ঝালকাঠির লঞ্চের আগ্নিকাণ্ডে বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও লঞ্চের মালিকের কাছ থেকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
লঞ্চের কেরানী আনোয়ার রাত ৩টার ৫মিনিটে লঞ্চ মালিক হাম জালালকে ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন বলে তিনি শুক্রবার ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন৷
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে৷ দগ্ধ হয়েছেন বহু যাত্রী৷ নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ড
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড৷ সেখানে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজ ও লঞ্চ মেরামত করা হয়৷ শ্রমিকরা সেখানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন৷ আছে শিশু শ্রমিকও৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুড়িগঙ্গার তীরে
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দীর্ঘ দিনের পুরনো ডকইয়ার্ড৷ বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এখানে পঞ্চাশটিরও বেশি জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলছে মেরামতি
কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজ ও লঞ্চ মেরামত করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বরিশালেও গড়ে উঠেছে
অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী বড় আকারের লঞ্চগুলোর বড় একটা অংশ তৈরি হয় কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালেও কয়েকটি ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে৷ সেখানেও এখন তৈরি হয় বড় বড় যাত্রীবাহী লঞ্চ৷
ছবি: DW/M. Mamun
তৈরি হচ্ছে পণ্যবাহী জাহাজও
শুধু যাত্রীবাহী লঞ্চই নয়, কেরাণীগঞ্জে তৈরি হয় বড় আকারের পণ্যবাহী জাহাজও৷
ছবি: DW/M. Mamun
নির্মাণ খরচ কম, কারণ...
কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে তৈরি জাহাজগুলোতে ব্যবহৃত প্লেটের অধিকাংশই পুরনো৷ এ সব পুরনো স্টিল আসে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকার পুরনো ভাঙা জাহাজ থেকে৷ পুরনো স্টিল ব্যবহারের ফলে দেশে তৈরি এসব জাহাজ তৈরিতে খরচও হয় তুলনামূলক কম৷
ছবি: DW/M. Mamun
মরিচা পরিষ্কার
পুরনো জাহাজের বডি থেকে মরিচা সরাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ দেশের বিভিন্ন নদীর জল নোনা হওয়ায় এ সব জাহাজে মরিচা ধরে যায় দ্রুত৷ প্রতিবছর তাই এ সব জাহাজ থেকে মরিচা সরিয়ে রং করতে হয় নতুন করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভাসমান অবস্থায় মেরামত
ভাসমান অবস্থায় একটি কার্গো জাহাজে মেরামতের কাজ হচ্ছে৷ জাহাজের উপরের অংশে মেরামতের প্রয়োজন হলে সেটা ভাসমান অবস্থায়ই সম্পন্ন করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দেশেই তৈরি হচ্ছে প্রপেলর
এটি জাহাজের প্রপেলর তৈরির একটি ওয়ার্কশপ৷ জাহাজে ব্যবহৃত এসব বড় বড় প্রপেলর এক সময়ে বিদেশ থেকে আনা হতো৷ তবে এগুলো এখন দেশেই তৈরি হওয়ায় খরচ পড়ে অর্ধেকেরও কম৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুরনো ভেঙে নতুন
প্রপেলর তৈরির জন্য ভাঙা হচ্ছে পুরনো প্রপেলর৷ এসব পিতল গলিয়েই এখানে তৈরি করা হয় জাহাজ চলাচলের অত্যাবশ্যকীয় এ যন্ত্রটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবেশ দূষণ
খোলা আকাশের নীচেই গলানো হচ্ছে প্রপেলর তৈরির পিতল৷ এখানকার চুলায় ব্যবহৃত হয় মূলত পোড়া মোবিল৷ এসব চুলা থেকে নির্গত হয় অস্বাভাবিক কালো ধোঁয়া, যা এলাকার পরিবেশ দূষিত করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
শিশু শ্রমিক
একটি প্রপেলর ওয়ার্কশপে কাজ করছে ১২ বছর বয়েসি মোহাম্মদ আশরাফুল৷ তার মতো আরো অনেক শিশুকেই ডকইয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দেখা যায়৷ আশরাফুল জানায়, সকাল ৯টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে৷ সপ্তাহে অবশ্য একদিন ছুটি পায় সে৷ মাসে বেতন ছয় হাজার টাকা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম৷ শ্রমিকরা জানেনও না এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করার বিধানের কথা৷ মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায়ও পড়েন অনেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুরনো সরঞ্জামের দোকান
কেরাণীগঞ্জের ডকইয়ার্ড এলাকায় জাহাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পুরনো সরঞ্জামের দোকান এটি৷ এখানে তৈরি হওয়া জলযানগুলোতে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সরঞ্জামই পুরনো৷ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকার স্ক্র্যাপ জাহাজের মালামালই এই শিল্পের সবচেয়ে বড় যোগানদার৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখনও পুরনো পদ্ধতি
জাহাজে রং করায় ব্যস্ত শ্রমিক৷ জাহাজগুলোতে এখনো পুরনো পদ্ধতিতে রং করা হয়৷ অন্যান্য কাজের মতো এ কাজেও শ্রমিকদের শারীরিক ঝুঁকি আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
লঞ্চ মালিক বলেন, ‘‘সে বলেছে দোতলায় একটা বিস্ফোরণ হয়, সঙ্গে সঙ্গে কেবিনে আর লঞ্চের পেছনের বিভিন্ন অংশে আগুন দেখা যায়৷ তারপর তৃতীয় তলার কেবিন ও নিচতলায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন৷'' ওই লঞ্চে অন্তত ২১টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল এবং এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়া সময় পাওয়া পায়নি বলে জানান লঞ্চ মালিক৷ তিনি বলেন, ‘‘একটি পাইপ গেছে ইঞ্জিন থেকে, সেখানে প্রথম বিস্ফোরণ হয় বলে আনোয়ার আমাকে জানিয়েছে ৷''
হাম জালাল এম ভি অভিযান-১০, ৩ ও ৫ লঞ্চের মালিক, তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানান তিনি৷
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের অংশটি বেশি পুড়েছে৷ সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন৷
অগ্নিকান্ডে লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রী আব্দুর রহিম জানান, রাতে ডেক থেকে তিনি হঠাৎ বিকট শব্দ পান৷ তারপর লঞ্চের পেছন দিক থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখেন ৷ অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো লঞ্চ গ্রাস করে ফেলে৷ আতঙ্কিত হয়ে তিনি ডেক থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন৷
নদীর পাশের দিয়াকুল গ্রামের লোকজন নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন ৷ তারাই রহিমকে উদ্ধার করে গরম কাপড় দেন৷ পরে সকালে তাকে ট্রলারে করে ঝলাকাঠি শহরে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি৷