুলনায় তার পরিণাম অনেক মারাত্মক হতে পারে৷''
মার্কুস শ্মাল শুধু ‘বাউন্টি হান্টার'-দের উপর ভরসা করেন না৷ তাঁর কোম্পানি ডয়চে টেলেকম গ্রাহকদের আস্থা হারাতে চায় না৷ তারা নিজেরাই হ্যাকিং বন্ধে নিরাপত্তা সফটওয়্যার তৈরি করে৷
হামলার ধরন প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে৷ তাই শ্মাল আগে থেকেই তাদের জন্য ‘হানিপট' বা ফাঁদ পেতে রাখেন৷ মার্কুস শ্মাল বলেন, ‘‘অর্থাৎ আমরা ইন্টারনেটে এমন একটি ওয়েব সার্ভার, ওয়েব পর্টাল তৈরি করেছি, যা হামলাকারীর কাছে দুর্বল মনে হতে পারে৷ তারপর সার্চ ইঞ্জিনে তার প্রচার করেছি৷ তারপর হামলার অপেক্ষায় থাকি৷ তখন জানতে পারি কারা কীভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়৷''
যে সব হ্যাকাররা ‘বাউন্টি হান্টার' হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কাজ করেন, তাঁদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ প্রথমত ত্রুটি খুঁজে পেলে তা শোধরানোর আগে পাঁচ-কান করা যায় না৷ না হলে পারিশ্রমিক জোটে না৷