ইউরোপে বাল্যবিবাহের কথা আগে তেমন শোনা যায়নি, তবে এখন শোনা যাচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডসে সিরিয়া থেকে বিয়ে করে আসছে শিশুরা৷ জার্মানিতেও এই হিড়িক শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ফাতিমা নামের একটি মেয়ে নেদারল্যান্ডসে এখন খুব আলোচিত ৷ গত ৩১ আগস্ট থেকে সে উধাও৷ মেয়েটির বয়স মাত্র ১৪৷ এই বয়সেই সে বিবাহিত এবং এক সন্তানের জননী৷ ১২ বছর বয়সেই মা হয় ফাতিমা৷ তখন সে ছিল সিরিয়ায়৷ কিন্তু স্বামীর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসে আসার পর ডাক্তার দেখাতেও সে যায়নি৷ তাকে বা তার পরিবারের কাউকেই খুঁজে পাচ্ছেনা ডাচ সরকার৷
এই ঘটনা বেশ নাড়া দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের সরকারি প্রশাসনকে৷ ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়া থেকে আসা ফাতিমা আবার দেশান্তরী হয়েছে৷ বালিকা বধূ ফাতিমার নিরুদ্দেশ হওয়ার রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে দেখা গেছে নেদারল্যান্ডসে ফাতিমার মতো মেয়ে আরো আছে৷ অনেক শিশু বয়সের মেয়েই সিরিয়া থেকে আসছে সন্তানের মা হয়ে৷
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের যে ছবি আলোড়ন তুলেছে
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ এখনো এক বড় সমস্যা৷ দেশটিতে ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে আঠারো বছর বয়স পার হওয়ার আগেই৷ বার্তা সংস্থা গ্যাটি ইমেজেস-এর এক ফটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করছেন এমনই একটি বাল্যবিবাহের কিছু ছবি৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের বিয়ে
নওশিন আক্তারের বয়স ১৫ বছর৷ বাবার বাড়ি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে৷ বিয়ের দিনও সে ছুটে বেড়াচ্ছিল পড়শিদের বাড়ি বাড়ি৷ সেখান থেকেই ধরে এনে বিয়ের পিড়িতে বসানো হয় তাকে৷ তার বিয়ের, আইনি দৃষ্টিতে যা অবৈধ, কিছু ছবি থাকলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিয়ে বাড়িতে উৎসব
আগস্টের ২০ তারিখে বিয়ে হয় নওশিনের৷ নিজে বিয়ের অর্থ সে তেমন না বুঝলেও, পাড়াপড়শির এই বিয়ে নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না৷ বিয়ের দিন উৎসবের এই ছবি জানান দিচ্ছে একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরের বয়স নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নওশিনের গোসল
বিয়ের দিন প্রকাশ্যেই গোসল করানো হয় নওশিন আক্তারকে৷ বাল্যবিবাহের জন্য তাকে প্রস্তুত করার অংশ এই গোসল৷ অনেকের সঙ্গে এএফপি-র আলোকচিত্রিও দেখেছেন সেই আচার৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
বিউটি পার্লারে নওশিন
বিয়ের জন্য সাজাতে নওশিনকে নেয়া হয়েছে বিউটি পার্লারে৷ বাংলাদেশের আনাচেকানাচে এ রকম পার্লারের সংখ্যা অনেক৷ ছবিতে কাপড় পরার সময় অপর এক নারীকে দেখছে নওশিন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
কনের মেকআপ
বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে নওশিনকে৷ বাংলাদেশে কনেকে বেশ রংচংয়ে মেকআপে সাজানো হয়৷ অনেক সময় চেহারার রং ফর্সা করার চেষ্টা করা হয় জোর করে, যা অনেকসময় দেখতে কিছুটা দৃষ্টিকটু হলেও ঐতিহাসিকভাবে চলে আসছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
গহনা ছাড়া কি বিয়ে হয়?
কনে নওশিনকে গহনা পড়িয়ে দিচ্ছেন তার আত্মীয়রা৷ বাংলাদেশে বিয়েতে সোনার গহনা এক অপরিহার্য উপাদান৷ কনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, সোনাদানা ছাড়া বিয়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে একরকম ভাবাই যায় না৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
জোর করে বিছানায় নেয়া হচ্ছে নওশিনকে
নওশিনকে তার এক আত্মীয় জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন একটি বিছানায়, যেখানে তার ছবি তোলা হবে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে ২৯ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের বয়স ১৫ পার হওয়ার আগে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ভিডিও-র জন্য ‘পোজ’
ভিডিও-র জন্য পোজ দিচ্ছে নওশিন আক্তার৷ তার বিয়ের মুহূর্তগুলো এভাবেই ক্যামেরাবন্দি করেছেন ভাড়া করা আলোকচিত্রিরা৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
৩২ বছর বয়সি বর
নওশিনের বরের নাম মোহাম্মদ হাসামুর রহমান, বয়স ৩২ বছর৷ বিয়ের সন্ধ্যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক কনের সঙ্গে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন রহমান৷ এএফপি-র একজন বিদেশি আলোকচিত্রি সেই বিয়েতে উপস্থিত হতে পারলেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারেনি গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করতে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে নওশিন
বিয়ে শেষে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ১৫ বছর বয়সি নওশিন৷ পরিবারের সদস্যরা তাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের এ সব ছবি গোটা বিশ্বের আলোড়ন তুলেছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
10 ছবি1 | 10
নেদারল্যান্ডস এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে নিজের দেশ থেকে কোনো ছেলে বা মেয়ে বিয়ে করে এলে বয়স খুব কম হলেও সেই বিয়ে মেনে নেয়া হয়৷ সে কারণে সিরিয়ার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বিদেশ থেকে কেউ ১৮ বছরের আগে বিয়ে করে এলে সেই বিয়েকে স্বীকৃতি না দেয়ার আইন প্রণয়নের কথা ভাবা হচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডসের অভিবাসন মন্ত্রী ক্লাউস ডিওকফ জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরেই এ আইন কার্যকর হতে পারে৷
কেন এত কম বয়সে বিয়ে করছে সিরীয় মেয়ে শিশুরা? মানবাধিকার সংস্থা ‘টেরে ডেস ফেমেস'-এর ক্রিস্টা স্টোলে তুরস্কে গিয়েও বিষয়টা বুঝতে চেয়েছেন৷ সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, অনেক মেয়ে শিশুরই সেখানে বিয়ে হচ্ছে৷ শৈশবে সন্তানের জননীও হচ্ছে তারা৷ স্টোলে দেখেছেন, ধর্ষণ, নিপীড়ন থেকে সন্তানদের বাঁচাতেই বাবা-মা তাদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন৷ বিয়ের জন্য বিদেশি, বিশেষ করে ইউরোপের পাত্রকেই বেশি পছন্দ করেন বাবা-মা, কেননা ইউরোপের কাউকে বিয়ে করলে যুদ্ধ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়৷
জার্মানিতেও এমন বালিকা বধূ খুব শিগগিরই বেশি হারে দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে৷