জনপ্রিয় কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সাইট সামহয়্যার ইন ব্লগে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে৷ শিরোনাম, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরী’র জন্য কিছু একটা করুন৷’’ নিবন্ধটি লিখেছেন রেজা ঘটক৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে চলতি সপ্তাহে মূল আলোচনার বিষয় মুক্তিযুদ্ধ৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে দু'জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে ঢাকার ট্রাইব্যুনাল৷ এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে বাংলা ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারে৷ এই আলোচনায় নতুন রসদ জুগিয়েছেন ছোট গল্প লেখক রেজা ঘটক৷
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
সামহয়্যার ইন ব্লগে রেজা লিখেছেন বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে নিয়ে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘চট্টগ্রাম শহরের রাস্তায় রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে নিজের লেখা বই ফেরি করেন রমা চৌধুরী৷ কে এই রমা চৌধুরী? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীরাঙ্গনা৷ সারা দিনের আহার সংগ্রহের জন্য নিজের লেখা বই বিক্রি করতে পারলে তবেই আহার জোটে রমা চৌধুরীর৷''
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হন রমা চৌধুরী৷ বিস্তারিত নিবন্ধে সে সময়ের কথাও লিখেছেন রেজা ঘটক৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘নিজের মা, পাঁচ বছর ৯ মাস বয়সি ছেলে সাগর ও তিন বছর বয়সি ছেলে টগরের সামনেই তাকে ধর্ষণ করে এক পাকিস্তানি খানসেনা৷ পাকসেনারা রমা চৌধুরীকে শুধু ধর্ষণেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের বাড়িও পুড়িয়ে দেয় তখন৷''
একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রমা চৌধুরীর জীবনের ভোগান্তি শেষ হয়নি৷ একের পর এক প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে৷ সম্পদ হারিয়েছেন, সন্তান হারিয়েছেন, হারিয়েছেন স্বামীকেও৷ মোটের উপর সমাজে তিনি পরিচিত ধর্ষিতা নারী হিসেবে৷ রেজা লিখেছেন, ‘‘জীবনের সব হারিয়ে রমা চৌধুরী এখন বইয়ের ফেরিওয়ালা৷ নিজের লেখা বই ফেরি করে বিক্রি করেন৷...যেদিন বই বিক্রি হয় সেদিন তিনি দুমুঠো খান৷''
সামহয়্যার ইন ব্লগে এই নিবন্ধ প্রকাশের পর রমার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অনেকে৷ রেজা ঘটক সেই বিষয়ে আপডেটও দিয়েছেন৷ তবে তিনি চান স্থায়ী সমাধান৷ রেজা ঘটক লিখেছেন, ‘‘ প্রিয় ব্লগারদের উৎসাহ এবং আগ্রহকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না৷ আমরা রমা চৌধুরী'র জন্য স্থায়ী একটি সমাধান বের করতে সক্ষম হলেই আমাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগটি যথাযথ আলোর মুখ দেখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি৷''