জার্মানিতে গবেষকরা জিব্রা মাছের মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষত সারিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছেন৷ তারা এই গবেষণার ফল মানবশরীরে ব্যবহারের উপায় খুঁজছেন৷
বিজ্ঞাপন
জিব্রা ফিশ নামে পরিচিত এই মাছগুলোর নিজেদের সারিয়ে নেয়ার অনন্য ক্ষমতা আছে৷ জার্মানির মিউনিখের হেলমহলৎস সেন্টারের একটি পরীক্ষাগারে এখন এদের বাস৷ সেখানকার গবেষক জোভিকা নিনকোভিচ বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে অনেক মাছ সাধারণ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাখতে পারি৷ পানির গুণাগুণ ও খাবারের পরিমাণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করি৷ এতে টেকসই ফল পাওয়া যায়৷ তারওপর প্রতিটি জোড়া আমাদের একশতের বেশি ডিম দেয় এবং এতে প্রজননও খুব ভালো হচ্ছে৷’’
প্রাণীরা মস্তিষ্কের ক্ষত কেমন করে সারায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন এই অনুজীব বিজ্ঞানী৷ গবেষণায় যেসব প্রাণীদের তিনি ব্যবহার করেন তাদের প্রথমে চেতনানাশক দেন তিনি৷ এরপর এদের মস্তিষ্কে খানিকটা ক্ষত তৈরি করেন এবং দেখেন কেমন করে তারা সেরে ওঠে৷
জোভিকার ভাষায়, ‘‘ক্ষত তৈরি হওয়া মানে মস্তিষ্কে কোষের মৃত্যু৷ স্ট্রোক বা ট্রমার কারণে এমনটি হতে পারে৷ আমাদের লক্ষ্য, এই কোষগুলোকে প্রতিস্থাপন করা৷ মাছ তা নিজে নিজে করে৷ ক্ষতিগ্রস্ত নিউরনগুলো মরে যায়৷ কিন্তু মাছের স্টেম কোষ এই নিউরনগুলোকে পুরোপরি প্রতিস্থাপন করে৷ নতুন কোষ তৈরি করে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে সারিয়ে তোলে৷’’
জিব্রা মাছের ক্ষমতা দেখে বিস্মিত গবেষকরা
04:40
বিভক্ত না হয়েই স্টেম কোষ সরাসরি স্নায়ু কোষে রূপান্তরিত হয়৷ মানবশরীরেও এই গবেষণার ফল কখনো কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করেন গবেষকরা৷ জিব্রা মাছের হৃদযন্ত্রেরও নিজে নিজে সেরে ওঠার ক্ষমতা আছে৷ তবে এটা কাজ করে ভিন্নভাবে৷ উল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্সের অধ্যাপক গিলবার্ট ভাইডিঙ্গার এই পদ্ধতি ব্যাখ্যার একটি অনুজৈবিক প্রক্রিয়া বের করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জিব্রা মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর ক্ষতিগ্রস্ত সব কোষই এরা প্রতিস্থাপন করতে পারে৷ সাধারণত মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীদের পূর্ণাঙ্গ টিস্যুর স্টেম কোষ নতুন কোষ তৈরি করে৷ কিন্তু জিব্রা মাছের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর পূর্ণাঙ্গ কোষগুলোই ভাগ হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে৷ সাধারণত এমন কোষগুলো অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিভক্ত হয় না৷’’
ভাইডিঙ্গার ও তার দল আরো দেখলেন যে, সিগনাল প্রোটিনগুলো ক্ষতের সীমানায় পেশীকোষগুলোকে অধিক হারে ভাগ করতে কাজ করছে৷ তাই নির্দিষ্ট হারে কোষের পূণর্জন্ম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন তারা৷ কিন্তু গবেষণালব্ধ এই জ্ঞান কি মানব শরীরেও ব্যবহার করা সম্ভব?
‘‘মাছ ও মানুষ উভয়ই একই গোষ্ঠীর, অর্থাৎ মেরুদণ্ডী প্রাণী৷ তাই আমাদের শারীরিক কাঠামোয় অনেক সাদৃশ্য রয়েছে৷ আমাদের কোষগুলোও প্রায় এক ধরনের৷ তাই জিব্রা মাছ ও মানুষের হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোও একই ধরনের কোষে তৈরি৷ মানবশরীর ও মাছের আশি ভাগ জিন ও কোষে মিল আিচে৷ এখন পর্যন্ত আমরা জানি যে, হৃৎপিণ্ডের কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মাচের জিনগুলো মানবশরীরেও আছে৷ পার্থক্য হল, ক্ষত তৈরি হলে মাছের কোষগুলো প্রতিস্থাপনে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের কোষগুলো নীরব থাকে,’’ বলেন তিনি৷
প্রায় ২০ বছরের গবেষণায় এই বিস্ময়কর ছোট মাছগুলো এখন আলোর পথ দেখাচ্ছে৷ তবে এদের সব গল্প আজও অজানা৷
ডির্ক বেপলার/জেডএ
সবচেয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেয় যে দশটি প্রাণী
মানুষ দূরের যাত্রায় পাড়ি দেয় প্লেন, ট্রেন বা বাসে চড়ে৷ ছবিঘরে দেখুন এমন দশটি প্রাণী, যারা মানুষের চেয়ে ঢের লম্বা পথ পাড়ি দেয় কোনো যানবাহন ছাড়াই...
ছবি: Imago/StockTrek Images
১০. স্যামন মাছ (৩,৮০০ কিলোমিটার)
জীবনের প্রথম কিছু বছর ঠাণ্ডা জলে বাস করে এই মাছটি৷ এরপর ডিম পাড়া হলে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় তারা৷ তিন থেকে চার বছর পর আবার জীবনের শেষাংশের বছরগুলি কাটাতে ফিরে আসে ঠাণ্ডা জলের নদীতে৷
ছবি: Imago/ZUMA Press/J. Mather
৯. মোনার্ক প্রজাপতি (৪,৮০০ কিলোমিটার)
মূলত ক্যানাডা আর উত্তর অ্যামেরিকার নিবাসী এই প্রজাপতি শীতকাল আসার আগেই হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পার করে এসে পৌঁছয় মেক্সিকোতে৷ মাত্র কয়েক মাস বাঁচতে পারা এই বিশেষ প্রজাপতি পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তির সাহায্যে দিক নির্ধারণ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Torres
৮. রেইনডিয়ার (৫,০০০ কিলোমিটার)
ইউরোপ, এশিয়া আর উত্তর অ্যামেরিকার শীতল অঞ্চলে পাওয়া যায় এই রেইনডিয়ার৷ বরফ গলা শুরু হলে সবুজ ঘাসের আশায় একদিনে ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে এই জন্তুটি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
৭. সেমিপালমেটেড স্যান্ডপাইপার (৫,৩০০ কিলোমিটার)
সমুদ্রের ধারে বাস করে এই পাখি৷ শীতকাল শুরু হওয়ার ঠিক আগেই মূল বাসস্থান ক্যানাডা ছেড়ে অ্যামেরিকার দক্ষিণের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয় এই পাখি৷ ঝাঁক মেনে চলা পাখিটি একবারে গোটা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷
ফড়িংয়ের কিছু বিশেষ প্রজাতি চার প্রজন্ম ধরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে বেড়ায়৷ শীতকালে এরা দক্ষিণ এশিয়ার দিকে উড়ে আসতে শুরু করে৷ মোনার্ক প্রজাপতির মতো এরাও হাওয়া ও পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তির সাহায্যে দিক নির্ধারণ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Guez
৫. লেদারব্যাক কচ্ছপ (২০,০০০ কিলোমিটার)
সমুদ্রে বাস করা এই কচ্ছপটি প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর অনায়াসেই পাড়ি দেয়৷ খাবারের খোঁজে এই কচ্ছপটি আটলান্টিক মহাসাগরের এক প্রান্ত থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার পাশের প্রশান্ত মহাসাগরে এসে জেলিফিশ শিকার করে৷
ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসী এই সিন্ধুঘোটক তার যাত্রা এখান থেকে শুরু করে বছর ঘুরে আবার একই স্থানে ফিরে আসে৷ গড়ে ২১,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া এই প্রাণীটি বছরের বেশ কিছু মাস সমুদ্রে বাস করে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO/E. u. H. Pum
৩. হাম্পব্যাক তিমি (২৩,০০০ কিলোমিটার)
স্তন্যপায়ী এই জীবের রয়েছে সবচেয়ে দীর্ঘ অভিবাসনের রেকর্ড৷ এই প্রজাতির তিমি মাছ বিশ্বের পাঁচটি মহাসাগরকেই ছুঁয়ে যায়৷
ছবি: Imago/StockTrek Images
২. সুটি শিয়ারওয়াটার (৬৫,০০০ কিলোমিটার)
দেখতে অনেকটা পায়রার মতন এই পাখি নিউজিল্যান্ডের আশেপাশে পাওয়া যায়৷ প্রতিদিন গড়ে ৯০০ থেকে ১,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম৷
ছবি: Imago/All Canada Photos
১. আর্কটিক টের্ন (৭১,০০০ কিলোমিটার)
মাত্র ১১৩ গ্রাম ওজনের এই পাখিটি কীভাবে বিশ্বের সব প্রাণীদের চেয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেয়, তা বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়৷ আর্কটিক সার্কল থেকে তার যাত্রা শুরু করে অ্যান্টার্কটিক সার্কলে গিয়ে পৌঁছয় এই পাখিটি৷