1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিহারে হারের পরে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী?

২৩ নভেম্বর ২০২৫

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিসহ এনডিএ জোটের জয়ে ধাক্কা খেয়েছে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া জোট৷ এমন প্রেক্ষাপটে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে সেই আলোচনা শুরু হয়েছে৷

বিধান সভা নির্বাচন জয়ের পর আনন্দ মেতেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছে বিজেপিসহ এনডিএ জোট৷ আর সেই জয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া জোট৷ এমন বাস্তবতায় জোটের ভবিষৎ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা৷ছবি: Amit

বিহারের ভোটে বিজেপি ও জেডিইউ-র জোট অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে৷ বিপরীতে আরজেডি ও কংগ্রেসের ফল শোচনীয়৷ এই কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে৷

বিহার ভোটের পরে

বিহারে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা জনতা দল ইউনাইটেড বা জেডিইউর নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে প্রচারে কোনো খামতি রাখেনি বিরোধী জোট৷ মহাগঠবন্ধনের নেতা তেজস্বী যাদবের সভায় বিপুল লোক সমাগম দেখা গেছে৷ কিন্তু এই ভিড় ভোটে পরিণত করতে পারেনি আরজেডি ও কংগ্রেস৷

এই জোটের ছোট শরিক ছিল কংগ্রেস৷ তবু হারের পরে স্বাভাবিকভাবেই রাহুল গান্ধীর দলের দিকে আঙুল উঠছে৷ এর ফলে এই জোটের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে অন্যান্য দলগুলো মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ সামনেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন৷ এরপরে কেবল, আসাম, তামিলনাড়ু ও পন্ডিচেরিতে বিধানসভার নির্বাচন হবে৷ সেখানে ইন্ডিয়া জোটের ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট নয়৷

১ ডিসেম্বর থেকে সংসদের অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে৷ এই অধিবেশনে বিজেপিবিরোধী বিভিন্ন দল এজেন্ডার ভিত্তিতে সহমত হয়ে একসঙ্গে কাজ করে৷ বিরোধী শিবিরকে একজোট দেখায় দিল্লিতে৷ যার প্রতিফলন রাজ্যস্তরে দেখা যায় না৷ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবার কেন্দ্রীয় স্তরে অন্যান্য দলকে কতটা পাশে পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে৷

বিভিন্ন রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের আগে আসন সমঝোতা নিয়ে মতবিরোধ দেখা যায়৷ বিহারের ক্ষেত্রেও একই ছবি ধরা পড়েছে৷ এবার অন্যান্য রাজ্যের শরিকরা একলা চলো নীতি নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আগে জোট ছেড়ে একা লড়াইয়ের কথা বলেছিল হেমন্ত সরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গ ত্যাগ করেছে৷

মহারাষ্ট্র কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলোর মধ্যে টানাপড়েন রয়েছে৷ উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা নিশানা করেছে কংগ্রেসকে৷ কিছুদিন আগে কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, মহারাষ্ট্রে পুরসভা ভোট তারা একাই লড়বে৷ শিবসেনার মতে, এতে সুবিধা হবে বিজেপির৷

এর আগেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন৷ এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি বিরোধী মোর্চার নেতৃত্ব দেওয়া রাহুল গান্ধীর কাছে চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠতে চলেছে আগামী দিনে৷

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের নেতৃত্বে আনেনি কংগ্রেস: আব্দুল মান্নান

10:05

This browser does not support the video element.

ঘুরে দাঁড়াবে বিরোধীরা?

বিহারে বিরাট ধাক্কা খেলেও এখনই বিরোধী জোট ছত্রখান হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন৷ তারা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘বিহার নির্বাচনের ফলাফলে ইন্ডিয়া জোট যে ছত্রখান হয়ে গেল, এমনটা মনে হয় না৷ অবশ্যই তারা যে উচ্চতায় বিরোধী প্রচারকে বাঁধছিল, সেটা ধাক্কা খেল৷ আরো বেশি ধাক্কা খেল, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্ব৷ কংগ্রেস যেহেতু বড় রাজ্যগুলো জেতার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারছে না, সেক্ষেত্রে তৃণমূল, ডিএমকে বা এনসিপির মত আঞ্চলিক শক্তিশালী দলগুলো অবশ্যই কংগ্রেসের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়বে৷ রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন থাকবে৷''

তার মতে, ‘‘আরজেডি তাদের ভোটের শতাংশ বাড়িয়েছে, অর্থাৎ বিরোধী ভোট কমে গেছে এমনটা নয়৷ চিরাগ পাসওয়ানের দল এনডিএতে ফিরে যাওয়াতে মূল ঘটনাটা ঘটেছে৷ বিরোধীদের বরং বেশি করে যেটা অনুশীলন করতে হবে যে, তৃণমূল স্তরের রাজনীতিতে এনডিএর সঙ্গে টক্কর দিতে হবে৷ বিহারে একটা আসনে ২০ হাজার বা ২৪ হাজার ভোট বাদ গেছে, সেখানে এনডিএ জিতে গিয়েছে ১০ হাজার ভোটে৷ এই জায়গায় টেক্কা দিতে হবে বিজেপিকে৷ এই ব্যর্থতাকে কীভাবে বিরোধী জোট মেরামত করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে৷ বিহারের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি ভোটের শতাংশ বাড়িয়েছে, কিন্তু যেহেতু গোটা জোট ভোট বাড়াতে পারেনি, সেহেতু তারা হেরে গিয়েছে৷ ফলে আমি মনে করি না জোট ছত্রখান হয়েছে৷''

সাংবাদিক প্রসূন আচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এটা মিডিয়ার এক ধরনের প্রচার৷ কংগ্রেস ও লালুপ্রসাদের দল একসঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেছে প্রায় ২৭-২৮ বছর৷ সুতরাং এটা ভেঙে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ বামপন্থিরা গত ১৫ বছর ধরে এই জোটের সঙ্গে রয়েছে৷ বিজেপির হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে তারা স্বাভাবিক মিত্র৷ এরা প্রায় ৪০ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমের একাংশের এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের প্রশ্ন করা, তারা শাসককে প্রশ্ন করে না৷''

সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এবার মনে করা হয়েছিল, বিহারে বিরোধী জোট তুল্যমুল্য লড়াইয়ে আছে৷ কিন্তু পরে দেখা গেল, সব ধারণা উল্টে দিয়ে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে এনডিএ৷ তাও আবার ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে৷ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার পর বিহারে অপ্রত্যাশিত ফল দেখা গেল৷ এটার একটা প্যাটার্ন রয়েছে৷  তাই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ যেভাবে ভোট চুরির অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো উত্তর কমিশন দিতে পারেনি৷''

বিরোধীদের ভূমিকায় প্রশ্ন

কিন্তু শুধু কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন৷

‘গণতন্ত্রে ধাক্কা খেয়েই বিরোধী দল তৈরি হয়’

This browser does not support the audio element.

সৌম্য বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে ধাক্কা থাকেই৷ এই ধাক্কা খেয়েই বিরোধী দল তৈরি হয়৷ কিন্তু আমাদের এখানকার বিরোধী দল, যারা আঞ্চলিক শক্তি, তাদের মধ্যে একটা পৃথক ভাবনা কাজ করে৷ তারা চায়, নিজের রাজ্যে তাদের ক্ষমতা অটুট থাকুক৷ সারা ভারতের দৃষ্টিতে তারা বিষয়টি দেখতে চায় না৷ যেমন ধরুন, ডিএমকে, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, আম আদমি পার্টি এদের লক্ষ্য কিন্তু কেন্দ্রের সরকার নয়৷ এরা নিজের রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়৷ বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসই একমাত্র পার্টি যাদের গোটা দেশে অস্তিত্ব আছে৷ ফলে তাদের দিল্লি দখলের যে তাগিদ রয়েছে, সেটা অন্যান্য বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর নেই৷''

এর আগে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট সরকার দুই দফায় কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকেছে৷ কংগ্রেসের শক্তি বা আসন আরো না বাড়লে তেমন মজবুত জোট তৈরি করা কঠিন বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন৷ যদিও জোটের প্রশ্নে অন্যান্য আঞ্চলিক দলের উপরে রাজ্য স্তরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব নয়৷ তাই বল রয়েছে তৃণমূল, ডিএমকে বা আপের কোর্টে৷

সৌম্যর বক্তব্য, ‘‘এই দলগুলো যদি নিজের রাজ্যের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে একটা একটা বিশ্বাসযোগ্য জোট তৈরি করতে পারে, যেখানে দেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে, তবেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে বিজেপিকে দাঁড় করা সম্ভব৷ নিজেদের ঘরটাকে গুছিয়ে রেখে তারপর দেশের কথা ভাবব, এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে৷ এটা ত্যাগ করতে না পারলে বিরোধীরা বিশ্বাসযোগ্য জোট হিসেবে বিজেপির মোকাবিলায় নামতে পারবে না৷ তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে, ডিএমকে তামিলনাড়ুকে, অথবা কোনোদিন আরজেডি বিহারকে বিপদ থেকে আড়াল করে রাখতে পারবে, কিন্তু তারা গোটা দেশকে রক্ষা করতে পারবে না৷''

প্রতিবাদে ভোট দেবেন না এই গ্রামের মানুষ

04:12

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ