সোমবার ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে৷ নবম ও শেষ দফায় ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর প্রদেশের ৪১টি আসনে৷ তবে সকলের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত ছিল উত্তর প্রদেশের বারাণসী আসনের দিকে৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বুথ ফেরত সমীক্ষায় নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷
সংসদের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে সোমবার শেষ দফায় ভোট হয় পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি, বিহারের ৬টি এবং উত্তর প্রদেশের ১৮টি আসনে৷ এবারের নির্বাচনে ভোটের আনুপাতিক হার ৬৬ শতাংশের বেশি, যেটাকে গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় সর্বাধিক বলা যায়৷
ভোটপর্ব শেষ হবার পর বুথ ফেরত সমীক্ষায় এখন পর্যন্ত ফলাফলের যে আভাস পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি ভাল ফল করেছে আসাম, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং সীমান্ধ্রে৷ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারেনি৷ তৃণমূলের আসন বেড়ে হয়েছে ২০৷ তবে বেশি বেড়েছে বামফ্রন্টের৷ বামদল ১৫টি৷ ভরাডুবি হয়েছে ওড়িষাতে৷ সিংহভাগ গেছে শাসক দল বিজু জনতা দলের দখলে৷ তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার পর্যন্ত৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
সোমবারের ভোটে যেসব হেভিওয়েট প্রার্থীর রাজনৈতিক ভাগ্য ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বন্দি হয়, তাঁদের মধ্যে আছেন আজমগড় আসনে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রীমো মুলায়েম সিং, বারাণসী আসনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দোপাধ্যায় (উত্তর কোলকাতা), দীনেশ ত্রিবেদি (ব্যারাকপুর), সৌগত রায় (দমদম), কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরি (বহরমপুর), সিপিআই-এমের প্রাক্তন বামফ্রন্ট অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত (দমদম), সুভাষিনী আলি (ব্যারাকপুর) এবং বিজেপির তপন শিকদার প্রমুখ৷
তবে গোটা দেশের নজর কেন্দ্রীভূত বারাণসী আসনের ফলাফলের দিকে৷ যেটা মোদীর কাছে এক মর্যাদার প্রশ্ন৷ দিল্লির সিংহাসনে বসার পথ মসৃণ করতে বিজেপিকে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে পেতে হবে কমপক্ষে ৪০টি আসন৷ সেই লক্ষ্য নিয়েই মোদী চেয়েছেন মোদী ঢেউ-এ বারাণসীকে প্লাবিত করতে৷ ভোট প্রচারে তিনি একাই চষে বেড়িয়েছেন দেশ জুড়ে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার৷ তারমধ্যে উত্তর প্রদেশেই প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার৷ জনসভা করেছেন ৪৪০টি৷ মোদী এখন হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির প্রতীক, অর্থাৎ মোদীই বিজেপি বা বিজেপিই মোদী৷ তবু বারাণসী কেন্দ্রে কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আম আদমি পার্টির প্রধান দিল্লির ৪৯ দিনের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয় রক্তাক্ত আবহে৷ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয় শাসকদল ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে৷ আহত হন ২২ জনের বেশি৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মারপিট, ভাঙচুর, হুমকি দেয়া, ভয় দেখানো এইসব কিছুই করেছে তৃণমূল সমর্থকেরা৷ নাগরিক সমাজ মনে করছে ভোটের সময় সাবেক বামফ্রন্টের কৌশল নিয়েছে এবার তৃণমূল৷ বিজেপি এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারে প্রার্থী দিয়েছে অনেক বেশি৷ বিজেপিকে আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী কোনো কিছু করতে বাকি রাখেননি, এমন কী ব্যক্তিগত স্তরে গালাগালির পর্যায়ে নেমে আসতেও দ্বিধা করেননি৷